হেমন্ত রায়
ইদানীং মাঝে মাঝেই শিরোনামে উঠে আসছেন আব্বাস সিদ্দিকি। ফুরফুরা শরিফের এই পীরজাদাকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই নানা পোর্টালে নানা খবর ঘোরাফেরা করছে। কখনও তিনি হুঙ্কার ছাড়ছেন, তিনি মুসলিমদের স্বার্থরক্ষায় লড়াই করবেন। নতুন দল তৈরি করবেন। কখনও শোনা যাচ্ছে, তিনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট করবেন।
এই পীরজাদা সাহেবকে যেন একটু বেশিই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শুধু ভাঙড় এলাকায় নয়, বিভিন্ন জেলায় নাকি তিনি প্রার্থী দেবেন। সত্যিই কি তাঁর সংগঠনের পায়ের তলায় সেই মাটি আছে! তবে কীসের ভরসায় হুঙ্কার ছাড়ছেন আব্বাস।
প্রথমত, তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তিনি সব দরজাই খোলা রাখছেন। মাঝে মাঝে তৃণমূলের সমালোচনা করে হাওয়া গরম করছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি আন্তরিকভাবে কতটা তৃণমূল বিরোধী, তা নিয়েও সংশয় আছে। এটা চাপ তৈরির কৌশলও হতে পারে। তৃণমূলের সমালোচনা করো। তাদের চাপে রাখো। মুসলিম ভোট হাতছাড়া হচ্ছে জানলে তৃণমূল যেভাবেই হোক, রফায় আসতে চাইবে। তিরিশটা আসন চেয়ে বসলে আট—দশটা আসনের ভাগ জুটতেও পারে। ক্ষমতায় এলে ক্যাবিনেটে একটা দপ্তর জুটে যেতে পারে। তাছাড়া, ভবিষ্যতেও রাজনৈতির পুনর্বাসনের স্পষ্ট আশ্বাস থাকতে পারে। হয়ত অঙ্ক কষে সেই পথেই এগোচ্ছেন।
তিনি যে কোনও পরিস্থিতিতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করবেন না, এমনটা তো বলছেন না। সহজ কথা, তৃণমূলের সঙ্গে রফার দরজা খোলাই আছে। যদি একান্তই রফা না হয়, সেক্ষেত্রে অন্য শিবির তো আছেই। তিনি যদি বিভিন্ন এলাকায় চার, পাঁচ পার্সেন্ট মুসলিম ভোট টেনে নেন, তাহলে লাভটা কার ? বোঝার জন্য বিরাট কোনও রাজনৈতিক বুদ্ধি লাগে না। আশাদুদ্দিন ওয়াইসিদের যে কারণে প্রাসঙ্গিক রাখতে হয়, ঠিক সেই কারণেই আব্বাস সিদ্দিকিদেরও তোল্লাই দেওয়া হবে।
মাঝে শোনা যাচ্ছিল, বাম—কং জোটের সঙ্গেও নাকি কথা চলছে। আব্বাস নাকি চল্লিশটি আসন চেয়ে বসেছেন। যদি বাম নেতৃত্ব এই ফাঁদে পা দিয়ে বসেন, আরও একটি মারাত্মক ভুল করে বসবেন। ত্বহা সিদ্দিকি বা আব্বাস সিদ্দিকিরা যে কখনই গ্রাম বাংলার সাধারণ মুসলিমদের প্রতিনিধি নন, এই সহজ সত্যিটা বাম নেতৃত্ব কবে বুঝবেন!
আব্বাসরা নতুন দল গড়তেই পারেন। কারও সঙ্গে জোটও করতে পারেন। কিন্তু একটা রাজনৈতিক অবস্থান তো থাকবে। সব দরজা খুলে রেখে যাঁরা রাজনৈতিক দাবি জানান, তাঁরা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।