উত্তম জানা
নবান্ন অভিযানের রং নিয়ে নানা জলঘোলা। সত্যিই কি জলে রাসায়নিক মেশানো ছিল? তাত বিষাক্ত কিছু ছিল? নাকি নিছকি নীল বা বেগুনী রং। যেহেতু জলের কোনও নমুনা কোথাও সংরক্ষিত নেই, তাই সরকারি বয়ানকে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায়ও নেই। কেন সরকার এমন পদক্ষেপ নিল? এটা একেবারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। কয়েকজন আমলা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাও নয়। এতবড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার কোনও আমলার আছে বলে মনেও হয় না। মোদ্দা কথা, এটা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ ছাড়া সম্ভব নয়।
নির্দেশটা তাঁর কাছ থেকেই এসেছে, এমনটা নাও হতে পারে। হয়ত কোনও আমলা হালকা করে প্রস্তাবটা ভাসিয়ে দিয়েছেন। তিনি লুফে নিয়েছেন। কেন এই রঙিন জলের ব্যবস্থা ? সত্যিই কি মুখ্যমন্ত্রী কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন ? এমনটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। হতে পারে, কারা এলেন তাঁদের চিহ্নিত করার জন্য এই ব্যবস্থা। এলাকার নেতৃত্ব বা স্থানীয় পুলিশ চাইলেই জানতে পারবে কারা নবান্ন অভিযানে এসেছিলেন। কোনও নাশকতামূলক কাজ হলে সহজে তাদের চিহ্নিত করা যাবে।
প্রাথমিকভাবে হয়ত এই ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত। ধরা যাক, মেদিনীপুরের পল্টু এলাকায় তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেন। কিন্তু নানা কারণে তৃণমূলের ওপর ক্ষুব্ধ। এমন অনেকেই আছেন এলাকায় তৃণমূল, কিন্তু এলাকার বাইরে অন্য কিছু। আবার উল্টোটাও আছে। চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে শাসকদলের ইউনিয়নে নাম লেখাতে হয়েছে। কলকাতায় বা জেলা সদরে মিছিলে, মিটিংয়ে যেতেও হয়। কিন্তু এলাকায় তৃণমূলের মিছিল বা কর্মসূচি থেকে দূরে দূরেই থাকেন। কিন্তু এবার কারা নবান্ন অভিযানে এলেন, এলাকায় গেলেই তাঁরা চিহ্নিত হয়ে যাবেন। রঙের এই প্রথা শুরু হল ঠিকই, কিন্তু এখানেই থেমে থাকবে না। আগামীদিনে জেলায় জেলায় এই সিস্টেম চলবে।
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব একের পর এক আজগুবি দাবি করে চলেছেন। কেউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন, ওতে নাকি রাসায়নিক মেশানো আছে। কেউ বলছেন, ওতে করোনার জীবণু আছে। এভাবে যে তরলের সঙ্গে করোনার জীবাণু মেশানো যায় না, এই বোধটুকুও নেই! তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী বা মুখ্যসচিব কখনও এমন নির্দেশ দিতে পারেন! এটা বিশ্বাসযোগ্য! কেউ কেউ নাকি এই ভুলভাল দাবি নিয়ে আদালতেরও শরণাপন্ন হয়েছেন। প্রথমত, সেই জলের নমুনা নেই। আদালত বড়জোর রাজ্যের হলফনামা চাইতে পারে। রাজ্য কি বলবে, ওতে করোনার জীবাণু ছিল? বরং, যে বিষয়টায় আলো ফেলা যেত, সেই বিষয়েই তেমন উচ্চবাচ্য নেই। বলা যেতেই পারত, তৃণমূলের নিজেদের লোকের উপর বিশ্বাস নেই। তাঁদের দলের লোক আমাদের মিছিলে আসছেন কিনা, সেটা দেখতে রঙ ছড়ানো হচ্ছে। এটা বললে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিপূর্ণ হত। কিন্তু তা না করে তাঁরা করোনা জীবাণুর তত্ত্ব ছড়াচ্ছেন।এতে নিজেদের হাস্যকর করে তোলা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয় না। আসল প্রশ্ন সেই আড়ালেই থেকে যায়।