‌কেউ কেউ অনীক, সকলেই নন

রক্তিম মিত্র

 

anik duttaঅনীক দত্ত কে?‌ অনেকেই হয়ত চিনতেন না। বা চিনলেও অনেকে হয়ত তাঁর ছবি দেখেননি। এবার অনেকেই চিনলেন, অন্য পরিচয়ে।

অনীক দত্ত কি দারুণ কোনও বিপ্লব করে দিয়েছেন?‌ তিনি কি এমন কথা বলেছেন, যেটা আমরা কেউ কখনও ভাবিনি। না, তেমন কোনও উদ্দেশ্যই তাঁর ছিল না। সস্তায় নাম কেনার জন্য বা প্রচারের সার্চলাইটে আসার জন্যও তিনি এমনটা বলেছেন বলে মনে হয় না। খুব যে ভেবেচিন্তে এসেছিলেন, এমনও নয়। নিছক সাধারণ কতগুলো কথা, যা আমরাও মনে মনে বা আড্ডায় বলে থাকি। এমনকী যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত, তাঁরাও ঘরোয়া আড্ডায় এমনটাই বলে থাকেন। সাধারণ কয়েকটা কথাই বলেছেন এই পরিচালক। তাও এত হইচই হচ্ছে কেন?‌ হচ্ছে, কারণ এই সাধারণ কথাগুলোই এখন বলা মুশকিল।

যাঁরা বিরোধী রাজনীতি করেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বা সরকারের নানা সমালোচনা করেন। কিন্তু সংস্কৃতি জগতে এক অদ্ভুত প্রশ্নহীন আনুগত্যের আবহ। এখানে স্পিকটি নট। এখানে ‘‌তালে তাল দিয়ে যায় ‌হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সঙ।’‌ তিনি পথে নামতে বললেই সবাই পথে নেমে পড়েন। তাঁর যেটা সুর, সেটাই বুদ্ধিজীবীদের সুর। সবাই যেন ‘‌অনু্প্রেরণা’‌র স্রোতে ভেসে চলেছেন। এই আবহে সামান্য সাধারণ একটা কথাকেই কত ‘‌বিদ্রোহী’‌ মনে হচ্ছে। নন্দন চত্বরে যাঁরা ওই দৃষ্টিকটূ ছবিগুলো দেখেছেন, সবার মনেই এই প্রশ্নটা আসার কথা, যেটা অনীকের মনে এসেছে। সত্যিই তো, এত সরকারি হোর্ডিং কেন?‌ বিশ্বকাপ থেকে ফিল্ম ফেস্টিভাল— একজনের এত হাজার হাজার মুখ কেন?‌

nandan2

অনেকের মধ্যে একটা ধারণা আছে, তিনি হয়ত এমনটা চান না। তিনি এসব নিয়ে ভাবেনও না। অফিসাররা বা দলের নেতারা তাঁর ছবি টাঙিয়ে দেন। একেবারেই ভুল ধারনা। তিনি চান, তাই এত ছবির ছয়লাপ। কই, জ্যোতিবাবু বা বুদ্ধবাবুর এত ছবি দেখা যেত?‌ যেত না, কারণ, তাঁরা নিজেদের এভাবে জাহির করেননি। সরকারি টাকায় এভাবে ছবি ছাপানোটা তাঁদের রুচি বিরুদ্ধ ছিল। এখন নির্লজ্জের মতো ছবি ছাপা হয়। কারণ, প্রশাসনের সর্বময়ী কর্ত্রী সেটাই চান। তিনি না চাইলে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, এত লক্ষ লক্ষ ছবি ছাপা হত না। কোন ছবিটা কোন বিজ্ঞাপনে যাবে, সেটা কে বাছেন, একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে।

যাক, সে অন্য কথা। এই লেখার বিষয় একান্তই অনীক দত্ত। কেউ কেউ তাঁর গায়ে বামপন্থী ‘‌ট্যাগলাইন’‌ দিয়ে দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, তিনি হয়ত বিজেপি–‌র লোক। কিন্তু বাম বা বিজেপির কোনও অনুষ্ঠানে বা প্রচারে তাঁকে কেউ কখনও দেখেছেন?‌ তিনি যেটা বলেছেন, এর রাজনৈতিক রঙ না খোঁজাই ভাল। একেবারে সাধারণ একটা উপলব্ধি মেলে ধরেছেন। এবং এই সাধারণ কথাগুলো বলার জন্য কোনও রাজনৈতিক পরিচয়ের দরকারও হয় না।

তিনি যেটা বলেছেন, সেটা অনেকেরই মনের কথা। তিনি বলতে পেরেছেন, বাকিরা পারেননি, তফাত শুধু এইটুকুই। এত এত কবি, লেখক, গায়ক, নায়ক, পরিচালক, চিত্রশিল্পী রয়েছেন। তাঁরা বরং ভাবুন, সে সহজ কথাটা সহজভাবে অনীক দত্ত বলতে পারলেন, বাকিরা কেন সেটা পারলেন না।

‘‌অনু্প্রেরণা’‌ সত্যিই বড় ভয়ঙ্কর জিনিস।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.