আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সুপ্রিম কোর্টকেই নিতে হবে

জ্যোতির্ময় মুখার্জি

প্রণব মুখার্জির মৃত্যুর খবরের আড়ালে প্রশান্ত ভূষণের বিষয়টা কিছুটা হলেও চাপা পড়ে গেল। নইলে, এটা নিয়ে আরও শোরগোল হত।

একজন আইনের ছাত্র হিসেবে মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলা ভাল, নিজেদের লজ্জিত হওয়ার হাত থেকে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা করেছে। যদি প্রশান্ত ভূষণকে কড়া কোনও শাস্তি দেওয়া হত, সেটা হত আরও হঠকারী। এবং তাতে সর্বোচ্চ আদালতেরই মুখ পুড়ত।

supreme court5

দেশে রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা যায়। কোর্টের রায়ের সমালোচনা হবে না!‌ সেই সমালোচনায় যুক্তি আছে কিনা, তা সাধারণ মানুষ বিচার করবেন। সহনশীলতা যদি সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তাহলে সেটা কোর্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনও বিচারপতির চরিত্রহনন করা হয়, সেটা নিশ্চয় সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু কোনও রায়ের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণের অধিকার সবসময়ই আছে।

তাছাড়া, কোর্টের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে তো সমালোচনা হতেই পারে। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এতখানি বিলম্বত হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর এই বিলম্বই যে মানুষের আস্থা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোথাও অতি সক্রিয়। আবার কোথাও চূড়ান্ত নিষ্ক্রিয়। তাছাড়া, বেশ কিছু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা একেবারেই একপেশে ও সরকার নিয়ন্ত্রিত বলেই মনে হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি যদি অবসর নেওয়া একমাসের মধ্যেই রাজ্যসভায় মনোনীত হন, তাহলে এই প্রশ্ন তো উঠবেই। অবসর নেওয়ার একমাস যেতে না যেতেই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাতে হল!‌ কীসের পুরস্কার?‌ কীসের প্রতিদান?‌ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পারলেন না এই সামান্য প্রলোভনটুকু জয় করতে?‌ এই বিষয়গুলোই অনাস্থা তৈরি করে। এই অনাস্থাকে কাটানোর দায়িত্ব বিচারপতিদেরই নিতে হবে।

আমার মনে হয, বিচার বিভাগে কতগুলো সংস্কার আনা খুব জরুরি।
১)‌ অবসর নেওয়ার পর কোনও বিচারপতি রাজনীতিতে আসতে পারবেন না। বিধায়ক বা সাংসদ হতে পারবেন না।
২)‌ প্রমোশনাল পোস্টিং নিতে পারবেন না। অমুক কমিটির চেয়ারম্যান, অমুক পর্যদের উপদেষ্টা— এইসব প্রলুব্ধ করা পদ গ্রহণ করা চলবে না।

চাইলে আরও এমন শর্ত দেওয়া যায়। কিন্তু সব একসঙ্গে কার্যকর করা সম্ভব নয়। আপাতত এই দুটো নিয়ম চালু করা হোক। বিচারপতিরা নিজেরাই এমন আইন আনার দাবি জানান। নইলে, আপনাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.