এমন প্রশ্রয় পেলে দুর্বৃত্তরা তো বিশ্বভারতী ভাঙবেই

রক্তিম মিত্র

দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে বিশ্বভারতীরও রেহাই নেই। নিছক বিক্ষোভ বা স্লোগান নয়। একেবারে পে লোডার দিয়ে ভেঙে ফেলা হল ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতীর গেট। ভেঙে ফেলা হল পাঁচিল।

যাঁরা ভাঙচুর করলেন, তাঁদের মুখে শোনা গেল রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যের কথা। রবি ঠাকুর বিশ্বভারতীকে কেমন দেখতে চেয়েছিলেন, সে সম্পর্কে এই দুর্বৃত্তরা কিনা ভাষণ দিলেন। তাঁরা নাকি রবীন্দ্র অবমাননা দেখতে পারছিলেন না। তাই গেট ভেঙে দিলেন। আহা রে, এমন রবীন্দ্র অনুরাগীদের রবি ঠাকুর দেখে যেতে পারলেন না!‌

বলা হচ্ছে, স্থানীয় ভাবাবেগ। কেউ বলছেন, জনরোষ। কোনওটাই নয়। স্রেফ গুন্ডামি। মেলার মাঠ ঘেরা হবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতিবাদে যাঁরা গেট ভাঙলেন, তাঁরা প্রতিবাদীও নন, আন্দোলনকারীও নন, রবীন্দ্র অনুরাগীও নন। তাঁদের দুর্বৃত্তই বলা যায়।

biswa bharati

দু তিন ঘণ্টা ধরে এই সব কর্মকাণ্ড চলল। টিভিতে লাইভ দেখানো হল। অথচ, প্রশাসনের কোনও ভূমিকাই নেই। হ্যাঁ, ভূমিকা ছিল। নিষ্ক্রিয় থাকার। আরও ভাল করে বললে, ওই দুর্বৃত্তরা যেন ঠিকঠাক ভাঙতে পারে, কোনও বাধাবিঘ্ন যেন না আসে, সেটা নিশ্চিত করা।

এতক্ষণ ধরে এমন একটা কাণ্ড ঘটতে লাগল। তৃণমূল বিধায়ক মিছিলে হাঁটলেন। প্ররোচনা দিলেন। ভিসির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেন। দলের অনুমোদন ছাড়া এটা সম্ভব ছিল?‌ জেলা সভাপতির সায় ছাড়া তাঁর সাহস ছিল মিছিল করার!‌

এই পর্যন্ত তবু না হয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালানো যায়। কিন্তু বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের পর অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল। বিশ্বভারতীর গেট পে লোডার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। এরপরেও তিনি কিনা সেই দুর্বৃত্তদেরই পক্ষ নিলেন!‌ হায়!‌ তিনিও রবীন্দ্র ভাবনার কথা তুলে ধরলেন। তিনিও বলতে লাগলেন, রবীন্দ্রনাথ খোলামেলা জায়গা পছন্দ করতেন। দুর্বৃত্তদের যুক্তি কিনা উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে।

তিনিও স্থানীয় ভাবাবেগ, জনরোষ এসব তত্ত্ব আওড়ালেন। একবারও বলতে পারলেন না, যারা গেট ভেঙেছে, তারা খুব অন্যায় করেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তার বদলে তিনি কিনা বিশ্বভারতীকেই দোষারোপ করে গেলেন। রাখঢাক না রেখেই বলে দিলেন, আমি চাই, ওখানে খোলামেলা থাকুক। প্রথমত, বিশ্বভারতী নিজে থেকে পাঁচিল তোলেনি। গ্রিন বেঞ্চের রায় ছিল, পাঁচিল তুলতে হবে। তাঁরা আদালতের নির্দেশ কার্যকর করছিলেন। তাঁদের পাশে প্রশাসন দাঁড়াল না। যারা ভাঙল, তাদের পাশে প্রশাসন।

এমন ন্যক্কারজনক কাণ্ডের পরও প্রশাসন ওই দুর্বৃত্তদের পাশে দাঁড়াতে পারে!‌ বোঝাই যাচ্ছে, এত সাহস তারা পায় কোথা থেকে।

সত্যিই, অনুপ্রেরণা বড় ভয়ঙ্কর জিনিস।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.