ফিরে দেখা সুশান্ত। পার্ট ৭

দেখতে দেখতে দু মাস পেরিয়ে গেল। সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে বিতর্ক এখনও চলছেই। সেই আবহে দু মাস আগের মুহূর্তকে ফিরে দেখা। সাত নম্বর কিস্তি। লিখেছেন ইন্দ্রাণী রাহা।

 

চারপাশে অদ্ভুত এক স্তব্ধতা, সমস্ত কিছুই থমকে গেছে। এখুনি সন্ধ্যে নামবে। এই সময় সূর্যের শেষ আলোর রং হয় লাল। যেন কোনও অশনি সংকেত।

আমি চাই গতি, স্পি, কিন্তু এই থমকে যাওয়াটা যেন আমায় পেয়ে বসেছে। রাতে পার্টির অ্যরেঞ্জমেন্ট টা করতেই হল, সবাই এতো প্রেসার দিল, তো অ্যাকসেপ্ট করতেই হল। কিন্তু এই থেমে যাওয়াটাই যেন অনেক দিন থেকে চাইছিলাম।

যা অর্ডার করেছি তাতে মনে হয় সামলে যাবে। এবার একটা লং শাওয়ার নিয়ে, নিজের রেডি হওয়া। টেলিস্কোপটা সরিয়ে এনে ঢাকা দিয়ে দি, আজ আর ওটা নিয়ে বসা হবে না‌। নাহ্ যাই ছ’টা বাজতে চললো, সবাই এসে পড়বে।

একি…!! “লউন্ড্রি ব্যাগ টোটাল ফুল….”
কাজের লোক দুটো যে কী করে, এতো জামা-কাপড় পড়ে আছে। না ব্যবস্থা করে ফেলে রেখেছে ?
আপাতত গায়ের গুলো ওয়াসিং মেশিনটায় ভরে রাখি।
অল্প অল্প জলতেষ্টা পাচ্ছে। রুমে তো কোনও বোতল নেই, আবার নীচে যেতে হবে! থাক আর দরকার নেই।

বাঁহাত দিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে ই ডান হাত দিয়ে টাওয়ালটা খুলে রাখা, একই সাথে বাঁহাতে শাওয়ারের নব্ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে দাঁড়ানো। এই মুভমেন্টটা একটা অভ্যেস হয়ে গেছে। কিছুটা ব্যালে নাচের ছন্দের মতো।

susant3

কিন্তু আজ শরীরটা বড্ডো ভারী লাগছে। শাওয়ার এর জলটাও যেন অন্য রকম, যত গায়ে পড়ছে তত যেন শীত করছে। এমনিতেই শাওয়ারটা প্রায় মাথায় মাথায়, তাই সামনে থেকে জল গায়ে নিলে সোজাসুজি মুখে এসে পড়ে। সারা মুখে কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে জলের ফোঁটা। শাওয়ার টা লাগিয়েছে….ছ’ফুট এর থেকে সামান্য একটু বেশি। যেন সব মানুষকেই ছ’ফুটের কম হতেই হবে। আরে আমিই তো ছ’ফুট ১ ইঞ্চ।

একটা হাতের ছাপ, আমারই ওটা। বাথরুমের কাঁচের দরজা টেনে বাইরে বেরোতেই বাইরেটা একটু গরম, সাইডের খোলা ব্যালকনি থেকে অল্প গরম হাওয়া আসছে, বেশ ভাল লাগছে। এতক্ষণ যেন দমবন্ধ ছিল, নিজেই বুঝতে পারিনি! দেখি ওয়ার্ডোব এ কী আছে।

নাহ্, মনটা কিছুতেই চাইছে না কিন্তু পার্টটা করতেই হবে। সাড়ে সাতটা বাজে, আটটা নাগাদ নীচে নামব। ও হ্যাঁ, গীটারটা নিয়ে যাই। কোথায় যেন?
সোফার পিছনের দেওয়ালে..
ব্যালকনিতে টেলিস্কোপটা সাদা কাপড়ে ঢাকা, একটু ছুঁয়ে আসি, ওটাকে কেমন যেন একা একা মনে হচ্ছে। ওটাকে একটু নেড়েচেড়ে আসি, এই লকডাউনে ওটাই তো সঙ্গ দিয়েছে, আজ বুঝলাম ওটা অভ্যেস হয়ে গেছে।
নাহ্ এটাকে সেট করে বসার সময় আর নেই। আজ আর আকাশ দেখা হবে না, জমিটাও না। তবে কে নেবে আমার জমি..? চাঁদে আমার জমি…. ব্যালকনির গ্লাস-ওয়ালে তাকিয়ে দেখলাম দু’ঠোঁটের ফাঁকে ঝিলিক দিচ্ছে আমার অহংকার…. আহ্; এক টুকরো চাঁদ আমি কিনেছি….
নাহ্ রে গুড্ডু “কন্ট্রোল, কন্ট্রোল ইয়োরসেল্ফ, “স্স্স্স্স্ স্পিকটি নট অ্যবাউট দিস্ ”

গীটারটা…ওহ সোফাতে। আয়নায় আর একবার দেখে’নি, ও একটু পারফিউমটা, দু কানের পিছনে, আজ কে জোটে দেখি…
আচ্ছা একটা রুমাল থাক পকেটে।
‌কিন্তু মাস্ক পরতে হবে তো !
“নো কিসিং… ওহ্ফ্ নোওওওও”
মাউথফ্রেসনার …. কেউ ডাকছে ….? কি, সবাই আসতে শুরু করেছে বোধহয়।
মাস্ক পরার আগে মাউথফ্রেসনারটা নিয়েইনি….
“ওকে, নাও রেডি” ; আহ্ গীটারটা ভুললাম…
কোথায় যেন.. বেড এর উপর তো রাখিনি?
উহ্ কোথায় ওটা…. ব্যালকনির কাছের সোফার উপর।
আবার কে যেন ডাকছে, মেয়েলি গলা… “বি ফাস্ট ম্যান” ব্যালকনির কাঁচের পাশ দিয়ে আসার সময় কেমন যেন শরীরটা কেঁপে উঠল, একটা দমকা ঠান্ডা হাওয়া, টেলিস্কোপটা পড়ে যাবে না তো..
নীচে অনেকগুলো গলার আওয়াজ, একসাথে… নাহ্ আর দেখার সময় নেই।
বিছানার উল্টোদিকের আয়নায় গীটার হাত নিজের লুক্টা দেখে…. চুলটা আরও একবার…. আবার সেই মেয়েলি আদুরে গলা, এবার একটু অন্যরকম একটু উষ্মা…. হাহাহাহা, রাগ হচ্ছে। সে মহিলা হয়ে সেজে গুজে চলে এল, আমি এখনও আটকে আছি। কিন্তু সিঁড়ি নামতে নামতে মনে পড়ল, একটা কাউকে বলে টেলিস্কোপটা রুমে ভেতরে আনাতে হবে, রাতে ঝড় উঠতে পারে হয়তো, তখন হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া উঠল…
নীচে টা পুরোটাই আলো-আঁধারি…… একটু লাইট টাইপ পার্টি এটা; ওনলি পর ফান্ , নো থিম …..আর এখন তো এমনিতেই মাস্ক পরতে হচ্ছে।
সবাই নাচছে, আমারই একটা গানে চলছে, এরা এই গানটাই পেল এখন…. হাহাহাহা ” হয়াই নট্; ইটস্ অলয়েজ রেলেভেন্ট ” , আর কি আমিও জুড়ে যাই….
” আরে রে রে…… পাগল ফিকর নট / চিন্তা করকে কেয়া করেগা……. মরনেসে পেহেলে মর জায়গা….
আরে রে রে….. পাগল ফিকর নট ”
এই টাই খালি বাজিয়ে যাচ্ছে!
ধুর আর না….
এরা কী সব ককটেল বানিয়েছে, গড্নোজ…!!

গীটারটা কোথায় রাখলাম। আহ্ মাথা কাজ করে না।
একটা ভ্রারবেশন….
ডান পকেটে….. ফোন টা বাজছে…. আননোওন নম্বর।
হঠাৎ করে ভেতরটা শুকিয়ে গেল…. ওখানে বুক সেলফ এর পাশটা একটু ফাঁকা…. ওখানে যাই….

একটা মুভিং চেয়ার আছে….. ঠেস দিয়ে বসার মতো কিছু পেলে ভাল হত… আবার সেই নম্বরটা..
“বহ্যুত উচ্ছাল রহা হ্যে তু, তুঝে ধাক্কা মারকে নিকলনা হ্যে…তোরেকো পাতাভিহি্ এ্ ….”
সেই একই হুমকি, কিন্তু অন্য গলা। কে ওটা
আমার কি সব গেছে…. আমার সব কথা এরা জানলো কী করে…. ওওওহ্ টেলিস্কোপটা…. ভেতরে রাখার কথা বলতে ভুলেই গেছি…. আশে-পাশে কেউ নেই ও… যায় কোথায় লোকগুলো সব….!! পরশু ই তো সবাইকে মাস মাইনেটা দিলাম। দুজন ছাড়া সবাই ছুটিতে ছিল…. তাওতো দিলাম। ওদেরই বা দোষ কোথায়, মাত্র দুজনকে দিয়ে সবকিছু চালাচ্ছি…. আহ্ এই লকডাউন, এই করোনা….

কিন্তু…. সামনের প্যাসেজটা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি বাইরেটা শান্ত। বেশ শান্ত, আকাশটাও ভাল ( টিং, টিং-টিং….. টিং,টিং) চাঁদ কে নিয়ে নতুন একটা ফ্লিম হবে…. “চান্দামামা দূর কে”…… ( ট্যাং….টিং টিং….) যদিও এই নামটা এখনও ফাইনালাইজড নয়….. তবে এবার একটা গান আসছে ….. গীটারের টিউনগুলো নিয়ে কখন থেকে নাড়ছি, বুঝতে পারিনি….. সামনের কোউচ্ টা থেকে কেউ একটা উঠে গেল….. ওখানে যাই…. আহঃ একটু এলিয়ে বসব….. পিছনে ফিরে যাই, খোলা প্যাসেজটা পুরোটা দেখতে পাচ্ছি……

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.