আজ না হোক কাল, মুকুলকে তৃণমূলে ফিরতেই হবে

সরল বিশ্বাস

কয়েকদিন ধরেই নাকি জোর জল্পনা, মুকুল রায় আবার তৃণমূলে ফিরতে পারেন। মুকুল রায় ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। জানিয়ে দিলেন, তিনি বিজেপিতেই থাকছেন। এখানে নাকি দারুণ সম্মান পাচ্ছেন।

অনেকে ভাবছেন, জল্পনা থেমে গেল। কিন্তু কেন জানি না, আমার মনে হচ্ছে, জল্পনা থামল না। থেকেই গেল। রাজনীতির গতিপ্রকৃতি যেটুকু বুঝি, আজ না হোক কাল, তাঁকে তৃণমূলে ফিরতেই হবে।

বিজেপিতে সত্যিই কি তিনি যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছেন?‌ লোকসভা নির্বাচনের সময় অবশ্যই গুরুত্ব পেয়েছিলেন। প্রার্থী তালিকার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তৃণমূল থেকে আসা অনেককেই প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ জিতেওছেন। অনেকে বলতে শুরু করলেন, মুকুল রায়ের জন্যি বিজেপির এই সাফল্য।

mukul roy3

কিন্তু গত একবছরে ছবিটা আস্তে আস্তে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। লোকসভা নির্বাচনে আঠারো খানা আসন পাওয়ার পরের কয়েকদিনের কথা ভাবুন। রোজ গুঞ্জন ছড়াচ্ছিল, আজ এতজন আসছেন। কাল এতজন আসছিলেন। শতাধিক বিধায়ক নাকি দল ছাড়ার জন্য তৈরি। প্রথম একমাসে অনেকেই শিবির বদল করলেন। তারপরই সব কেমন যেন থিথিয়ে গেল।

বিজেপির কেউ কেউ চাইছেন না, অন্য দল ভাঙিয়ে লোক আনা হোক। তাঁরা মনে করেন, বিজেপি নিদের জোরেই জিতে যাবে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসাটা যেন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। শোনা যায়, মুকুল রায় নাকি এবার দিল্লির মিটিংয়ে বলে এসেছেন, যতটা সহজ ভাবছেন, ব্যাপারটা মোটেই তত সহজ নয়। লোকসভা আর এই ভোটকে গুলিয়ে ফেলবেন না। এখন থেকে সচেতন না হলে বিপদ আছে।

কিন্তু তাঁর কথাকে বিশেষ পাত্তা দেওয়া হয়নি। বলা যায়, ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয়নি। এটা ঘটনা, মুকুল চাইলে তৃণমূল শিবিরে বড়সড় ভাঙন ধরাতেই পারতেন। কিন্তু তিনি নিজেও হয়ত নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন। বঙ্গীয় নেতাদের দৌড়টা কতদূর, বুঝে নিতে চাইছেন।

মুকুল রায়কে দলে নেওয়া হয়েছে কেন?‌ নিশ্চয় অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ বা বাজেট তৈরির জন্য নয়। নিশ্চয় কৃষি নীতি নিয়ে তাঁর ভাবনার রূপায়ণ ঘটানোর জন্য নয়। নিশ্চয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাঁর পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য নয়। মোদ্দা কথা, তৃণমূলকে ভাঙার জন্য। এই কাজটাই মুকুল রায় পারেন। অন্য অনেকের থেকে ভাল পারেন। কিন্তু সেই কাজে কি গত এক বছর তাঁকে ব্যবহার করা হয়েছে?‌

রাজ্য নেতৃত্ব যতই লম্ফঝম্প করুন। জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ একেবারেই অন্য। সেখানে মমতা ব্যানার্জি প্রাসঙ্গিক থাকলেই বিজেপির লাভ। মমতা না থাকলেই বিভিন্ন রাজ্যের ছোট ছোট দল কংগ্রেসের ছাতার তলায় চলে যাবে। মোদি নিশ্চয় এমনটা চাইবেন না। বরং, মমতা থাকলে বিরোধী জোটকে ঘেঁটে দিতে পারেন। চব্বিশে আবার ‘‌কেন্দ্রে আসছি’ বলে ঝাঁপাতে পারেন। তাহলেই বিরোধী জোট আবার ঘেঁটে যাবে। বিরোধী শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করার ব্যাপারে সত্যিই মমতার জুড়ি নেই। এই সহজ সত্যিটা দিলীপ ঘোষরা না বুঝলেও মোদি বোঝেন। তাই তিনি চলবেন তাঁর অঙ্কে। আর এই অঙ্কটা বিচক্ষণ মুকুলের বুঝতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাই বাংলার নেতাদের দেখানো হবে, দেখো আমরা বাংলা দখল করতে চাই। আসলে, তাঁরা জানেন, বাংলা দখলের থেকেও চব্বিশ সালে নিজেদের নিরাপদ রাখাটা বেশি জরুরি। তাই যে লোকটা তৃণমূলে ভাঙন ধরাতে পারতেন, তাঁকে আস্তে আস্তো কোণঠাসা করে দাও। হতাশ হয়ে সে বরং তৃণমূলেই ফিরে যাক।

তাই মুকুলের মোহভঙ্গ হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। যার বিরুদ্ধে লড়ছি, উপরতলার নেতারা তাঁকেই রাখতে চাইছেন। এই যখন পরিস্থিতি, ‌তখন তৃণমূলে না ফিরে যাবেন কোথায়!‌ তাই আজ না হোক কাল, মুকুলকে তৃণমূলে ফিরতেই হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.