পুলিশকে এই ভূমিকাতেই দেখতে চাই

প্রসূন মিত্র

যতদূর মনে পড়ছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে চলছে এই লকডাউন। শুরুর দিকে সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই যেন ছন্দপতন। আবার যেমন কে তেমন। মাছের বাজারে সেই চেনা ভিড়। চায়ের দোকানে চেনা আড্ডা, গুলতানি। আর শুরুতে মদের দোকানকে ঘিরে যা হল!‌ লাইন কোথাও কোথাও নাকি এক কিলোমিটার ছাপিয়ে গেল। সত্যি, বাঙালির কী নিষ্ঠা!‌

আস্তে আস্তে লকডাউন শব্দটাই যেন প্রহসন হয়ে উঠল। আবার সেটা ফিরে এল। বৃহস্পতিবার রাস্তাঘাটের যে চেহারা দেখা গেল, মনে হল, হ্যাঁ, লকডাউন হলে এরকমই হওয়া উচিত। পুলিশ চাইলে কী না পারে!‌ প্রশাসন চাইলে কী না পারে!‌ আসলে, বারবার পুলিশের রাশ টেনে ধরা হয় বলেই তারা গুটিয়ে যায়। একটু কাজের স্বাধীনতা দিলে, তারা অনেককিছুই করে দেখাতে পারে।

police4

পুলিশের কাজটাই অনেকটা থ্যাঙ্কলেস জব। যতই ভাল কাজ করো, নাম নেই। অথচ, একটু বেচাল হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। গত কয়েক বছর ধরে পুলিশ কর্তারা নিজেরাই নিজেদের হাস্যকর করে তুলেছেন। সেই কারণেই নিচু তলার পুলিশ কর্মীদের নানা উপহাসের পাত্র হতে হয়। অথচ, এই যে পাড়ায় পাড়ায় লকডাউন হল, এটা কিন্তু নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের জন্যই সম্ভব হল। সিভিক ভলান্টিয়ার, যাঁদের আমরা পাত্তাই দিই না, কথায় কথায় বিদ্রুপ করি, তাঁরাও কিন্তু দেখিয়ে দিলেন, তাঁরা চাইলে এলাকা শান্ত করতে পারেন।

পাড়ায় পাড়ায় লকডাউন সফল করতে তো আর পুলিশ কমিশনার বা আই এ এস, আই পি এস–‌রা আসেননি। নিচুতলার পুলিশ কর্মী আর সিভিক ভলান্টিয়াররাই করে দেখালেন। নানা কারণে পুলিশের সমালোচনা হয়। কিন্তু এই সফল লকডাউনের পর একটা স্যালুট তাঁদের প্রাপ্য। বারবার মনে হচ্ছে, এমনটা যদি শুরুর দিকে দেখা যেত!‌ সত্যিই তাহলে করোনা এতখানি ছড়াতে পারত না। কিন্তু শুরুর দিকে পুলিশকে তার কাজ করতে দেওয়া হয়নি। কোথাও কোথাও হয়ত বাড়াবাড়ি হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক মিটিংয়ে বাহবা নেওয়ার জন্য যথারীতি সেই সস্তা নাটক। ফলে, পুলিশও নিজেদের গুটিয়ে নিল। ফল যা হওয়ার, তাই হল।

হ্যাঁ, পুলিশকে এই ভূমিকাতেই দেখতে চাই। কোথাও কোথাও বাড়াবাড়ি হলে হোক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.