ইন্দ্রাণী রাহা
সুশান্ত সিং রাজপুত এর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দিল বেচারা’। অনেকেই দেখেছেন, যাঁরা দেখেননি, তাঁরা দয়া করে এক্ষুনি দেখুন। এমন সিনেমা আজ পর্যন্ত দেখেননি, আর ভবিষ্যতেও দেখবেন না। কারণ সিনেমাটা ভাল তার জন্য নয়, এমনকি সুশান্তের অভিনয়ের কথাও বলা হচ্ছে না। সিনেমাটি জন গ্রিন এর উপন্যাস ‘দ্যা ফল্ট ইন আওয়ার স্টার্স’ এর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। নাহ্ সেটিও বড় কোনও ব্যপার নয়। বহু সিনেমা আছে যা বিদেশি সাহিত্যের অনুকরণে তৈরি হয়।
ব্যপারটা হল সমস্ত সিনেমাটাই একটা রহস্য। ঠিক যেনটা ছিল হ্যামলেটের ‘প্ল্যে উইদিন আ্য প্ল্যে’।
না, এটা কোনও রিভিউ লিখছি না, যে গুছিয়ে ভনিতা করে বিশ্লেষণ করতে বসব। শুধুমাত্র বাস্তবের সঙ্গে অদ্ভুত মিলগুলো তুলে ধরতে চাই।
১) হেসে খেলে ঘুরে বেড়ানো ম্যাডি, ক্যিজিকে দেখে প্রেমে পড়ে বা তার নিজের বন্ধুর শেষ ইচ্ছে পূরণ করার জন্য কিজ্যিকে তার নায়িকা হতে বলে। কিজ্যি বাসু এবং সুশান্তের বন্ধু দুজনেই ক্যন্সার পেশেন্ট। বাস্তবে সিনেমার পরিচালক মুকেশ ছাবড়া সুশান্তর বন্ধু ছিলেন এবং সুশান্তের তৎকালীন বান্ধবী একজন বাঙালি মহিলা।
২) গল্পের শেষে এসে আমরা জানতে পারি, ম্যাডিরও কিছু একটা কঠিন অসুখ আছে, সে মারা যায়। বাস্তবেও আমরা হঠাৎ করেই জানতে পারি সুশান্ত সিং রাজপুত নাকি কয়েক মাস ধরে ডিপ্রেশেনে ভুগছিলেন এবং তিনি মারা যান।
৩) সিনেমা তে একটি সর্ট ফ্লিম টি ম্যডি স্যুটিং করে, সেটি তার মৃত্যুর পর কলেজ ক্যাম্পাস এ খোলা মাঠে বড়ো পর্দায় দেখানো হয়, তাতে সবাই ম্যাডিকে মনে রাখে এবং বহু মানুষ তা দেখে আপ্লুত হয়।
বাস্তবে সিনেমাটি ডিসনী হট্স্টার এ বিনামূল্যে দেখানো হচ্ছে এমন কি হটস্টার এর সাবস্ক্রিপশন ও লাগছেনা।
৪) গল্পে ইমানুয়েল রাজকুমার জুনিয়র এর মা-বাবা অথবা দিদি ভগ্নীপতি জাতীয়, একটি দৃশ্য দেখানো হলেও স্পষ্ট করে কিছু বলা অথবা দেখানো নেই। কোনও এক নানীর কাছে সে থাকে। আপনি বলতে তার শুধু বন্ধু–বান্ধব, জীবন বলতে প্রেমিকা।
কিজ্যি বাসুকে সবসময় তার মা–বাবা আগলে রাখে সবসময়। কিন্তু ম্যাডির কোনও কিছুই ঠিক করে জানা যায় না। তবুও সবাই তার সঙ্গে এক অদৃশ্য মায়ায় জড়িয়ে থাকে। ডঃ ঝা থেকে কলেজের এক ম্যডাম এবং কিছু বন্ধু-বান্ধব।
বাস্তবে মা হারা সুশান্ত সিং রাজপুতের ক্ষণিকের একাকীত্ব আর নানির কোলে মাথা রেখে নিজেই নিজের জন্য কাঁদতে থাকা ম্যাডি আজ একাকার হয়ে গেছে।
এতখানি মিল শুধুই কি কাকতালীয় বা কো-ইন্সিডেন্স!
নাকি কোনও গভীর ষড়যন্ত্র!
উত্তর জানা নেই, আর পাওয়া যাবে কিনা, তাও জানা নেই। কিন্তু এরপর আর গলার কাছে দেবে থাকা বুকচাপা কান্না নয়, বুক ঠেলে উঠে আসছে কান্না, গলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে আর্তনাদ। যেন এই কান্নাটাই এখন প্রয়োজন। সবাই বুক চাপড়ে কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে যাবে। ক্লান্তি বয়ে আনে শ্রান্তি, তারপর ঘুম।
ঠিক যেভাবে আমরা ‘চব্বিশে জুলাই দু হাজার বিশ’ তারিখের রাতে ম্যাডির জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এবং পরের দিন সকালে উঠে যে যার মতো নিজের কাজ শুরু করেছি, ম্যাডিকে পুরোপুরি না ভুলতে পারলেও সারা রাত কেঁদে মনটা অনেকটা হালকা করতে পেরেছি। আরও কয়েক রাত কাঁদবো তারপর ভুলে যাবো। সেই জন্যই কি সিনেমাটা বানানো? সুশান্ত সিং রাজপুতকেও কি আমরা ভুলে যাব!