ট্রেনের কামরায় জমজমাট আড্ডায় পিকে-উত্তম

উত্তম কুমারকে নিয়ে তাঁর অনেক স্মৃতি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, আড্ডায় মাঝে মাঝেই বলতে শোনা যেত। সেই পি কে ব্যানার্জি আর নেই। কত অজানা গল্প হারিয়ে গেল। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে, আড্ডায় ট্রেনের এক সকালের স্মৃতি মেলে ধরেছিলেন পি কে ব্যানার্জি।

সেবার ডুরান্ড খেলে দিল্লি থেকে ফিরছি। তখন আমিও রেলের বড় অফিসার। হঠাৎ চেকার এসে আমাকে বললেন, এই ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসে উত্তম কুমারও ফিরছেন। শুনে ওই চেকারের হাত দিয়ে একটা চিরকুট লিখে পাঠালাম। তার আগে বলে রাখি, উত্তম কুমারকে আমি বড়দা বলে ডাকতাম। লিখেছিলাম, বাংলার বরেণ্য অভিনেতা, আপনার সঙ্গে একটু আড্ডা হবে কি ?
জবাবে উত্তম পাঠালেন, ‘বাংলার বরেণ্য পিকে। আমিও আড্ডা মারতে চাই। কিন্তু আজ হবে না। তুমি কাল সকালে আমার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করো।’ মনে আছে, এই লেখাটা আমার মেয়ে পলা স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে নাকি মহানায়কের হাতের লেখা দেখতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল।
যাক, যা বলছিলাম, পরের দিন সকালেই ডাক পড়ল আমার। ফার্স্ট ক্লাসের কুপে ঢুকে দেখি সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে প্রাতরাশ সাজিয়ে বসে আছেন আমাদের মহানায়ক। আমাকে দেখেই বললেন, আরে, সব ট্রফিই তো ইস্টবেঙ্গলকে দিচ্ছো। আমাদের জন্য কিছু করো।’ প্রসঙ্গত সে বছরই মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়েছি আমি।

তারপর কত গল্প। খালি বলছেন, কি পিকে, ট্রফি আসবে তো ? হঠাৎ বললেন, ‘আচ্ছা, আমার কাফ মাশলটা টিপে দেখ তো, আমি ফুটবলার হতে পারতাম কিনা।’ আমি তো লজ্জায় মরি। মহানায়কের গায়ে হাত দেব! সুপ্রিয়া দেবী দেখি হাসছেন। টিপে সেই দেখতেই হল। বললাম, ‘ভাগ্যিস, ফুটবলটা খেলেননি। তাহলে আমাদের মুশকিল হয়ে যেত।’ হো হো করে হেঁসে উঠলেন। সেই ভুবন ভোলানো হাঁসিতে বললেন, মন রাখার জন্য খুব তেল দিচ্ছো, তাই না ?
পাক্কা মোহনবাগানি ছিলেন। সব খবর রাখতেন। তবে মাঠে খুব একটা আসতেন না। বলতেন, ‘আমি গেলে খেলার বারোটা বেজে যাবে।’ রোভার্সে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নিজের বাড়িতে একবার জমকালো পার্টিও দিয়েছিলেন।
এমন কত স্মৃতি। বলতে গেলে ফুরোবার নয়। অভিনয়ের জন্য তো অনেকেই চেনেন। কিন্তু কতখানি ফুটবলপ্রেমী, তা যেন আড়ালেই থেকে গেল।

(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)‌‌

******


বেঙ্গল টাইমসের মহানায়ক স্পেশাল।

আস্ত ই–‌ম্যাগাজিন। রয়েছে নানা আঙ্গিকের ১৮ টি লেখা।

পড়তে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন। প্রচ্ছদের ছবিতেও ক্লিক করতে পারেন। তাহলেও পুরো ম্যাগাজিনটি খুলে যাবে।

https://www.bengaltimes.in/BengalTimes-MahanayakSpecial.pdf‌‌‌‌

cover1.indd

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.