সরল বিশ্বাস
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। এই আপ্তবাক্যটা আমরা অনেকেই বলে থাকি। কিন্তু আমরাই যখন সিনেমা দেখতে যাই, তখন কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যাই। আমরা চাই, পুলিশ বা আদালত নয়, নায়ক নিজের হাতে শাস্তি দিক। তাই নায়ক যখন ভিলেনকে পেটায়, আমরা হাততালি দিই।
এখন বলিউডি মারপিটের ছবি একটু কমে গেছে। কিন্তু যখনই অমিতাভ বা ধর্মেন্দ্র বা মিঠুন অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছে, আমরা সিটিতে হল ভরিয়ে দিয়েছি। এমনকী তারা যদি পুলিশ হয়, তাহলেও আশা করেছি, আইন মেনে গ্রেপ্তার বা কোর্টে তোলা নয়, গুলি করেই তারা খতম করে দিক অপরাধীদের। তাই এনকাউন্টারের দৃশ্য দেখলে মন্দ লাগে না।
সিনেমার মতো বাস্তবেও তাই। পুলিশ এনকাউটার করছে শুনলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকে না। তাই যোগীর রাজ্যে বিকাশ দুবেকে পুলিশ এনকাউন্টারের নামে খুন করল কিনা, তা নিয়ে যতই বিতর্ক হোক, তাকে সমর্থন করার লোকের অভাব নেই। পুলিশ নিজে কিছু বলবে না। কিন্তু তোমরা যা ভাবার ভেবে নাও।
এনকাউন্টারে আমরা আনন্দ পাই কেন? কারণ, সরকার, প্রশাসন সম্পর্কে আমাদের সেই আস্থা থাকে না। বিচার বিভাগ সম্পর্কেও আমরা বীতশ্রদ্ধ। বছরের পর বছর লেগে যায়। অপরাধী কবে আর শাস্তি পাবে! টাকা দিয়ে ঠিক বেরিয়ে যাবে।
মোদা কথা, সরকার বা প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা থেকে আমরা এনকাউন্টার দেখে মনে মনে উল্লসিত হই। মনে হয়, যা হয়েছে, বেশ হয়েছে। কিন্তু কী আশ্চর্য, এটাও সরকারের সাফল্য বলে খোদ সরকার প্রচার করে চলেছে। সরকার শাস্তি দিতে পারে না। সরকার আদালতে প্রমাণ করতে পারে না। এই ব্যর্থতাকে চাপা দিতে সরকারই কিনা এনকাউন্টার করে হাততালি নিতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলতে পারেন, গুনাহ করোগে তো ঠোক দেঙ্গে। সেটাই নাকি বীরত্বের স্লোগান। অথচ, তিনিই নাকি শক্তিশালী মুখ্যমন্ত্রী। জনমত এমনই, এর বিরুদ্ধে প্রচার করতে গেলে আপনিই একঘরে হয়ে যাবেন। আপনার বক্তব্যকে সমর্থন করার লোক খুঁজে পাবেন না। জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে কত অপরাধ বৈধ হয়ে যায়!
কেন পুলিশ আইন হাতে তুলে নিলে মানুষ খুশি হচ্ছে, বিচার বিভাগ ভাবুক। এর পরেও দীর্ঘসূত্রিতা দূর হবে না? পাশাপাশি, এই সরকারও যে দোষীর শাস্তি দিতে পারে না, সেটা সরকার নিজেই প্রমাণ করে দিচ্ছে। কিন্তু নিজের ব্যর্থতাকেও যে এভাবে সাফল্যের মোড়কে বিজ্ঞাপন করা যায়, সেটা বিজেপিকে দেখেই শিখতে হয়।