বনস্পতির ছায়া দিলেন সারাজীবন

(‌ ‌আজ ২ জুলাই। কিংবদন্তী জননেতা অশোক ঘোষের জন্মদিন। ঠিক ৫ বছর আগে, তাঁর জন্মদিনে বেশ কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল বেঙ্গল টাইমসে। তার কয়েকটি লেখা আবার প্রকাশিত হচ্ছে। যাঁরা  আগে পড়েননি, তাঁরা এখন পড়ে নিতে পারেন। যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা আবার পড়লেও মন্দ লাগবে না। )‌

স্বরূপ গোস্বামী

সময়ের হিসেবে মোটামুটি সোয়া এক ঘণ্টা। ঠিক সাক্ষাৎকার নয়। আবার ঠিক আড্ডাও নয়। আগে থেকেই ঠিক ছিল, জটিল রাজনৈতিক তত্ত্ব বা বিতর্ক, কোনওকিছুই আসবে না। ঘুরেফিরে আসবে পুরানো কিছু স্মৃতি। উঠে আসবে এখনকার দিনলিপি। নির্দিষ্ট প্রশ্ন বা প্রসঙ্গের আবর্তে ঘুরপাক নয়, কথার স্রোত নিজেই নিজের গতি ঠিক করে নেবে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, প্রবীণ এই কিংবদন্তিকে একবার প্রণাম করে আসা।

তখন সকাল নটা। একটু আগেই হয়ে গেছে বৃষ্টি। তিন তলার উপরে ছোট্ট একটা ঘরে কিংবদন্তি অশোক ঘোষ। ঘরটার আয়তন বড়জোর আট ফুট বাই আটফুট। একটা কাঠের চেয়ার। সামনে একটা ছোট্ট কাঠের টেবিল। টেবিলে নামানো দুটো ফোন। মাঝে মাঝেই বেজে উঠছে। একটু আওয়াজ শুন‌েই বুঝতে পারছেন, উল্টোদিকে কে । সব কথা শুনছেন। পরম স্নেহে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। ফোনটা রাখার পরই ধরতে বললেন অন্য কাউকে। সেখানেও কিছু কথা বললেন, অনেকটাই শুনলেন। কাউকে দিচ্ছেন ভরসা, কাউকে দিচ্ছেন পরামর্শ। আবার কাউকে স্নেহের শাসন।

ashok ghosh5

ashoke ghosh3

বয়স বাড়লে ঝাপসা হয়ে আসে স্মৃতি। অনেককিছুই তখন মনে পড়তে চায় না। অথচ, তাঁর স্মৃতিকে যে কেউ ঈর্ষা করতেই পারেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম এখানে এসে যেন থমকে দাঁড়িয়ে যায়। চোখে দেখেন না প্রায় দুই দশক। তাই টেলিফোন ডাইরেক্টরি দেখে ফোন করবেন, সে উপায়ও নেই। তাঁর মাথাই তাঁর টেলিফোন ডিরেক্টরি। সেখানে অন্তত পাঁচশো নম্বর লোড করা আছে। যাঁকে দরকার, তাঁর ফোনটা ঠিক বেজে উঠবে।

তাঁর সবকিছুই এখনও নিখুঁত নিয়মে বাঁধা। রোজ ভোর সাড়ে চারটেয় ওঠেন। আধঘণ্টার মধ্যেই সেরে ফেলেন দৈনন্দিন সব কাজ। এমনকি স্নানও। লম্বা একটা বারান্দা আছে। সেখানে নিজে নিজেই হাঁটেন। চোখে একেবারেই দেখতে পান না। তবে পায়ের হিসেব করা আছে। গুনে গুনে চল্লিশ পা। তারপর ছাদে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি। এইসব কাজগুলো নিজেই করতে পারেন। কারও সাহায্য দরকার হয় না।

পরণে লুঙ্গি আর হাফ হাতা জামা অথবা ফতুয়া। চোখে পুরু কাঁচের চশমা। সাতটা নাগাদ এসে ঢোকেন ছোট্ট একটা ঘরে। কাগজ পড়ে শোনানোর জন্য রয়েছেন এক যুবক। তিনিই বিভিন্ন কাগজ থেকে পড়ে শোনান বিভিন্ন খবর। প্রবীণ নেতার কথায়, ‘সব কাগজ তো পড়ার মতো সময় থাকে না। দুটো কাগজ পড়া হয়। আগে একজন ইংরাজি কাগজও পড়ে শোনাতো। কিন্তু এখন ইংরাজি পড়ে শোনানোর লোক নেই। তাই বাংলা কাগজ থেকেই যা বোঝার, বুঝতে হয়। কোন খবরগুলো পড়তে হবে, সেটা সে জানে। যেখানে সংশয় হয়, সেখানে শিরোনামটা পড়ে। আমি বললে, তখন বাকিটা পড়ে। এভাবে যতটা জানা সম্ভব, জানার চেষ্টা করি।’

ashoke ghosh4

তারপরই শুরু হয়ে যায় ফোন পর্ব। হয়ত কাগজে কোচবিহার সম্পর্কে কিছু পড়লেন। আরও বিস্তারিত জানা দরকার। বা কাউকে কোনও পরামর্শ দেওয়া দরকার। ফোন করলেন সেই এলাকার কোনও নেতাকে। তিনি হয়ত তখনও ঘুমিয়েও ওঠেননি। বা ঘুমিয়ে উঠলেও তখনও কাগজ পড়েননি। পরের ফোনটা হয়ত গেল পুরুলিয়ায়। এই ফোন যে প্রটোকল মেনে হয়, এমন নয়। কে জেলা কমিটিতে আছে, কে নেই, এসব বাছবিচার নেই। নিছক কর্মী, এমন লোকের কাছেও ফোন চলে যায়। প্রবীণ নেতার কথায়, ‘সারাদিন বিভিন্ন জেলার প্রায় একশো জনের সঙ্গে কথা হয়। সেখান থেকেও পরিস্থিতি কিছুটা বুঝতে পারি।’

যখনই পুরনো কথা উঠে আসে, সাল-তারিখ সব যেন মুখস্থ। কোন ঘটনার পর কোন ঘটনা ঘটল, সেই ঘটনাক্রম নিখুঁতভাবে বলে যেতে পারেন। বয়স হলে সবারই স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসে। আপনি এই বয়সেও এতকিছু মনে রাখেন কী করে ? এই প্রশ্নটা হয়ত হাজার বার শুনতে হয়েছে। অমলিন এক হাসিতে প্রবীণ নেতার জবাব, ‘স্মৃতি অনেকটা চর্চার বিষয়। যে বিষয়টা নিয়ে চর্চা থাকবে, সেটা মনে থাকবে। চর্চা না করলেই ভুলে যাবেন। বিভিন্ন সময় পুরানো কথা উঠে আসে। অনেকে জানতে চায়। তখন বলতেই হয়। এভাবেই ঘটনাগুলো থেকে যায়। ওই বিষয় নিয়ে না ভাবলে বা কথা না বললে হয়ত ভুলে যেতাম। তবে ইদানীং একটা সমস্যা হয়। যখন কাউকে কিছু বলছি, কোনও নাম হয়ত মনে এল না। কিছুতেই মনে আসে না। আবার রাতে হয়ত মনে পড়ল। তখন আফশোস হয়।’

ঘড়ি ধরে ঠিক সকাল দশটায় নেমে আসেন নিচের অফিস ঘরে। নানা প্রান্ত থেকে আসেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। সেখানেও সবকিছু মন দিয়ে শোনেন। কোন জেলায় কী সমস্যা, নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বোঝেন। কে যথার্থই কাজের লোক, কে বাকসর্বস্ব, কার কথায় কতটা জল মেশানো, নিজের মতো করে ঠিকই বুঝতে পারেন। সবসময় মুখের উপর হয়ত অপ্রিয় কথা বলেন না। কিন্তু সি আর এভিনিউয়ের অফিসে বসে দিব্যি বুঝতে পারেন, মেখলিগঞ্জের সমস্যাটা ঠিক কী।

ঠিক বারোটায় উঠে আসেন উপরে। সামান্য কিছু খাওয়া, ‘খাওয়া দাওয়া বরাবরই কম। বয়স হচ্ছে তো। ফলে, আরও লাগাম দিতে হয়েছে। তবে মেনুতে একটা জিনিস থাকবেই।’ কী ? শিশুর মতো সরল হাসি, ‘পোস্ত বড়া। এই একটা খাবার আমার খুব প্রিয়। অন্য কিছু না হলেও চলে। মাছ, মাংসের উপর কোনও আসক্তি নেই। তবে পোস্তবড়া না হলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। বাইরে গেলে এই একটা জিনিস পাই না।’

ashoke ghosh5

খাওয়ার পর ঘড়ি ধরে একঘন্টার বিশ্রাম। তিনটে নাগাদ আবার নেমে আসেন নিচের অফিস ঘরে। হয়ত নেতারা নেই, তরুণদের সঙ্গেই নানা আলোচনায় বসে পড়েন। কখনও মোহনবাগানের আই লিগ জয়, কখনও সিনেমা বা সাহিত্যের কথাও উঠে আসে। তবে বলেন কম, শোনেন বেশি। মাঝে মাঝেই বলেন, এখনকার ছেলেরা কত জানে। ওদের কাছে কতকিছু শেখা যায়।’

ছাত্রব্লকের রাজ্য সম্পাদক সৌম্যদীপ সরকারের কাছে কয়েকমাস আগে একটা মজার গল্প শুনেছিলাম। সৌম্যদীপ পার্টি কমিউনেই থাকতেন। অনেকক্ষণ ধরে সৌম্যদীপকে পাওয়া যাচ্ছিল না। একজন বললেন, অশোকদা তোমাকে খুঁজছিলেন। সন্ধেবেলায় তাঁর ঘরে গেলেন তরুণ ছাত্রনেতা। অশোক ঘোষ জানতে চাইলেন, কোথায় ছিলে ? সৌম্যদীপ বললেন, ‘জেঠু, একটু সাইবার ক্যাফে গিয়েছিলাম।’ তখন কিছুই বললেন না। সৌম্যদীপ চলে যাওয়ার পর এক কর্মীকে বললেন, ‘ছেলেটা কফি খাওয়ার জন্য বারে যায় কেন ? বাইরে কি কফি পাওয়া যায় না?’ সেই কথা সৌম্যদীপের কানে গেল। পরের দিন ভুল ভাঙাতে আবার গেলেন অশোক ঘোষের কাছে, ‘জেঠু, বারে যাইনি। ওটা সাইবার ক্যাফে। আমাদের তো কম্পিউটার নেই। তাই ওখানে কয়েকটা প্রিন্ট আউট নিতে গিয়েছিলাম। ওখানে ঘন্টাপিছু কম্পিউটার ভাড়া পাওয়া যায়।’ প্রবীণ অশোক ঘোষ এবার বুঝলেন সাইবার ক্যাফে মানে কী । হেসে ফেললেন। বললেন, ‘সত্যিই আমরা কতকিছু জানি না। তোমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝেছিলাম।’

আবার ডেইলি রুটিনে ফিরে আসি। বিকেলে আসেন এক ফিজিওথেরাপিস্ট। তাঁর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটে। সন্ধে নাগাদ আবার উঠে আসেন উপরে। কিছুক্ষণ হয়ত টিভির সামনে বসলেন। মূলত বাংলা খবরের চ্যানেল। কোনটা কোন চ্যানেলের মিউজিক টোন, কোন অ্যাঙ্কর কথা বলছেন, সান্ধ্যকালীন আলোচনায় কোনটা কার গলা, ঠিক বুঝতে পারেন। বুঝতে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে জিজ্ঞেস করেন। হালকা খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন রাত দশটার মধ্যে। মোটামুটি এটাই তাঁর ডেইলি রুটিন। এই শৃঙ্খলার মোড়কেই কেটে গেল এতগুলো বছর।

রাজনীতির কথায় না হয় পরে আসা যাবে। অন্যদিকগুলোতে একটু উকি মারা যাক। মজা করে জানতে চাইলাম, জীবনে কখনও সিনেমা দেখেছেন ? মুচকি হেসে ফেললেন, ‘অনেকদিন আগে উত্তম কুমারের একটা সিনেমা দেখেছিলাম। সুচিত্রা সেনও ছিলেন। নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। তবে উত্তম কুমার কিন্তু আমাদের দলের খুব শুভাকাঙ্খী ছিলেন। নেতাজিকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন। তাই আমাদের দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আসতেন।’ প্রসেনজিৎ বলে একজন নায়ক আছন, নাম শুনেছেন ? ফের হেসে ফেললেন, ‘নাম শুনব না! তবে আলাপ নেই। ওঁর বাবা বিশ্বজিৎ প্রায়ই আমাদের অফিসে আসতেন।’ গানবাজনা ! ‘আমি তো চুঁচুড়ার ছেলে। সতীনাথ মুখার্জি, জটিলেশ্বরদের সঙ্গে বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল। ওদের গান শুনতাম। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতাম। এখন আর তেমন শোনা হয় না।’ এই সময়ের সাহিত্য! কিছুটা আক্ষপের সুরেই বললেন, ‘শেষ প্রায় কুড়ি বছর তো চোখে দেখতে পাই না। তাই পড়া হয় না। কাগজগুলো অন্য একজন পড়ে দেয়। কিন্তু সাহিত্য কে পড়ে শোনাবে! তবে নেতাজির উপর যা যা বই বেরোয়, একজন পড়ে শোনায়। আগে, ছোটবেলায় সবকিছুই পড়েছি। ভাল লাগত শরৎচন্দ্রের লেখা। রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ লেখাই বুঝতাম না। একজনের বই তখন পড়া হয়নি- বিবেকানন্দ। খুব অন্যায় করেছি। অথচ, নেতাজি কিন্তু বিবেকানন্দের বই পড়েই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।’

কখনও বেড়াতে গেছেন ? ‘দুটো দেশ গেছি। চিন আর রাশিয়া। দেশের মধ্যে দলের কাজে নানা জায়গায় যেতে হয়েছে। মিটিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। ঘুরে দেখা হয়নি। কেবলমাত্র একবার গিয়েছিলাম কাশ্মীরে। কলিমুদ্দিন শামস জোর করে নিয়ে গিয়েছিল। বেশ ভাল লেগেছিল।’ ঘুরেফিরে অনেক কথা উঠে আসে। মাঝে মাঝেই বলেন, আমার পুরো জীবনটাই তো রাজনীতি। রাজনীতির বাইরে অন্য জীবন বলতে প্রায় কিছুই নেই।

ashoke ghosh3

সেই তারুণ্যে ঘর ছেড়েছেন। পার্টি কমিউনেই কেটে গেল আস্ত একটা জীবন। সেই কমিউনকে ঘিরে কত গল্প মুখে মুখে ফেরে। যেমন, আগে একসঙ্গে থাকতেন অশোক ঘোষ ও চিত্ত বসু। কিন্তু সবমিলিয়ে ছিল একটি ধুতি আর একটি ফতুয়া। একদিন চিত্তবাবু সেই ধুতি আর ফতুয়া পরে বেরোতেন। সেদিন বাইরে বেরোতেন না অশোক ঘোষ। লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরেই কাটিয়ে দিতেন। চিত্তবাবু ফিরে আসার পর রাতে কাচা হত। পরের  দিন সেই ধুতি আর ফতুয়া পরে বেরোতেন অশোক ঘোষ। সেদিন চিত্তবাবুকে লুঙ্গি পরে বসে থাকতে হত। আর যেদিন দুজনকে একসঙ্গে বেরোতে হত! সেদিন কাছের এক লন্ড্রি থেকে ধার নিতে হত ধুতি আর পাঞ্জাবি। এই প্রজন্মের রাজনীতিকদের কাছে হয়ত রূপকথাই মনে হবে। আগামী প্রজন্ম হয়ত সত্যিই বিশ্বাস করতে চাইবে না, অশোক ঘোষের মতো একজন মানুষ এই বাংলায় ছিলেন। ইতিহাসে অনেক আত্মত্যাগের কথা পড়েছি। তার জ্বলন্ত উদাহরণ তো অশোক ঘোষ নিজেই। সংসদীয় রাজনীতির সুপ্ত বাসনা যখন সবাইকেই কম-বেশি গ্রাস করে, তখন তিনি কী আশ্চর্যরকমের নির্লিপ্ত! কী কঠিন সংযমে নিজেকে এসব হাতছানি থেকে নিজেকে হাজার মাইল দূরে রেখেছেন। ১৯৫১  সাল থেকে দলের রাজ্য সম্পাদক। কত লোককে এম পি, এম এল এ, মন্ত্রী বানিয়েছেন। নিজে কোনওদিন সে পথ মাড়াননি। ভেবেও দেখেনননি। অথচ, চাইলেন, মন্ত্রী , এম এল এ বা এম পি হতে পারতেন। রাজ্যসভায় তো যেতেই পারতেন। এমনকি তাঁর মতো মানুষকে উপমুখ্যমন্ত্রী করতেও কোনও আপত্তি থাকত না সিপিএমের। দাঁড়ানো তো দূরের কথা। কোনওদিন মহাকরণ বা বিধানসভায় পা-ও রাখেননি এই প্রবীণ মানুষটি । এতবছর দলের রাজ্য সম্পাদক। কোনওদিন মহাকরণ বা বিধানসভা দেখলেন না! ইচ্ছে হয়নি ? বর্ষীয়াণ মানুষটি বললেন, ‘ একেবারে শুরুর দিন থেকেই নিজেকে মনে মনে তৈরি করে নিয়েছিলাম। ঠিক করেই নিয়েছিলাম, আমি কোনওদিন ভোটে দাঁড়াব না। কোনওদিন সংসদীয় রাজনীতিতে থাকব না। আমি সংগঠনের কাজ করে যাব। ভোটে দাঁড়ালে হয়ত এভাবে কাজ করতে পারতাম না। এমনকি আমাদের মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজভবনেও কখনও যাইনি।’

কখনও জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ, কখনও হেমন্ত বসু। কখনও হেমন্ত বসু, কমল গুহ, উঠে এল অনেকের কথা। প্রমোদ দাশগুপ্ত বা মাখল পালদের কথাও উঠে এল শ্রদ্ধার সঙ্গে। শেষবেলায় গলাটা যেন একটু ধরে এল, ‘আমার সমসাময়িক যারা, তারা প্রায় সবাই একে একে চলে গেলেন। কেউ কেউ বড় অল্প বয়সেই চলে গেছে। আমি একাই রয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। যখন একা থাকি, তখন তাঁদের কথা খুব মনে পড়ে।’

এবার বেরিয়ে আসার পালা। বেরিয়ে আসার মুখে বললেন, ‘যখন ইচ্ছে হবে, চলে আসবেন। সকালের দিকে এলে ভাল হয়।’

বড় আন্তরিক সেই আমন্ত্রণ। বারবার সাড়া দিতে ইচ্ছে করে। তিনি ডুবে গেলেন অন্য কাজে। এই চুরানব্বই বছরেও অখণ্ড অবসর তাঁর জন্য নয়। সবে তো দিনের শুরু। তখনও যে অনেক কাজ বাকি।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.