চীনা পণ্য নিয়ে বলতে শুরু করে হঠাৎ রিজওয়ানুর‌!‌

রক্তিম মিত্র

সেদিন হঠাৎ করে একটা ভিডিও চোখে পড়ল। লকডাউনে বাজারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ। অনেকেই ঘরে বসে ভিডিও ছাড়ছেন। ডান, বাম, রাম কোনও শিবিরই পিছিয়ে নেই। এদিক ওদিক থেকে লিঙ্ক এসে যাচ্ছে। সবগুলো না হোক, অনেকগুলোই দেখা হচ্ছে।

open forum3

সেদিনের ভিডিওটা ছিল বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের। সম্ভবত নিজের বাড়ি থেকেই রেকর্ড করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চীনা পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ভাষণ। অন্তত হেডিংয়ে তাই ছিল। মনে হল, দেখি এই বাম নেতা স্রোতের উল্টোদিকে কোন যুক্তি তুলে ধরেন।

ব্যক্তিগতভাবে আমিও মনে করি, চীনা পণ্য বয়কটের ডাক এক বালখিল্য আচরণ ছাড়া কিছু নয়। যাঁরা এমন ডাক দিচ্ছেন, তাঁরা না বোঝেন রাজনীতি, না বোঝেন অর্থনীতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দু একটা পোস্ট দেখে হুজুগে মাতা পাবলিকের অভাব নেই। এঁরা সেই গোত্রের পাবলিক। এঁদের পড়াশোনা, যুক্তির দৌড় একেবারেই তলানিতে।

যাই হোক, তন্ময়বাবু শুরুটা ভালই করলেন। প্রথম তিন–‌চার মিনিট যুক্তিতে টান পড়েনি। তবে গলাটা একটু অতি নাটকীয়। এমন নাটকীয়তা না আনলেই পারতেন। কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই তাল কাটল। কোথা থেকে কোথায় যে চলে গেলেন!‌ একটু পরেই এল রিজওয়ানুর রহমান, অশোক টোডির কথা। তারপর এসে গেল তাপসী মালিকের কথা।

চীনা পণ্য বয়কটের পরিপ্রেক্ষিতে মোদি–‌অমিত শাহদের বিরুদ্ধে দু–‌চার কথা বলবেন, সেটা ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু এখানে রিজওয়ানুর বা অশোক টোডি এল কোত্থেকে। তাপসী মালিকের নামই বা কীভাবে এসে গেল?‌ এ অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত টাইপের হয়ে গেল। ভিডিওটা পনেরো মিনিটের করতেই হবে, কে মাথার দিব্যি দিয়েছিল?‌ যে বিষয়টা নিয়ে শুরু হয়েছিল, সেটা তো যথেষ্ট সুন্দর একটা বিষয়। সেটা নিয়ে কয়েক মিনিট বলেই শেষ করতে পারতেন।

tanmoy bhattacharya

মুশকিলটা হল, কোথায় থামতে হয়, এই পরিমিতি বোধটা অনেকেই হারিয়ে ফেলেন। ছোটবেলায় পরীক্ষায় প্রশ্ন আসত, অমুক সম্পর্কে যাহা জানো লিখো। সেই যাহা জানো, লিখো–‌র রোগ থেকে তন্ময়বাবুরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলার মতো হাজারটা বিষয় আছে। অন্যান্য ভিডিওতে বলুন। কিন্তু চীনা পণ্য নিয়ে শুরু করে তাপসী মালিকে আসার কোনও যুক্তি বা সামঞ্জস্য খুঁজে পেলাম না।

তিনি নিজে হয়ত ভিডিওটা করার পর আর শোনেননি। শুনলে, তিনি নিজেই বুঝতে পারতেন, শেষদিকটা একেবারেই অবান্তর। কী আশ্চর্য, এই ভিডিও বাম বন্ধুরা পরম আনন্দে শেয়ার করছেন। না শুনেই লাইক করছেন। লাল সেলাম কমেন্টে ভরে দিচ্ছেন। সমর্থকদের শোনার ধৈর্যটাও বোধ হয় কমে যাচ্ছে। তাই না শুনে লাইক দিয়ে দিচ্ছেন।

ভাল বলাটা একটা আর্ট। লেখাপাড়া লাগে, চর্চা লাগে। থামতে জানাটা আরও বড় আর্ট। এটাও আয়ত্ব করতে হয়।

 

&********

সেই ভিডিও লিঙ্ক। ইচ্ছে হলে শুনতে পারেন।

 

(ওপেন ফোরাম। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ। এখানে নানা বিষয় তুলে ধরা যায়। প্রিয় পাঠক, আপনিও নানা বিষয়ে আপনার মতামত তুলে ধরুন। ঠিকানা bengaltimes.in@gmail.com)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.