সরল বিশ্বাস
প্রায় নিঃশব্দে একটা বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে কলকাতা ময়দানে। মহমেডান ক্লাবের সচিব হতে চলেছেন দীপেন্দু বিশ্বাস। যদিও এখনও কিছু ‘যদি–কিন্তু’র সমীকরণ আছে। তবে, এখনও পর্যন্ত লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে দীপেন্দু।
মহমেডান ক্লাবে এর আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাইরে কেউ কখনও সচিব হননি। ক্লাবের একটা মহল থেকে এই ধুয়ো তুলে আপত্তি আসতেই পারে। কিন্তু যদি সত্যিই দীপেন্দুকে সচিব হিসেবে বাকিরা মেনে নেন, সেক্ষেত্রে কলকাতার দুই প্রধানের কাছে একটা বড় বার্তা দিতে পারবে মহমেডান শিবির।
মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলে মাঝে মাঝেই দাবি ওঠে, প্রাক্তন খেলোয়াড়দের ক্লাব প্রশাসনে আনতে হবে। বিভিন্ন শিবির মাঝে মাঝেই প্রতিশ্রুতি দেয়, খেলোয়াড়দের যুক্ত করা হবে। কিন্তু ভোট পেরিয়ে গেলেই সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে যান কর্তারা। নাম কে ওয়াস্তে দু একজনকে একটা–দুটো কমিটিতে এনে দায় সারেন। সত্যজিৎ চ্যাটার্জিকে ফুটবল সচিব করা হলেও দল গঠনে তাঁর মতামতের মূল্য কতটা, তা নিয়ে ঘোর সংশয়। কর্তারা যা চাইছেন, তাতে সিলমোহর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
প্রাক্তনদের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের সম্পর্ক তুলনায় অনেকটাই নিবিড়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রাক্তনদের ডাক পড়ে। কিন্তু সচিব বা সভাপতি বা ফুটবল সচিব পদের প্রশ্ন যখন আসে, আলোকবর্ষ দূরে রাখা হয় প্রাক্তনদের। প্রণব দাশগুপ্তর সঙ্গে ক্লাবের সম্পর্ক কতটুকু? কজন ফুটবলারকে তিনি চেনেন? টাকার জোগানই বা কী এমন দিয়েছেন? কটা স্পন্সর এনেছেন? তাহলে, তাঁদের এভাবে জামাই আদর করে বছরের পর বছর সভাপতি করে রেখে দেওয়ার কী যুক্তি? সুভাষ ভৌমিকের মতো ফুটবল অন্তপ্রাণ মানুষ কি অনেক বেশি কার্যকরী হতেন না? লোকটা সারাদিন ফুটবল নিয়ে ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন। এমনকী টাকা জোগাড়ের কথা যদি বলেন, তাহলেও এই লোকটা প্রণব দাশগুপ্ত বা কল্যাণ মজুমদারদের থেকে অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারেন। কিন্তু সুভাষ ভৌমিকের মতো মানুষ সভাপতি বা সচিব হলে দেবব্রত সরকারদের মাতব্বরি থাকবে না।
মোহনবাগানে টুটু বসু তবু নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা ঢেলেছেন। কিন্তু দেবাশিস দত্তর কী এমন আহামরি ভূমিকা? বিরাট টাকা ঢেলেছেন, এমন নয়। স্পন্সরও আনতে পারছেন না। কখনও আই এফ এ–র সঙ্গে, কখনও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে, কখনও ফেডারেশনের সঙ্গে অকারণ ঝগড়া বাঁধিয়ে শিরোনামে থাকা। জোর করে ঝগড়া লাগিয়ে এদের প্রাসঙ্গিক থাকতে হয়।
দীপেন্দুকে দেখে শিখুন। মাথা উঁচু করে তিন প্রধানে খেলেছেন। আড়াইশোর কাছাকাছি গোল করেছেন। গত দু তিন বছরে মাঠের বাইরে থেকেও মহমেডানকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এখান–ওখান থেকে টাকার জোগান দিয়েছেন। তিনি সচিব হলে নিশ্চিতভাবেই ভাল স্পন্সর আনতে পারবেন। কামারুদ্দিনের মতো মানুষ এতদিন টাকা জুগিয়েছেন। যখন পারছেন না, তখন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নিজেই সরে গেলেন। বাকি দুই প্রধানের কর্তারা কবে যে শিখবেন!
যদি সত্যিই গোঁড়ামি ভুলে দীপেন্দুর হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়, সেটা কলকাতা ফুটবলে বড় একটা মাইলস্টোন হতে চলেছে। সৌরভ গাঙ্গুলি যদি প্রথমে সিএবি, পরে বিসিসিআই–এর সভাপতি হতে পারেন, তাহলে দীপেন্দুর মহমেডান সচিব হতে বাধা কোথায়? সময় এসেছে, ভুলভাল কর্তাদের দূরে সরিয়ে আসল লোকেদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার। সেই কাজটা না হয় মহমেডান থেকেই শুরু হোক।