সরল বিশ্বাস
রাজিন্দর সিং গোয়েল বা পদ্মাকর শিভালকরকে এই প্রজন্মের চেনার কথা নয়। তাঁরা বিরাট কোনও সেলিব্রিটি ছিলেন না। তাঁরা ঘনঘন টুইট করে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করেন না। তাঁরা প্রতিনিয়ত বঞ্চনা আর অভিমানের কথা বলেও শিরোনামে আসতে চাননি। খেলোয়াড় জীবনে যেমন আড়ালে থেকে গেছেন, খেলা ছাড়ার পরেও সেই একই ভূমিকায়। কোচিং টোচিং করেছেন? করে থাকতেও পারেন। শোনা যায়নি। কাগজে কখনও সেই ছবি দেখেছি বলে মনেও পড়ছে না। খুব একটা বলিয়ে কইয়ে ছিলেন না। ফলে, ধারাভাষ্যেও দেখা যায়নি। এঁকে তাঁকে ধরে বোর্ডের কমিটিতে ঢুকতে বা নির্বাচক হতেও দেখা যায়নি।
হ্যাঁ, এঁরা আড়ালেই থাকতে চেয়েছেন।হয়ত তাই মৃত্যুর পরেও অনেকটা আড়ালেই থেকে গেলেন। প্রায় সব বাংলা কাগজেই সিঙ্গল কলাম (এক দুটো জায়গায় ডাবল কলাম)। তার বেশি জুটল না। একটাই কপি।সেটাও নিতান্তই দায়সারা। নেটে পাওয়া কিছু তথ্যের সঙ্কলন। কোনও সাইড কপি নেই। লক ডাউনের বাজারে এমনিতেই খেলাধূলা প্রায় হচ্ছে না। মাসে পনের বার বলে থুতু লাগানো যাবে কিনা, তাই নিয়ে কপি। মাসে অন্তত কুড়িদিন বিরাট কোহলির পোস্ট করা ছবি। আরও অনেক অবান্তর ছবি ও কপি ছেপে পাতা ভরতে হচ্ছে। অথচ, রাজিন্দার গোয়েলরা মারা গেলে কী কার্পণ্য। অধিকাংশ কাগজে ছবিটুকুও নেই। বা থাকলেও পঞ্চাশ পয়সার কয়েনের মতো। আতস কাচ দিয়ে দেখতে হবে। রাজিন্দার গোয়েল নিছক একজন গড়পড়তা ক্রিকেটার ছিলেন না। ভারতীয় ক্রিকেটে কটা রাজিন্দার গোয়েল বা শিভালকার জন্মেছেন? কোনও টেস্ট না খেলেও তাঁরা টেস্ট খেলিয়েদের চেয়ে বেশি সমীহ আদায় করে নিয়েছেন।
আসলে, এজেন্সি যা গেলাচ্ছে, বাংলার মূলস্রোত মিডিয়া তাই গিলছে। নিজেদের মাথা খাটিয়ে কোনও আকর্ষণীয় কপির লাইনে কেউ যাচ্ছে না। বলা হয়, রাজিন্দার সারাজীবন বিষাণ সিং বেদির ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেলেন। তাই তাঁর কোনও টেস্ট খেলা হল না। যদিও এর জন্য বেদিকে দায়ী করার কোনও মানে হয় না। একটা দলে তো তিন চার জন বাঁ হাতি স্পিনার থাকেন না। একজন খেললে, স্বভাবতই অন্যজনকে বসতে হয়।
সেই বেদি এখনও যথেষ্ট সুস্থ ও সক্রিয়। তাঁর স্মৃতিচারণের আলাদা একটা মূল্য আছে। সবার সঙ্গে হয়ত কথা বলেন না। কিন্তু এই কলকাতাতেও এমন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আছেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ নিবিঢ়। তাঁরা অনায়াসেই বেদিকে ধরতে পারতেন। বেদির দিক থেকে চমৎকার একটা লেখা হতে পারত।
বেদি না হয় সবার ধরাছোঁয়ার মধ্যে নেই। কিন্তু সিভালকার বা রাজিন্দার গোয়েল বললে বাংলার কোন ক্রিকেটারের কথা সবার আগে মনে পড়ে! বাঁ হাতি স্পিনার। বছরের পর বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ সফল। পাঁচশোর উপর উইকেট। অথচ, কখনও টেস্ট খেলা হয়নি। আড়ালেই থেকে গেলেন। ঠিক ধরেছেন, উৎপল চ্যাটার্জি। তাঁকে তো অনায়াসেই ধরা যেত। কই, কেউ তো চেষ্টা করলেন না। কোনও বাংলা কাগজে যাঁরা খেলার পাতার দায়িত্বে, তাঁদের কারও মনে হল না, এমন দিনে উৎপলকে দিয়ে একটা লেখানো যেতে পারে! এটুকু ভাবার জন্য কি খুব মেধার প্রয়োজন হয়!
সুমনের একটা গানের লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে, মগজে কার্ফিউ। সত্যিই, লকডাউন শুধু বাইরের রাস্তায় নয়। মগজেও ঢুকে পড়েছে।