মহুয়া, গাজোয়ারি করে পঞ্চায়েত দখল করলে যে এরকম প্রধানই জুটবে

রক্তিম মিত্র

খুব হইচই শুরু হয়েছে মহুয়া মৈত্রর একটি পোস্টকে ঘিরে। ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা ছেড়েছেন কৃ্ষ্ণনগরের সাংসদ। কেন জেলায় উন্নয়ন হচ্ছে না, সেই যথার্থ কারণটা তুলে ধরেছেন। মো্দ্দা কথা, পঞ্চায়েতের টাকা পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে পরিকল্পনা  না হওয়ায় টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে। পঞ্চায়েত যদি ঠিকঠাক কাজ করত, গ্রামে একটিও কাঁচা রাস্তা থাকত না।

একেবারে সঠিক জায়গাতেই আলো ফেলেছেন কৃষ্ণনগরের উদ্যমী সাংসদ। তৃণমূলের আর দশজন সাংসদের থেকে এখানেই তফাত মহুয়ার। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকলেও গ্রামীণ রাজনীতির বাস্তবতাটা বোঝেন। একটা পঞ্চায়েত কত বড় হয়, পঞ্চায়েতের সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির কী তফাত, এটা অন্তত বোঝেন। বাকি পরিযায়ী এম পি—রা এ ব্যাপারে অ আ ক খ টুকুও জানেন না।

mahua 4

আসলে, তৃণমূল আদলে একটি শহুরে দল। গ্রামীণ রাজনীতি সম্পর্কে অধিকাংশ নেতা—মন্ত্রীর কোনও ধারণাই নেই। তাঁরা জানেনই না, একটা সক্রিয় পঞ্চায়েত কী কী করতে পারে। যেমন, এই লকডাউনের সময়েও একেক জন পঞ্চায়েত মেম্বার চাইলে নিজের নিজের এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিতে পারতেন। তাঁর এলাকায় কতজন পরিযায়ী শ্রমিক আছেন, সেই তালিকা তৈরি করতে পারতেন। প্রধানকে জমা দিতে পারতেন। নিজের উদ্যোগে সেই শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে এক—দু হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতে পারতেন। এলাকাতেও যাঁদের সমস্যা, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারতেন। এর জন্য ডিএম, এসপি, এসডিও, এমএলএ, এমপি, চিফ সেক্রেটারি— কারও দরকার পড়ত না।

কিন্তু সেই পঞ্চায়েত সদস্য বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের কাজে লাগানোই হল না। পঞ্চায়েত মানেই শহুরে মানুষের মধ্যে এক উন্নাসিকতা রয়ে গেছে।অথচ, এই পঞ্চায়েতকে একটু ইতিবাচক কাজে লাগাতে পারলে, সত্যিই অনেক সমস্যা সামলে দেওয়া যেত। কিন্তু শহুরে নেতাদের সবকিছুই শহরকেন্দ্রিক। তাঁরা ছবি তুলতেই ব্যস্ত। নিজের প্রচার করতেই ব্যস্ত।

মহুয়া অন্তত বোঝেন পঞ্চায়েতের ভূমিকা কতখানি। তাই সঠিক জায়গাতেই আলো ফেলেছেন। তবে, মহুয়া এটাও বোঝেন, এই পঞ্চায়েত নেতৃত্বকে দিয়ে বিশেষ কিছু হওয়ার নয়। সারা রাজ্যেই ব্লক অফিসের সামনে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাসক দলের মাতব্বররা। বিরোধীদের নমিনেশন দিতে দেওয়া হয়নি এক তৃতীয়াংশের বেশি আসনে। যেখানে ভোট হয়েছে, তার অর্ধেক আসনে তা ছিল নিতান্তই প্রহসন। মোদ্দা কথা, বিনা লড়াইয়ে জিততে গিয়ে লেঠেল বাহিনীই ঢুকে পড়েছে পঞ্চায়েতে। তাঁরা ভাগ—বাটোয়ারা নিয়ে ঝগড়াতেই ব্যস্ত। পঞ্চায়েতের কাজটা কী, সেটাই বুঝে উঠতে পারেননি।

মহুয়া, দায়টা আপনারও। পঞ্চায়েতের আগে ওই লাঠি হাতে ব্লক ঘেরাওয়ের মানচিত্রে আপনার নদিয়া জেলাও বাদ পড়েনি। তখন বোঝেননি এভাবে ক্ষমতা দখল করতে গেলে ক্ষমতা কাদের হাতে যাবে! সেদিন সবাই অনুপ্রেরণাতেই মেতে ছিলেন। আজ তার মাশুল তো দিতেই হবে। আপনার লেখাপড়া আছে, শিক্ষা আছে, রাজনীতি বোধ আছে। তাই সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন। বাকিদের বোঝার যোগ্যতাটুকুও নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.