পাশে থাকুন, নয় স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন

নবনীতা চক্রবর্তী, লন্ডন

‌সুদূর ইংল্যান্ডে বসে মন পড়ে আছে বাংলায়। নেটে বিভিন্ন কাগজ পড়ছি। বিভিন্ন নোটিফিকেশন চলে আসছে। সোশ্যাল সাইটেও ভারতের, আমার বাংলার কত ঘটনা চোখে পড়ছে। করোনা নিয়ে গোটা দেশ যখন অস্থির, তখন নতুন বিপর্যয় হিসেবে হাজির আমফান।
এত দূরে বসে কিছুই ভাল লাগছে না। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে অসহায় বাবা আর মায়ের কথা। এতদূর থেকে কিছুই করতে পারছি না, এই বিপণ্ণতা যেন প্রতিনিয়ত তাড়া করছে। আমার মা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। স্টেজ ফোর। কলকাতায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা হয়েছে, মুম্বইয়েও হয়েছে। ডাক্তারা কার্যত জবাব দিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে অসহয়া বাবা। তিনি নিজেই প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। বাঁ দিকটা প্রায় অসাঢ়। তিনি নিজেই ঠিকঠাক হাঁটতে পারেন না। ফলে, তাঁর পক্ষে মায়ের দেখভাল করাও মুশকিল।
এই অবস্থায় মাকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এক জায়গায় টাকা জমা করা, এক জায়গায় ডাক্তার দেখানো, এক জায়গায় পরীক্ষা নিরীক্ষা, এক জায়গায় কাগজপত্র জমা করা। একজন বয়স্ক মানুষের পক্ষে এসব করা কতটা মুশকিল, সহজেই অনুমেয়। দিন পনেরো থাকার পর মাকে গড়িয়ার বাড়িতে আনাও হয়েছে। এখন তাঁদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। কে রান্না করবে, কে বাজার করবে, কে খেতে দেবে!‌ এখান থেকেই নানা জায়গায় ফোন করছি। কোনও প্রাইভেট নার্স, আয়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবেশী বা আত্মীয়রাও করোনার ভয়ে আসতে চাইছেন না।

High Commission
এদিকে, আমিও লন্ডনে আটকে রয়েছি। গত দু মাস ধরে ভারতীয় হাই কমিশনে সঙ্গে রোজ যোগাযোগ রেখেছি। রোজ মেল করছি। রোজ ফোন করছি। একেকবার একেক রকম উত্তর পাচ্ছি। কিন্তু দেশে ফেরার ছাড়পত্র কিছুতেই পাচ্ছি না। বিভিন্ন দেশ থেকে বিমান ছাড়ছে, ইংল্যান্ড থেকে কেন বিমান পাচ্ছি না, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, সরকারকে জানিয়েছি। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে আমাদের কাছে সরকার বলতে তো হাই কমিশন। আমাদের কাছে তাঁরাই তো সরকারের প্রতিনিধি। কিন্তু তাঁদের ভূমিকায় সত্যিই হতাশ। আমার মতো আরও অনেকেই আটকে আছে। তারা বাড়ি ফিরতে চায়। তারা খুবই কষ্টের মধ্যে আছে। যেখানে ভাড়া থাকত, সেখান থেকে বের করে দিয়েছে। থাকার জায়গা নেই। কোনওরকমে ছাতুর সরবত খেয়ে অনেকের দিন কাটছে। আমাদের দেশে তবু অনেক সংস্থা পাশে দাঁড়াচ্ছে। খাবার তুলে দিচ্ছে। কিন্তু এখানে পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই। দিন দিন অবস্থা আরও করুন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আমরা এমনও বলেছি, যদি কলকাতায় ফেরানো না যায়, ভারতের যে কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া হোক। সেখান থেকে আমরা ব্যবস্থা করে নেব। কিন্তু সেই ছাড়পত্রও দেওয়া হচ্ছে না। আমরা দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিনে যেতেও রাজি। কিন্তু কোনওভাবেই আমাদের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। হাই কমিশনের কাছ থেকে বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, প্লিজ একটু মানবিক দৃষ্টি নিয়ে বিষয়টা দেখুন। দেশে ফেরার ব্যবস্থা করুন। রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন সহৃদয় সংস্থার কাছে অনুরোধ, আমার বৃদ্ধ ও অসহায় বাবা–‌মার পাশে দাঁড়ান। অন্তত একজন নার্স বা আয়ার ব্যবস্থা করে দিন। নইলে, ওই অসহায় দম্পতিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন।

 

nabanitachakraborty.84@gmail.com

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.