জলের দুনিয়ায় ভরসার ঠিকানা


আপনি যে জল খাচ্ছেন, সেটা কতটা নিরাপদ?‌ জলের মধ্যে আর্সেনিক নেই তো ?‌ আর্সেনিক যদি নাও থাকে, আয়রন থাকতেই পারে। খালি চোখে আপনি হয়ত বুঝতেও পারবেন না। এমনকি সেই জল পান করার পরেও কিছু বুঝতে পারবেন না। কিন্তু তিল তিল করে মারণরোগ বাসা বাঁধছে আপনার শরীরে। যখন বুঝতে পারবেন, তখন হয়ত আর কিছুই করার থাকবে না। 
তাহলে উপায়?‌ উপায় একটাই, যতটা সম্ভব, পরিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার করা। যাঁরা কাজের প্রয়োজনে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, তাঁদের ক্ষেত্রে কাজটা হয়ত কিছুটা কঠিন। কিন্তু যাঁরা বাড়িতে থাকেন, তাঁরা কিছুটা সতর্ক থাকতে পারেন। যাঁদের সামর্থ্য আছে, বাড়িতে ওয়াটার পিউরিফায়ার লাগিয়ে নিন। এতে অনেক রোগ আসার আগেই আটকে দিতে পারবেন। 
এই ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন এক উদ্যোগী বাঙালি। নাম সুবর্ণ দেবনাথ। যাঁরা বাংলার শিল্পের হালহকিকতের খোঁজ রাখেন, তাঁরা হয়ত চেনেন। আবার অনেকে হয়ত নাও চিনতে পারেন। তাঁকে যদি নাও চেনেন, তাঁর নায়গ্রা ওয়াটার সলিউশনের কথা নিশ্চয় শুনেছেন। 

এই উদ্যোগী বাঙালি নি:‌শব্দে যে কাজ করে চলেছেন, আমি–‌আপনি তার সুফল ভোগ করছি। তিনি কিন্তু পরম তৃপ্তির সঙ্গেই জানাচ্ছেন, ‘‌এখন কিন্তু জলবাহিত রোগ অনেকটাই কমে গেছে। যেসব জেলায় এইসব রোগ বেশি হত, সেইসব জেলার মানুষরা এখন অনেক সচেতন। হাসপাতালের সামনে সেই লাইন নেই। এমনকি ওষুধের দোকানে আপনি স্যালাইনও পাবেন না। যদি চাহিদা থাকত, স্যালাইনও থাকত। চাহিদা কমে গেছে বলেই অনেক দোকানে স্যালাইন লাগছে না।’‌

niagra1
কোন জেলার কোন অঞ্চলে কী সমস্যা, তা গড়গড় করে বলে যেতে পারেন। যেমন নদীয়া, মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আর্সেনিকের সমস্যা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলায় ফ্লুরাইডের সমস্যা। কোথাও জলে গন্ধ, কোথাও রঙ। সবকিছু থেকেই মুক্তির উপায় আছে। নায়গ্রা ওয়াটার সলিউশন ব্যবহার করলে সেই সমস্যা থাকবে না, খুব বিনীতভাবেই তিনি এই দাবি করলেন। এতরকম ব্যবসা থাকতে এই ব্যবসায় কেন ?‌ আগে ছোট করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন বাদুরিয়ার চাতরায়। টিভির পার্টস, অ্যান্টেনা এসব তৈরি করতেন। একটা সময় এসে মনে হল, এমনকিছু কাজ করবেন, যেখান থেকে অনেক মানুষ উপকৃত হবে।  বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে‌ কাজ শুরু করে দিলেন। পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাথমিকভাবে উতরে গেলেও চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেতে অনেকটাই সময় লেগেছিল। মেশিনগুলি তখন কাজ করলেও পরে কার্যকরিতা কমে যেতেও পারে, এমন একটা আশঙ্কা ছিল যাদবপুরের বিজ্ঞানীদের। কিন্তু দেখা গেল, দেড় বছর পরেও তার কার্যকরিতা একইরকম। তখন চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া গেল। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুবর্ণবাবুকে। গোবরডাঙ্গায় তৈরি হয়েছে বিশাল কারখানা। 
বাংলার বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে গেলেন। বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক প্ল্যান্টের পাশাপাশি বাড়িতে ব্যবহারের জন্য আলাদা পিউরিফায়ারও তৈরি হল। চাইলে অতি অল্প খরচে আপনিও তা বাড়িতে লাগাতে পারেন। খরচ তিন হাজারের সামান্য বেশি। সবমিলিয়ে ১৫০০ প্লান্ট, প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এই নায়গ্রা ওয়াটার সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেডকে ঘিরে। রাজ্যের গণ্ডি টপকে পার্শ্ববর্তী রাজ্যেও পৌঁছে গেছে নায়গ্রা ওয়াটার সলিউশন। ত্রিপুরা সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন। 
হঠাৎ নায়গ্রা নামটা কেন ?‌ ‘‌শুরুতে নাম নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ছিল। কিন্তু পরে মনে হল, নায়গ্রা যেমন পৃথিবীর সেরা জলপ্রপাত, আমাদের জলও তেমনই পরিশ্রুত। তাই নিজের বা পরিবারের কারও নামে নয়, মনে হল, নায়গ্রা নামটাই উপযুক্ত।’ ‌সেই নায়গ্রার মতো এই নায়গ্রাও ছাপ ফেলছে। একটু একটু করে হয়ে উঠছে ভরসার ঠিকানা। 
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.