‌কোহলি–‌অনুষ্কা ছবি সাঁটালেই রোজ ছাপতে হবে!‌

সরল বিশ্বাস

লকডাউনের বাজারে খবরের বড় আকাল। কোথাও রাজনৈতিক সভা নেই। মিছিল নেই। বক্তৃতা নেই। শুধু মাস্ক বিলি আর চাল–‌আলু বিলি। মাঝে মাঝে কেন্দ্র–‌রাজ্য তরজা। খেলার পাতায় অবস্থা আরও করুণ। এখানে খেলা নেই, প্র‌্যাকটিস নেই। এখান–‌ওখান ঘুরতে যাওয়াও নেই।
পিকে ব্যানার্জি এবং চুনী গোস্বামী মারা গেলেন। তাঁদের নিয়ে কয়েকদিন স্মৃতিচারণ চলল। গত দেড় মাসের কাগজ যদি দেখেন, অধিকাংশ দিনই বিরাট কোহলি আর অনুষ্কা শর্মার ছবি। এই দুজনের সত্যি খেয়ে দেয়ে কোনও কাজ আছে বলে মনে হয় না। সারাদিন নানা পোজে শুধু ছবি পোস্ট করে যাচ্ছে। যেখানেই যেতেন, বোধ হয় ফটোগ্রাফার নিয়েই যেতেন। কেউ না থাকলে নিজেই নিজের ছবি তোলো আর সাঁটিয়ে দাও। এখন তো সারাদিন ঘরে। কোনও দিন এ ওর চুল কেটে দিচ্ছে। কোনওদিন এ ওর দাড়িতে হাত বোলাচ্ছে। কোনওদিন সোফায় বসে টিভি দেখছে। সব ছবি বাবুদের পাবলিক করা চাই। গরিবের আছে ফেসবুক। আর এঁদের ইনস্টাগ্রাম, টুইটার। সেখান থেকে ফেসবুকেও এসে যাচ্ছে। নিমেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এত ছবি পাগল সেলিব্রিটি দম্পতি ভারতে আর দ্বিতীয় আছে কিনা, তা নিয়ে একটা তর্ক হতেই পারে।

virat3

তাঁরা রোজ ছবি সাঁটাচ্ছেন, ভাল কথা। কাগজগুলোতে রোজ ফলাও করে সেই ছবি ছাপতে হবে?‌ গত তিরিশ দিনে হিসেব করে দেখুন, সব কাগজই অন্তত কুড়িদিন সেই ন্যাকা ন্যাকা ছবি ছেপেছে। বলা হতেই পারে, ভারতের ক্যাপ্টেন আর একজন সুন্দরী নায়িকা, তাদের ছবি ছাপব না?‌ এর তো একটা নিউজ ভ্যালু আছে। মাসে একটা দুটো ছবি হলে নিউজ ভ্যালু নিশ্চয় আছে। রোজ রোজ এই ছবি এলে তার নিউজ ভ্যালু আর থাকে না। আসলে, এখনকার সাংবাদিকতাও বড় বেশি টুইটার আর ফেসবুক নির্ভর। যা রেডিমেড আসছে, সাঁটিয়ে দাও। একটা এক লাইনের ক্যাপশন করে দাও। ব্যাস, অনেকটা জায়গা ভরে গেল।

একটা কথা মাঝে মাঝেই শোনা যায়, পাবলিক খাবে। আসলে, পাঠকের রুচির সঙ্গে কাগজগুলির দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। তাই, নিজেদের যাবতীয় অক্ষমতাকে ‘‌পাবলিক খাবে’‌ বলে চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিরাট–‌অনুষ্কা রোজ ছবি সাঁটাতেই পারেন। দু একদিন ছাপা যেতেই পারে। কিন্তু রোজ রোজ সেটা তিন কলাম, চার কলামে যাঁরা ছাপছেন, তাঁরা আসলে বিকল্প কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। কে আর মাথা খাটিয়ে স্টোরি আইডিয়া বের করে, তার থেকে রেডিমেড পাওয়া জিনিস সাঁটিয়ে দাও। পরিশ্রম নেই। মাথাও খাটাতে হল না। কেউ কিছু বললেই ‘‌পাবলিক খাবে’‌ বলে চালিয়ে দাও। আর নিজেরাই নিজেদের ঢাক পিটিয়ে যাও।

virat2

মাত্র একটা পাতা, সেটা ভর্তি করতেও এত ফাঁকিবাজির আশ্রয় নিতে হচ্ছে!‌ কত ভাল ভাল স্টোরি তুলে আনা যেত। কত আকর্ষণীয় ধারাবাহিক শুরু করা যেত। সাতদিনে শেষ হবে, এমন অনেক অনেক বিষয় আছে। যা মানুষকে কিছুটা স্মৃতিমেদুর করবে, কিছুটা পুরনো দিনে নিয়ে যাবে। এই মনখারাপের সময়ে, সেই স্মৃতিচারণধর্মী লেখাগুলো পাঠকের কাছে বাড়তি অক্সিজেন হয়ে থাকত। কিন্তু কঠিন সময়ে কেউ সেভাবে চ্যালেঞ্জটাই নেওয়ার চেষ্টা করল না। না মস্তিষ্ক না হৃদয়। দুটোরই বড় আকাল। বাংলা ক্রীড়া সাংবাদিকতা কতটা অসহায়, এই লকডাউন যেন আরও বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.