নন্দ ঘোষ
বালক সত্যজিৎ রায়কে একটি কবিতা লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিখ্যাত সেই কবিতাটির শেষ লাইন হল, “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শিষের উপরে/ একটি শিশির বিন্দু।’
এই কবিতাটি সব থেকে বেশি সত্যি রবীন্দ্রনাথের নিজের বাড়ি সম্বন্ধে। আমরা তাজমহল দেখেছি, মথুরা-বৃন্দাবন দেখেছি, সুদূর লাদাখে গিয়ে গুম্ফা দেখেছি, কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে হ্যানা প্যালেস, ত্যানা ম্যানসন দেখে এসেছি। কিন্তু বুকে হাত রেখে বলুন তো, কজন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি গেছি?
হ্যাঁ শান্তিনিকেতনে অনেকেই গেছি। কিন্তু সে তো প্রকৃতি দেখব বলে, বসন্ত উৎসবে নাচ দেখব বলে। রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, তার জন্মকক্ষ, প্রয়াণকক্ষ কজন দেখেছি? মহাআঁতেল রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে কিছু না জানুক, তার বৌদির কথা জানে। কিন্তু কারও মনে কি ইচ্ছা হয়েছে, সেই বৌদির ঘরটি দেখে আসি? যে ঘরের সামনে কিশোর রবীন্দ্রনাথ, আর তাঁর বউদি গল্প করতেন।
অথচ যাতায়াতে কোনও অসুবিধা নেই। বাসে বা মেট্রোতে চেপে এক ঘণ্টার মধ্যেই যাওয়া যায়। টিকিট কাটতে, হয় না, লাইন দিতে হয় না, পুলিশ বডি সার্চ করে না। ২৫ বৈশাখ, ২২ শ্রাবণ ভিড় হয়, অন্য দিনগুলো ফাঁকাই থাকে।
হয়ত অনেকে লকডাউনের দোহাই পাড়বেন। বলবেন, লকডাউন চলছে। কী করে যাব? গেলেই তো পুলিশ ধরবে। যেন আগে বারবার গিয়ে ফাটিয়ে দিয়েছেন। যেন কতবার গেছেন। মোদ্দা কথাটা হল, অধিকাংশ বাঙালি ওখানে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। তাঁরা নন্দনে যান, ইকো পার্কে যান, সাউথ সিটিতে যান। কিন্তু ঠাকুরবাড়ি! কোন আহাম্মক ওই পথ মাড়ায়! বাঙালি লকডাউনের পর মদের দোকান খুললে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেই বাঙালি খামোখা জোড়াসাঁকো কেন যাবে!
এবার না হয় পচিশে বৈশাখ আপনি ঘরবন্দি। কিন্তু এই লকডাউন একসময় তো উঠবে। ঠাকুরবাড়িও খোলাই থাকবে। সেলফিটা না হয় সেখানে গিয়েই তুলুন। যদি সত্যিই রবি ঠাকুরের জন্য গর্ববোধ থাকে, তাহলে একবার অন্তত ঘুরে আসুন। মনে হবে, এতদিন এখানে আসিনি কেন!