চাইলেই বুঝি ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হওয়া যায়!

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: প্রায় সব কাগজেই খবরটা আছে। বাইচুং নাকি অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট হতে চান। সৌরভ গাঙ্গুলি বিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তাই দেখে বাইচুংয়েরও ইচ্ছে হতেই পারে, তিনি এআইএফএফ— এর প্রেসিডেন্ট হবেন।

আসলে, খবরটা পাঠিয়েছে পিটিআই। সেটাই সব বাংলা কাগজে কার্যত হুবহু অনুবাদ করে দেওয়া হয়েছে। একটি কাগজ ছাড়া সব কাগজের মূল সুর, ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হতে চান বাইচুং। সেই লাইনেই হেডিংও করা হয়েছে।

সেখানে করোনা নিয়ে কথা ছিল। সিকিমের ফুটবল নিয়ে কথা ছিল। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা ছিল। সব তো আর ছাপা যায় না। কলকাতার মিডিয়ার মনে হয়েছে, ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টটাই ক্যাচলাইন। তাই ওটা দিয়েই খবরটা করা যাক।

কিন্তু কেরানিগিরি আর সাংবাদিকতার মধ্যে ফারাকটা দিনদিন কমে আসছে। তাই পিটিআই যে মর্মে পাঠিয়েছে, সেই মর্মেই খবর হয়েছে। ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট যে কেউ হতে পারে না, কতগুলো নিয়ম আছে, এই সময় ছাড়া অন্য কোনও কাগজে তার উল্লেখ নেই।

baichung4

কাল হয়ত আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। অন্তত আইনগত সমস্যা নেই। এমনকী হঠাৎ করে যদি শাসকদলের মনে হয়, আপনাকে রাষ্ট্রপতি করা হবে, তাও সম্ভব। শুধু বয়স ৩৫ বছর হলেই হবে (বাকি শর্ত, ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, পাগল বা দেউলিয়া হওয়া চলবে না)। কিন্তু যাকে তাকে ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট করা যায় না। নিয়ম হল, নিজের রাজ্য সংস্থার হয়ে অন্তত চার বছর ফেডারেশনে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। বা চার বছর ফেডারেশনের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হতে হবে। অর্থাৎ, এখন থেকে বাইচুং যদি সিকিম রাজ্য সংস্থার সচিব বা সভাপতি হন, যদি ফেডারেশনের মিটিংয়ে টানা চার বছর হাজির থাকেন, তবে তিনি লড়াই করার জন্য বিবেচিত হবেন। নইলে, তিনি যত বড়ই তারকা হন, তাঁর পক্ষে বর্তমান নিয়মে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব নয়।

সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সুনীল গাভাসকার, কপিলদেব, শচীন তেন্ডুলকার বা রাহুল দ্রাবিড়রা কিন্তু চাইলেও হতে পারতেন না। নিজের রাজ্য সংস্থার হয়ে তিন বছর বোর্ডের এজিএমে হাজির থাকতে হত। যে ক্যাটাগরিতে এই চার মহারথী আটকে যেতেন। সৌরভ সেই ক্যাটাগরিতে উতরে গেছেন বলেই আজ বোর্ড প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু মুশকিলটা হল, কাগজের ডেস্ক ওয়ার্কটা দিন দিন কেরানিগিরির স্তরেই চলে যাচ্ছে। যা লেখা আছে, তার বাইরে যাবে না। এর সঙ্গে যে কিছু ব্যাখ্যা মেশাতে হয়, সেই পরিশ্রম কে আর করে! তাই সাধারণ পাঠক ভেবে নিতেই পারেন, বাইচুং বোধ হয় সামনের বছরেই ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু যা যে এখন কোনওভাবেই সম্ভব নয়, দু চার লাইনে তা বোঝানো যেত। কিন্তু এই বাড়তি দু চার লাইন যোগ করতে গেলে নিয়ম জানতে হয়। কে এত ঝামেলা করে! তাই দোষটা বাইচুংয়ের নয়। নিউজ ডেস্কে বসে যাঁরা অক্ষম অনুবাদ করছেন, তাঁদের। তাঁদের জন্যই ভুল মেসেজটা পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। যাঁরা মাথায় বসে আছেন, তাঁরাও একটু আত্মসমীক্ষা করতে পারেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.