কঠিন সময়ে শঙ্কর মুদিরাই ভরসা

সজল মুখার্জি

ছবিটা অনেকদিন আগেই তৈরি হয়েছে। শুধু মুক্তি পেতে অনেক দেরি হয়ে গেল। বছর চারেক আগে নজরুল মঞ্চে কবীর সুমনের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সুমনের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান। সেখানে শঙ্কর মুদি ছবির একটা করে অডিও সিডি দেওয়া হয়েছিল। নানা কারণে, সেই সিডিটা কখনও শোনা হয়নি। হারিয়েও ফেলেছি। কিন্তু ছবির কয়েকটা গান সেদিন নজরুল মঞ্চেই শুনেছিলাম। ইদানীং শুধুমাত্র গানের জন্য কোনও ছবিকে আলাদা করে মনে রাখা কঠিন। কিন্তু সেদিন সেই গানগুলো মনকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।ইচ্ছে ছিল, শঙ্কর মুদি মুক্তি পেলেই দেখব।

কেন জানি না, সেই ছবির মুূক্তি বারবার পিছিয়ে গেছে। গতবছর চুপিসারে কখন যে মুক্তি পেয়েছে, বুঝতেও পারিনি। যখন খবর পেলাম, হল থেকে ছবি উঠে গেছে। তাই অনেকদিন ধরেই ছবিটা দেখার ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছে পূরণ করল লকডাউন। এখন অনেকটাই ফাঁকা সময়। কত আর বই পড়ব! অঢেল নেটের সুযোগে মাঝে মাঝে সিনেমাও দেখছি। সেদিন মনে হল, দেখি তো, শঙ্কর মুদি পাই কিনা। পেয়েও গেলাম।

shankar mudi

একবারেই পুরো ছবিটা দেখে ফেললাম। এই সময় এই ছবিটা যেন আরও প্রাসঙ্গিক মনে হল। পাড়ায় পাড়ায় শপিং মল গজিয়ে উঠছে।পাড়ার মুদির দোকানের ওপর ভরসাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এক ছাদের তলায় এতকিছু পাওয়া গেলে, সেখানে তো লোকে যাবেই। লাইন দেওয়ার ব্যাপার নেই। সঙ্গে এসির ঠান্ডা হাওয়া। হাতের সামনে নানা রকম ব্র্যান্ড। লোভনীয় নানা অফার তো আছেই। এসব প্রলোভন এড়িয়ে কজন বাঁচতে পারে!

শঙ্কর মুদিদের লড়াইটা সত্যিই বড় কঠিন। বড় অসম। এতবড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে একা একা লড়া যায়! লড়তে লড়তে একসময় হাল ছেড়ে দিতে হয় শঙ্কর মুদিদের। পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি যে অভিনেতা হিসেবে কতটা উঁচুমানের, এই ছবি তা বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বিসর্জন ছবিতেও অন্য এক কৌশিক গাঙ্গুলিকে আমরা দেখেছি। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই ছবি কিন্তু বিসর্জনের অনেক আগে তৈরি হয়েছে। বড় দরদ দিয়ে চরিত্রটি তৈরি করেছেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। দারুণ অভিনয় দিয়ে চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন কৌশিক। আর গান! কবীর সুমন আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, তাঁকে ছবিতে ব্যবহার করা হলে তিনি এখনও কীভাবে গানের সোনা ফলাতে পারেন। কিন্তু কজন পরিচালক এই সাহস দেখাতে পারে!

বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানির কাছে খুচরো ব্যবসার সঙ্কট কতটা, এই ছবি তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। মিটিং, মিছিল, স্লোগান, পার্লামেন্টের হইচই, সেমিনার যা করতে ব্যর্থ, এই ছবি বোধ হয় সেই কাজটা করে দেখিয়েছে। আর যে সময়ে এই ছবি দেখলাম, সেই সময়টাই বড় অদ্ভুত। পাড়ায় পাড়ায় মুদির দোকানই এখন বড় ভরসা। শপিং মলের সামনে এমন লাইন, ঢুকতে গেলে ঘণ্টা পেরিয়ে যাবে। সাপ্লাইও ঠিকঠান নেই। তথাকথিত অফার কোথায় ভ্যানিস হয়ে গেছে। সেখানে মুদির দোকান দিব্যি চলছে। অনেক কষ্টের মাঝেই শঙ্কর মুদিরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বয়ষ্ক মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু শঙ্কর মুদি সেই কতদিন আগে এভাবেই বাড়ি বাড়ি বাজার পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। এখন বুঝি, ছবিটা সময়ের থেকে খানিকটা এগিয়েই ছিল।তাই হয়ত বাঙালি বুঝতে পারেনি। তাই হয়ত হিট তকমা পায়নি। নিঃশব্দে হল থেকে সরে গেছে।

ধন্যবাদ অনিকেত, এমন একটা ছবি উপহার দেওয়ার জন্য। তখন হলে বসে না হয় দেখতে পারিনি। অলস সময়ে মোবাইলে দেখে ভাল লাগাটা মোটেই ফিকে হয়নি।

 

এই ছবিতে ক্লিক করুন। বেঙ্গল টাইমসের নতুন ই ম্যাগাজিন দ্রুত পড়ে ফেলুন। https://www.bengaltimes.in/Bengaltimes-lockdownIssue.pdf
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.