লকডাউনের Lock & Key

অম্লান রায়চৌধুরী

এই মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, এই মহামারী থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রধান উপায় হল দূরত্ব বজায় রাখা। ভারতের সব জায়গায় এটাকেই বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব এবং সেই ভাবেই ওটা পালন হচ্ছে।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাটি এই সামাজিক দূরত্ব বা social distancing এই পরিভাষা টিকে আর ব্যবহার করতে বারণ করছেন। পরিবর্তে ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা শারীরিক দূরত্বের কথা বলছেন। কারণ হিসাবে বলেছেন, এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে সকলকে স্বগৃহে থাকার পরামর্শ যেমন দেওয়া হচ্ছে, তেমনই বন্ধু বান্ধব বা পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করতে বলা হচ্ছে না। বরং এই দুঃসময়ে সকলের পাশে থাকতে বলা হচ্ছে। যেটা এই রোগের একমাত্র প্রতিষেধক।

কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এই ঘরবন্দি অবস্থায় শরীরের সঙ্গে মনের আরোগ্যের প্রশ্নটিও অত্যন্ত জরুরি হয়ে দেখা দিচ্ছে। আসলে, আমরা অনেকেই আমাদের এই ষাটোর্ধ বয়সে বেশ কিছু সময় বাড়িতেই কাটাই। অবসরের স্বাদ নিতে বা অবসরকে সাফল্য মণ্ডিত করতে। কিন্তু যেই না সতর্কীকরণ এল, নিষিদ্ধতা এল বাইরে একদমই বের হওয়া যাবে না – কেমন যেন দম বন্ধটা চেপে বসল। কোনও জিনিস নিষিদ্ধ করা মানে তার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো – এটা প্রমাণিত। সেই ছোটো বেলায় লুকিয়ে বড়দের বই পড়ার অভ্যাসের কথা মনে পড়ে যায়। এখানেও সেরকমটা হয়। কিন্তু তা বলে কলকাতার মতন নয় যে রাস্তায় অযথা বের হওয়ার অপরাধে প্রায় ২০০০ মানষের জেল হল। এটা অসভ্যতা – চিরকালীন বাঙালির নিয়ম না মানার অভ্যাস। কোনও বাহবা নেই এতে। আজও বোঝা হল না।

lock down2

এরই মাঝে বিশেষজ্ঞরা এই অবস্থাটাকে কাটাতে নানান শিল্প কলার আশ্রয় নিতে বলছেন। যার যেমন আছে, সে তার মতো করে কিছু ক্রিয়েটিভ ভাবনা বা কিছু করে দেখানর চেষ্টা, অথবা নিজের মতো করে কিছু একটা সৃষ্টি করা, কোনও ভাবনাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা–‌ হয়ত এই অবসাদ দূর করতে পারবে বলে বিশ্বাস। এক্ষেত্রে আমার সমস্যাটা একেবারেই অন্য রকমের। ঘরে বন্দি – সেটা মানলাম। মানতেই হবে নিজের ও অপরের কথা ভেবে, সেটাও মানলাম। কিন্তু করব টা কী – ওই উপরের কোনও কিছুই যে আমার আসে না। সৃষ্টির ধারে কাছে নেই আমি , চিরকালই মা বলে এসেছেন – এক অনাসৃষ্টির ছেলে ।
কাজেই ওই শিল্প কর্ম বা শিল্প শিল্প খেলা – কোনওটাই আমার দ্বারা হবে না। সময়টা কাটবে কী করে তাহলে?‌ মহা চিন্তায়।
এরই মাঝে ভূতোদার ফোন – যার চায়ের দোকানটাই আসল ঠিকানা, মাঝে সাজে বাড়ি যায়। তাও ঠেকে সেরকম খোরাক থাকলে ওখানেই বাড়ির কাজটুকু সেরে ফেলে। সত্যি তো, তার কী হবে। ফোনে বলে উঠল, কীরে, কী হবে বলতো। আমার তো হাতে পায়ে শিকড় গজিয়ে গেল। ভাবছি এভাবে চললে একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমি বললাম, অসীমের চায়ের দোকানের মতো করে ঘরটাকে সাজিয়ে নিয়ে একটা ভিডিও কনফারেন্স করো। বেশ কিছুক্ষণ চালাও, সময় কাটবে, মন্দ লাগবে না। হ্যাঁ, ওই না ধোয়া গ্লাসের চা টা হয়ত পাবে না, কিন্তু চায়ের ফ্লেবারটা পাবে বউদির রেগে যাওয়া হাতে। সবাইকে বলে দেখো না – কে কী বলে। ভূতোদার বোধ হয় কথাটা মনঃপুত হল না। বলল, দেখি কী করি– ফোনটা রেখে দিল।
বেশিক্ষণ ঘরে থাকার অভ্যাস নেই যাদের, তাদের কাছে ঘরে থাকা মানেই সংসারের সব খুঁটি নাটি বিষয়গুলো নজরে আসা। দেখতে হবেই, মন্তব্য হবে কিনা দেখতে হবে পারিপার্শ্বিক চাপের ওপর ভিত্তি করে। সকালটা কেমন, রান্না ঘরে কটা বাসন মাজার জন্য আছে, রান্না করতে হবে কিনা, নাকি শুধু গরম করলেই হবে, সকালের জল খাবারের কী রেডিমেড ব্যবস্থা না বানাতে হবে – এসব গুলোর সঙ্গে মাপতে হবে কোনটা কতটা পরিশ্রম সাপেক্ষ তার ভিত্তিতে। যদি না হয়, তাহলে মজা আছে, আনন্দ আছে, পাশে বসে চা খাওয়াও আছে। নচেত, চাপ আছে ।

এই না মেলার বিষয় বস্তুগুলোর সঙ্গে দেখা হবেই। কারণ ওই ঘরবন্দি। সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়া, সন্ধ্যেয় বাড়ি ফেরা, সবটাই–এক সুন্দর বৃত্ত দেখতে অভ্যস্ত আমরা ।
হল না সেই ভাবে, অন্তত গত দশদিন ধরে নানা জিনিস দেখতে দেখতে বেশ একটা সম্যক ধারণা হল যে, সংসারের সারের প্রয়োজন নিয়মিত, কোনও ঋতু মানে না – ফসলও বাঁধা ।
ঘরবন্দির এই দ্বিতীয়াতেই নজরে পড়ল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। না দেখা বলে আরও বেশি অবিশ্বাস্য মনে হতে লাগল। ঘর ঝাঁট দেওয়ার সময় ঝাঁটা নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হয়, আর ঠিক উল্টোটা হয় যখন ঘর মুছতে হয়– এটার কোনও ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। চোখে পড়ল যখন হাতে ঝাঁটা পেলাম, ঘর বন্দির তৃতীয় দিনে। প্রসেসটা বলে দেওয়া হল, ফলো করলাম, একেবারে মুখস্ত আর কী।
রান্নাঘরে খুব একটা ঢোকা হয় না। সেদিন ঢুকলাম, বন্দির চতুর্থীতে। চা করতে যাব – সাঁড়াশীর হাতলটা বেশ নড়বড়ে – অনেক কষ্টে নামালাম বটে, কিন্তু ভাবলাম, এটা তো মারাত্মক – কীভাবে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। জানলাম, ওটা অনেকদিনের ক্ষত – সয়ে যাওয়া –‌ এখন নাকি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে, নতুন কিনলেই অসুবিধা হবে। মেনে নিলাম, আমরাও তো সয়ে নিয়েছি অনেক কিছু – আম পোড়া সরবতের – আম পানা নামে।

lock down3
এরই মধ্যে ভাইয়ের ফোন। বলল, কী করে কাটাচ্ছিস এই বন্দীদশা। বললাম, কী বা করি, ওই খাই আর শুই, এ ছাড়া কীই বা করার আছে। বলল, বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, শোন একটা সুখবর আছে, আমি আর সুমি, মনে মনে ফিরে গেছি তিরিশ বছর আগে – দেখলাম, মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠল – সময়টাও যেন খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছে। ঘাবড়ে গেলাম, বললাম, কীভাবে হল এসব। উত্তর এল, খুব সহজ, ব্যবহার, ডাক, আচরণগুলোকে পিছিয়ে নিয়ে যা আজ থেকে তিরিশ বছর আগে। এই ধর, এখন যে ডাকে কর্কষতার বসন্ত, তাতে একটু স্যানিটাইজার লাগিয়ে দে, আওয়াজ পরিশুদ্ধ হবে, লাগিয়ে দে একটা মাস্ক মুখের উপর, দেখবি গলা দিয়ে কেমন যেন এক রোমান্টিক আওয়াজ বের হচ্ছে – যেভাবে তুই ডাকতিস -বিয়ের পর পর। মনে হবে যেন দূর থেকে ডাকছিস কাছে, বউ ভাববে এটাই ফিরে যাওয়া। সে ও উদ্বুদ্ধ হবে – চেষ্টা চালাবে – ওই ডাকে সাড়াও দেবে— বৃত্ত সম্পুর্ণ।
এগুলো যদিও মানছি, যে বেশ পুরানো অভ্যাস, তবে চালু করতে পারলে বেঁচে যাবি – এ যাত্রায় – না হলে ওই সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, দুপুরে ভর পেট খেয়ে একটা লম্বা ঘুম – বিকেলে একটু গ্যাস নিয়েই ঘুম থেকে ওঠা – সঙ্গে খানিকটা চোঁয়া ঢেকুর – পর মুহূর্তেই এক কাপ চা, রাতে আর খেতে ইচ্ছা করবে না – ওই জোর করে দুটো রুটি, সকালে আবার সেই যাই আর আসি – মাল আর নামছে না।
আসলে এখানে এখন অধিকাংশ বাড়িতেই “সব পেয়েছি বুড়ো” আর “সব পেয়েছি বুড়ি” দের বাস। এক “সব পেয়েছির আসরের” মতন এখানে চাওয়ার কিছু নেই – পাওয়ার ঝুলিও শেষ। ভাবব কী নিয়ে। কাজেই ইচ্ছা বা নতুন সুখের স্বপ্ন দেখে কাটিয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই হয় না। তাই ভাবনা নেই, অথচ এই ভাবনাই এক সময় রাতের পর রাত নিজেকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে, জীবনের কত নতুন স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে সাহায্য করেছে, জীবনে চলার পথে সাহস জুগিয়েছে, ব্যর্থতার সব কাটা শিরা -উপশিরাকে হজম করানো শিখিয়েছে, সাফল্যকে দিয়েছে নতুন উদ্যম – আরো ভাল আরও সাফল্য, গন্ডী মানেনি – সেই ভাবনাই আজকে বলছে – আর ভেবো না – ভাবার কিছু আছে কী?

সত্যি ভাবনাও আজ ক্লান্ত। বিশ্রাম চাইছে । নিজের সময় কাটানোর সব রাস্তাই যখন বন্ধ ওই এক রাস্তা খালি বাকি। নতুন করে স্মৃতির আনন্দময় দিনগুলোকে টেনে হিঁচড়ে বার করা আর তাদেরকে সাজানো আজকের আঙ্গিকে। তাই বউকে বললাম, দেখ আজকে তোমার – আমার চেনাশুনো সব রাস্তাগুলোই বন্ধ, এটা কেবল ‘করোনা’ বন্দি নয় — এটা বা এর বন্ধ্যাত্ব এখন বয়সের , অভিজ্ঞতার – আর বেশি দেখার যন্ত্রনায় – নিজের বোধের ‘নবমীতে’।

তবুও কিছু ভাবনা যেন এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় এই চরম মহামারির সন্ধিক্ষণে এসে। ওই বেশ কিছু মানুষ যাদের পরিযায়ী শ্রমিক বলা হচ্ছে – অনেকটা চিড়িয়াখানায় সেই পাখীদের মতন যারা নানান দেশের থেকে আসত এক সময়, তাদের দেখতে লোকের কী ভিড় –এরাও আসত খাবারের টানে, অনুকূল আবহাওয়ার টানে — সুস্থতা পেতে, সর্বোপরি বেঁচে থাকতে – কারণ তাদের দেশে তখন বাঁচার অবস্থা থাকত না। এই শ্রমিকরাও আজকে পরিযায়ী – তবে মানুষের তৈরি করা অবস্থায়, প্রাকৃতিক কোনও কারণে নয়। এখন তারা নিজের দেশে ফিরতে চায়, ব্যবস্থা চায় – একটু সুস্থতা। চাইতেই পারে, স্বাভাবিক কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে সেই ব্যবস্থা না থাকাটাই ব্যর্থতা। গুরুত্বহীনতায় যারা ঘর ছাড়া, আবার নতুন করে তাদেরই গুরুত্বহীন প্রমাণ করা হল প্রশাসনিক ব্যর্থতার মুখোসে। এটাই হয় শ্রেণি প্রতি বিশেষ গুরুত্বের দেশে আমাদের বেড়ে ওঠার ফসল ।জেনেছি ওটা আমার নয় , ওদের – তখনি ন্যায্য পাওয়ার গন্ডীটাও ভুলে যাই, তোষামোদ করি তাদের, যারা ন্যায্য পাওয়ার ঝুলির গন্ধে আমাদের মোহিত করে – তাদেরই নিজেদের স্বার্থে – সময়ে।

lock down1

এই প্রসঙ্গে একটা ছবির কথা মনে পড়ল। Bong Joon ho ‘র snowpiercer – ছবির ভাবনাটা মনে পড়ছে। বিপদের মাঝেও কেমন ভাগ করা হয়েছে বেঁচে থাকার মানুষদের শ্রেণী হিসাবে। চরম উষ্ণায়নে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বেঁচে নেই – এক বিরাট ব্যবসায়ী এক ধরনের ট্রেন বানাল, যেটা খালি চলবে, বাঁচাবে অনন্ত কাল ধরে। সেই ট্রেনের নানান শ্রেণী – টেল সেকশন, কোয়ারেন্টাইন সেকশন, আর হেড সেকশন। ওই টেল সেকশনেই ধরে বেঁধে আনা – না খাওয়া মানুষের ভিড়, ব্যবস্থাও তাদের একদমই আলাদা। তাদের বেঁচে থাকাটা তেমন জরুরি মনে করেনি সমাজ, তাই তাদের মরতে দেওয়া যেতে পারে – অন্য সেকশনের মানুষদের ভাল থাকার জন্য – বাঁচানোর জন্য। এটা একটা সায়েন্স ফিকশন, কিন্তু ভাবনাটা একেবারেই প্রাসঙ্গিক — কিংবা চিরকালীন, জানা নেই। তবে আজকে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা দেখে বারবার ওই ট্রেনের কথা মনে পড়ছে – কী গুরুত্বহীন অবিবেচকদের মতো একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে ওরা পার হচ্ছে ।

রবি ঠাকুরের সেই গানের –কথাগুলোর মতো

— ঘরেও নহে পারেও নহে
যে জন আছে মাঝখানে
সন্ধ্যা বেলায় কে ডেকে নেয় তারে —-
এদের দিন কাটছে কখনও রাস্তায়, ফুটপাথে, গাছের ছায়ায় কিংবা কোনও দয়া পরবেশিত সংস্থার সাহায্যে – এক সাময়িক আস্তানাতে। ভরসা কেবল একটাই । হয়ত বা এই ভরসাটা প্রশাসনেরও। শোনা যায়, শ্বাপদ নাকি সহজ শিকার করে না । তাদের পছন্দ – দৌড় ঝাপ , ছোটাছুটি না করলে তাদের আক্রমণের অস্ত্র নাকি তেমন ধারালো হয় না । আনন্দ আসে না শিকারে। এটাই ভরসা। করোনার থাবাতেও যদি সেই ভাবনা কাজ করে – তারা বেঁচে যাবে।
অনেকটাই সেই ছেলেটার মতো – যাকে হিটলারের আমলে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছিল বন্দি হিসাবে। সে ছিল শিল্পী ও খুব নাম করা। তাই তাকে রাখা হয়েছিল বন্দিদের বিনোদনের জন্য, যতদিন তারা থাকবে, যেন বিনোদনের স্বাদ পায়। চলছিল এভাবেই। কিছুদিন পরেই এই ছেলেটিকে দিয়ে তারই প্রিয়জনদের মৃতদেহ সরানো, তাদের গায়ে অ্যাসিড ঢালা, বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারের শেষ লগ্নে ঠেলে দেওয়া। সব তাকে করতে হয়েছিল। ছেলেটি হয়ে পড়ল একটা জীবন্ত লাশ। তাকে মেরে ফেলতে হয়নি। হয়ত এরকম মানুষ আজও আছে অজস্র – যারা দেখছে, কিছু করতে পারছে না- বুঝছে কিছু করার নেই । যারা করাচ্ছে, তারাও ওই ভরসাতেই বোধ হয় বন্দি – নানা আধ্যাত্মিক ভাবনাকে বেসাতি করে কিংবা নানান ভোজবাজির কায়দার ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে আছে – নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে।

সত্যিই আমরা আজ কোথায়।

ভাবার অভ্যাস করার অনেক সময় এখন, ভাবিনা একটু।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.