সুমিত চক্রবর্তী
বেশ কয়েকদিন ধরেই বাঙালি গৃহবন্দি। কারও কারও বাড়ি থেকেই চলছে অফিসের কাজ। তবু অবসরের সময় একটু অন্যভাবে কাটানো গেলে মন্দ কী! যাঁদের রোজ অফিস যেতে হয়, অনেকে সকাল আটটাতেই বেরিয়ে যান। কেউ হয়ত একটু পরে। ফিরতে ফিরতে অনেকেরই রাত হয়ে যায়। কারণ, বেসরকারি চাকরি, কে কখন ছাড়া পাবে, কোনও নিশ্চয়তা নেই। দুপুরের ভাত ঘুম দিতে ইচ্ছে হলেও উপায় থাকে না। জমিয়ে একসঙ্গে একটা সিনেমা দেখব ভাবলেও সেই উপায় থাকে না। লকডাউন সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।
মেয়েদের মুশকিল হল, সিরিয়াল নেই। পুরনো গুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হচ্ছে। তাতেও অবশ্য দেখার বিরাম নেই। এই সুযোগে আরেকবার ঝালিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। আগে দেখা থাকায় চলছে লাইভ কমেন্ট্রিও। আমার অবশ্য সিরিয়ালে তেমন মতি নেই। তবে, ভাল সিনেমা পেলে ভালই লাগত। ভেবেছিলাম, এই সময় বিভিন্ন চ্যানেলে কিছু ভাল ভাল সিনেমা দেখার সুযোগ পাব। কিন্তু এ পর্যন্ত বেশ হতাশ। অধিকাংশ চ্যানেলেই এমন সব সিনেমা চলছে, যা দেখা যায় না। দশ মিনিটের বেশি ধৈর্য থাকে না।
সিনেমার ব্যাপারে বাঙালি মূলত নির্ভর করে জলসা মুভিজ ও জি বাংলার ওপরেই। কিন্তু দুটি চ্যানেলেই যেসব সিনেমা দেখানো হচ্ছে, সেগুলো কাদের পছন্দ, তারাই জানেন। হয় নয়ের দশকের সেই বস্তাপচা মেলোড্রামা। আর নইলে দেব বা জিতের ছ্যাবলামি। আরে বাবা, একশো বছরের বাংলা ছবির ইতিহাসে সবথেকে খারাপ দুটো সময়কেই ধরতে হল! এত ভাল ভাল ছবি আছে, সেগুলো কারও মনে পড়ছে না! বোঝাই যাচ্ছে, বাঙালির রুচির সঙ্গে এই চ্যানেলগুলোর এখনও পরিচয় হয়নি। এইসব ছবি বাঙালি অনেক আগেই বাতিল করে দিয়েছে। তাই কোনও হলেও আর চলে না। গত দশ বছরেও অসংখ্য ভাল ভাল ছবি হয়েছে। সেগুলো টিভিতে আগে দেখানোও হয়েছে। অর্থাৎ, টিভি সত্ত্ নিয়েও সমস্যা নেই। কৌশিক গাঙ্গুলি, সৃজিত মুখার্জি, মৈনাক ভৌমিকদের এই সময়ের ছবিগুলো কি দেখানো যায় না!
দূরদর্শন ও অন্যান্য বেশ কিছু চ্যানেল পুরনো কিছু সিরিয়ালকে ফিরিয়ে এনেছে। বেশ ভাল পদক্ষেপ। বাংলা চ্যানেলগুলিও কি তেমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কত দারুণ দারুণ সিরিয়াল হয়েছে। সেগুলোকে এখন চালানোই যায়। আর ছবির চ্যানেলগুলি ছবি বাছার ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হোক। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের ও দর্শকদের মতামত নেওয়া হোক। মানুষের সামনে যেমন ঘরে থাকার লড়াই, তেমনি চ্যানেলগুলির সামনেও টিভির সামনে বসিয়ে রাখার লড়াই। এই লড়াই সবাইকে একসঙ্গেই লড়তে হবে।