কাগজ না থাকলে বুঝি ভাইরাস আসবে না!‌

রজত সেনগুপ্ত

বছরে আটটা দিন খুব বিবর্ণ মনে হয়। তিনটে তারিখ নির্দিষ্ট। ২৭ জানুয়ারি। ২ মে। ১৬ আগস্ট। বাকি পাঁচটা তারিখের কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। সেগুলো তিথি–‌নক্ষত্র মেনে চলে। যেমন হোলির পরের দিন। দুর্গাপুজোর অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী।
হঠাৎ এই দিনগুলোর কথা উঠে আসছে কেন?‌ কারণ, এই আটদিন কাগজ বেরোয় না। সকালে খবরের কাগজ পাওয়া যায় না। ইদানীং অবশ্য কেউ কেউ ই পেপার বের করেন। তবু ছাপা কাগজ আর ই পেপারের তফাত অনেকটাই।
লকডাউনের সৌজন্যে আবার যেন সেই দিন ফিরে আসছে। সকাল হলে বাড়িতে কাগজ নেই। বারবার দরজা খুলছি। ভাবছি, হকার ভাই হয়ত একটু দেরি করছে। সাতটা থেকে নটার মধ্যে অন্তত বার সাতেক উকি মারা। না, কাগজ নেই। গত কয়েকদিন ধরে এমনটাই চলছে।
অথচ, কাগজ যে ছাপা হচ্ছে না, এমন নয়। ছাপা হচ্ছে। নেটে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাড়ি পর্যন্ত আর আসছে না। শোনা যাচ্ছে, খবরের কাগজের মাধ্যমে নাকি করোনা ভাইরাস ঢুকে পড়তে পারে। লখিন্দরের বাসরঘরে কোন ফুটো দিয়ে মা মনসা ঢুকে পড়েছিল, কে জানে!‌ তেমনি করোনা ভাইরাস ঢোকার শত ছিদ্র আছে। সে খামোখা খবরের কাগজের হাত ধরে আসতে যাবে কেন?‌ যেন কাগজ আটকে দিলেই ভাইরাসকে আটকে দেওয়া গেল।

newspaper3
কেউ কেউ দেখছি, অদ্ভুত একটা তৃপ্তির সুরে কথা বলছেন। যাক বাবা, কাগজ নেই, বাঁচা গেছে। আরে বাবা, অন্যদিন তোদের বাঁচতে কে বারণ করেছে?‌ কাগজ থাকলে কার পাকা ধানে মই পড়ে, বুঝি না বাপু। যার ইচ্ছে হয়, সে কাগজ পড়ে। যার ইচ্ছে হয় না, সে পড়ে না। সহজ ব্যাপার। একেকজনের রুচি একেকরকম। কেউ সিরিয়াল দেখে আনন্দ পায়, কেউ ফেসবুকে ছবি সাঁটিয়ে আনন্দ পায়, কেউ পিএনপিসি করে আনন্দ পায়। কেউ কাগজ পড়ে আনন্দ পায়। এই চারটির মধ্যে সবথেকে সুস্থ বিনোদন অবশ্যই কাগজ পড়া। অন্তত আমার মধ্যে এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাই স্বভাবতই কাগজ না পেয়ে কিছুটা ফাঁকা ফাঁকাই লাগছে।
এমনিতেই লকডাউনের জেরে অফিস, স্কুল, কলেজ বন্ধ। বাইরে বেরোনো বন্ধ। পাড়ার দোকানে আড্ডা বন্ধ। এই অবস্থায় কাগজও যদি বন্ধ থাকে, তাহলে এই গৃহবন্দিত্ব আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে।

hawker
মানছি, এখন কাগজ জুড়েও শুধু করোনার খবর। তবু কোথায় কী ঘটছে, জানাও জরুরি। টিভিতে সারাক্ষণ একই দৃশ্য দেখিয়ে যাচ্ছে। একই খবর সারাদিন ধরে চলছে। কোথাও কোথাও যেন অহেতুক প্যানিক ছড়ানো হচ্ছে। অন্তত সে তুলনায় কাগজ অনেক বেশি দায়িত্বশীল। তাই, এই অলস দিনে কাগজ খুবই জরুরি। মানুষকে ঘরে রাখতে কিছুটা হলেও ভূমিকা নিতে পারে খবরের কাগজ। তাই, কাগজের পরিষেবাকে কীভাবে স্বাভাবিক করা যায়, তা নিয়ে সরকার ভাবনা চিন্তা করুক। না, কাগজের হাত ধরে করোনা ভাইরাস আসে না। আসে একঝাঁক টাটকা অক্সিজেন। সবাই হয়ত সেই অক্সিজেনের মর্ম বুঝবেন না। যাঁরা বোঝার, তাঁরা বোঝেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.