সবুজ বনানীর কোলে অযোধ্যা পাহাড়

শান্তনু ব্যানার্জি

বাঙালি মানেই খাদ্য রসিক। বাঙালি মানেই ফুটবল। বাঙালি মানেই শহীদ মিনারের তলায় ব্রিগেড। বাঙালি মানেই চিরন্তন ঘটি বাঙালের ফুটবল লড়াই। বাঙালি মানেই রাত জেগে, চোখ লাল করে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা। বাঙালি মানেই দুপুরে ভাত ঘুম। বাঙালি মানেই আড্ডা। আর বাঙালি মানেই ঘুরতে যাওয়া।

দুর্গাপুজো, কালীপুজো শেষ। এখন চলছে বড়দিন। আর দিন তিনেক পরেই পড়ে যাবে ইংরেজি নববর্ষ। আর তাই শীতের আমেজ ফুরোনোর আগেই ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে বেরিয়ে পড়া। জীবনের গতানুগতিকতা চলতেই থাকবে। সত্যি বলতে কি এটাই জীবন! কিন্তু এই জীবনেও গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে আসার একটা সহজ মাধ্যম আমাদের সকলের কাছে আছে। আর সেই মাধ্যমটি হল ভ্রমণ। ভাবছেন ভ্রমণ! একদম তাই। তাহলে চুপি চুপি জায়গার নামটা বলেই ফেলি! শীতের আমেজ সঙ্গে সবুজ বনানীর মিশেল এই দুইয়ে মিলিয়ে জায়গাটার নাম অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা বললে লোকে ভেবে নেবে যোগীর রাজ্য। না, এটা রামের অযোধ্যা নয়। একেবারেই আমাদের রাজ্যের অযোধ্যা। পুরুলিয়া সদর বাস স্যান্ড থেকে মাত্র দেড় ঘন্টার পথ।

শীতকালে পরিবার, বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে দিন চারেকের জন্যে ঘুরে আসতেই পারেন সবুজ বনানীতে ঘেরা অযোধ্যা পাহাড়ে। আর হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর ট্রেনের চাকা যত পুরুলিয়া স্টেশনের দিকে গড়াবে শস্য শ্যামলা বাঙলার রুপ, রস, গন্ধ আপনি ট্রেনের জানালা থেকে উকি মেরে শুধু চেয়েই থাকবেন! পুরুলিয়া সদর বাস স্যান্ড থেকে অযোধ্যা পাহাড় পর্যন্ত সরকারি এবং বেসরকারি বাস সার্ভিস আপনি পেয়ে যাবেন। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে পুরুলিয়া সদর বাস স্যান্ড থেকে সরকারি বাস সার্ভিস চালু হয় অযোধ্যা হিল টপগামী। আর দুপুর দেড়টার সময়ে দিনের শেষ সরকারি বাস সার্ভিস অযোধ্যা হিল টপগামী। আর বেসরকারি বাস সার্ভিস প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়ে তিনটে বেজে দশ মিনিটে শেষ হয়। বেসরকারি বাস সার্ভিস আপনাকে অযোধ্যা হিল টপ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌছে দেবে। থাকবেন কোথায়? ভারত সেবাশ্রম সংঘের একটি মঠ ও আশ্রম রয়েছে শুধুমাত্র থাকার জন্যে। এছাড়া রাজ্য পর্যটন দপ্তরের থেকে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে গভীর অরণ্যের ভিতরে। তবে এই দুটি ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে অগ্রিম বুকিং করাটাই শ্রেয়। এছাড়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর এবং সিএডিসির অধীনেও হোটেল রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই অগ্রিম বুকিং কলকাতা থেকে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হোটেল রয়েছে অযোধ্যা হিল টপ ও অনতিদূরে।

হাওড়া স্টেশন থেকে রাঁচিগামি সুপারফাস্ট ট্রেন রয়েছে। আর রাত্রি এগারাটার সময়ে প্রতিদিন পুরুলিয়া-বোকারো এক্সপ্রেস ট্রেন আছে। এই ট্রেন আপনাকে পরের দিন সাড়ে সাতটার সময়ে পুরুলিয়া স্টেশনে পৌছে দেবে। এছাড়া সাতরাগাছি স্টেশন থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেস, রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে। টোটোয় চেপে দশ মিনিটের মধ্যে আপনি পুরুলিয়া সদর বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন।

Exif_JPEG_420

অযোধ্যা হিল টপ বাস স্ট্যান্ডে বেশ কয়েকটি ভাতের হোটেল আছে। যারা ভারত সেবাশ্রমে থাকবেন তারা এক কিলোমিটার হেঁটে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে পারবেন। অরণ্য সুন্দর অযোধ্যা পাহাড়ে আপনি গাড়ি ভাড়া করে বামনি ঝর্ণা, আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম ঘুরে আসতে পারেন। আর যারা ভ্রমণ রসিক ও প্রকৃতি প্রেমী এবং যাদের দুই পায়ের ওপর অগাধ আস্থা তারা বামনি ঝর্ণা পথ পায়ে হেটে ঘুরে আসতে পারেন। সবুজ বনানী তার অপার সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে বামনি ঝর্ণা যাওয়ার পথে। বামনি ঝর্ণা যাওয়ার পথেই নেতাজি মোড় আসবে। আপনি নেতাজি মোড়ে এসে একটিমাত্র দোকান দেখতে পারবেন। গলার তৃষ্ণা মেটানোর সঙ্গেই আপনি নরম পানীয়তে চুমুক দিতে পারবেন। নেতাজি মোড় থেকে ডানদিক বরাবর একটি কংক্রিট নির্মিত রাস্তা নীল লেকের দিকে চলে গেছে। এই সুযোগে নীল লেক ঘুরে আসতে পারেন। আর ফিরতি পথে বামনি ঝর্ণা। তবে বামনি ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর তার গুরু গম্ভীর গা ছমছমে পরিবেশকে পরতে পরতে শুসে নেওয়ার জন্যে গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে তিনশো মিটার নিচে নামতে হবে। আবার ওই তিনশো মিটারের সিড়ি বেয়ে রাস্তার ওপড়ে উঠে আসতে হবে। আর এরই মাঝে আপনার কপাল ভাল থাকলে হরিণের দল কিংবা হাতির পালের মুখোমুখি ও হয়ে যেতে পারেন। তবে হ্যাঁ, হাতির পাল দেখলেও ভুল করে হাতির সামনে গিয়ে ছবি অথবা মোবাইলে সেলফি তোলার ‘‌বীরত্ব’‌ দেখাবেন না। হিতে বিপরীত হতেই পারে। একটা সময়ে অযোধ্যা পাহাড় এবং তার আশেপাশে মাওবাদী সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন তা আর নেই। তাই আর দেরি না করে শীতের আমেজ ফুরোনোর আগেই সবুজ বনানীতে ঘেরা অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরেই আসুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.