দু–‌চার কথা নেতাজিকেও শোনানো যায়

নন্দ ঘোষের কড়চা

স্বমহিমায় মাঠে নেমে পড়েছেন নন্দ ঘোষ। এতদিন সবাই তাঁর দোষ খুঁজত। এবার তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন অন্যদের দোষ। সেই তালিকায় কেউ বাদ নেই। না, নেতাজিও না?‌ তাঁকেও দু–‌চার কথা শুনিয়ে দিলেন স্বনামধন্য নন্দ ঘোষ।।

আপনি ভীরু। আপনি পলাতক। নিজের ঘরে নিজে বন্দি থাকবেন, সেটুকু কষ্ট করতেও আপনার আপত্তি। রাতের অন্ধকারে চোরের মতো পালালেন। কই, আমাদের মদনদা তো দেড় বছর জেলে থাকলেন, তিনি তো আপনার মতো পালাননি। হাসপাতালকে জেল আর জেলকে বাড়ি বানিয়ে কষ্টভোগ করলেন।
আপনি হিন্দু কুলকলঙ্ক। পালিয়ে জাবার আর জায়গা পেলেন না? শেষে কিনা পেশোয়ার!‌ মানছি তখন ওটাও ভারতের মধ্যে ছিল। কিন্তু জায়গাটা মুসলমান ভর্তি। তারপর আপনি গেলেন আফগানিস্তানে। সেখানে মুসলমানের ছদ্মবেশ নিলেন। তারপর মুসলমানদের সাহায্য নিয়ে রাশিয়ায়। ছিঃ ছিঃ। আমরা জানি ভারতের স্বাধীনতা আন্দলনে মুসলমানদের কোনও ভুমিকা নেই, মুসলমান মাত্রেই পাকিস্তান চেয়েছিল, অথচ আপনি তাদেরই সাহায্য নিলেন। ছিঃ।

netaji5
আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন হাবিবুর রহমান। একজন মুসলমান।তাইহকুর বিমানেও নাকি তিনিই আপনার সঙ্গে ছিলেন। কেন? আপনি জানেন না মুসলমানদের বিশ্বাস করতে নেই? আপনার ইতিহাস পড়লে সবাই জানবে, মুসলমানরাও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়েছিল এবং আপনার মতো একজন হিন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে তারা যান কবুল করেছিল। তাতে হিন্দু-ভারতের ভালো হবে?
এরপর আপনি তোজো, হিটলারের গায়ে গা ঘষতে গেলেন। ভাবলেন, ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাছবিচার করবেন না। যে ইংরেজের বিরোধী তাঁর সঙ্গেই জোট করবেন। খুব বেঁচে গেছেন যে আপনার দলে কোনও প্রকাশ কারাত ছিলেন না। থাকলে, জোটের গুষ্টির ষষ্টিপূজা করে দিতেন। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়েই যা করলেন, হিটলারের সঙ্গে হাত মেলালে না জানি কী করতেন। এমন নীতিকথা আওড়ানো শুরু করতেন যে আপনি একছুটে জার্মানি থেকে এলগিন রোডের বাড়িতে ঢুকে যেতেন। বলতেন, কাজ নেই দেশ স্বাধীন করে। ইংরেজের গুলি সহ্য হয়, কিন্তু তোর বুলি সহ্য হয় না।

nanda ghosh logo
প্রকাশ কারাতের কথা থাক, আপনার কথায় ফিরি। আপনি বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, মারা গেলে কোথায় কীভাবে গেছেন তাঁর কিছুই পরিষ্কার নয়। এরফলে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে আমাদের মানে সাধারন মানুষের। আপনি মারা গেলে সেই দিনটায় কেমন বেশ ছুটি পাওয়া যেত। পিকনিক করতাম। দিঘা যেতাম। আর যদি ফিরে আসতেন, তাহলে দেশের ভার আপনার হাতে তুলে দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতাম। প্রথম প্রথম আপনার নামে জয় জয় করতাম। ভাবতাম
আপনি আছেন আমাদের চিন্তা কী? তারপর যেই দেখতাম আপনি স্বাধীনতার পরেও দেশের জন্য কাজ করার কথা বলছেন, অমনি শুরু করতাম গাল পাড়া। কাজ? দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে তারপরেও কাজ? আমরা সাচ্চা দেশপ্রেমিক। ক্রিকেট মাঠে গলা ফাটাব। পাকিস্তানের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লাগলে ফেসবুকে আগুন ঝরাব। খাবদাব কলকলাব, খোকনকে নিয়ে খেলা করব। কাজ করার কথা বলে কোন আহাম্মক। জন্মদিনে ফেসবুকপ্রেমীরা অনেক আদিখ্যেতা করবেন। করুন। নন্দ ঘোষের মানপত্রটাও নিয়ে রাখুন।
(‌নেতাজি অনুগামীরা আশা করি ভুল বুঝবেন না। ‘‌নন্দ ঘোষের কড়চা’ বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। নন্দ ঘোষের কাজই হল লোকের খুঁত ধরা। তাঁর খোঁচা থেকে নেতাজিরও নিস্তার নেই। এই লেখাটি প্রকাশ করা হল। কাল শিকার কে?‌ অপেক্ষা করুন। ঠিক দুপুর বারোটায় জানতে পারবেন।)‌ ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.