শিক্ষামন্ত্রী দলের ধর্নায় গেছেন। তাঁকে খুশি করতে উপাচার্যরাও ছুটলেন। দন্ত বিগলিত করে বসে গেলেন তাঁর দুপাশে। কোথায় যেতে হয়, কোথায় যেতে নেই, এই ন্যূনতম বোধটুকুও নেই, তাঁরা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। হবু রাজা গবু মন্ত্রীদের ঠিক খুঁজে নেন। এরকম শিক্ষামন্ত্রী হলে এরকম উপাচার্যই আমাদের ভবিতব্য। লিখেছেন সরল বিশ্বাস।
নিজের পদের সম্মান নিজেকেই রাখতে হয়। এই সহজ সত্যিটা অনেকেই ভুলে যান। দুঃখের কথা, সেই তালিকায় আমাদের রাজ্যের উপাচার্যরাও। এমন এমন অযৌক্তিক কাজের নমুনা রেখে চলেছেন, তাঁদের বোধ বুদ্ধি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাম জমানাতেও অভিযোগ ছিল, নিজেদের কাছের লোককে উপাচার্য করা হচ্ছে। সত্যের খাতিরে স্বীকার করা ভাল, সেই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম মনষ্ক শিক্ষাবিদদের উপাচার্যের পদে বসানো হয়েছিল। একজন শিক্ষাবিদ বাম মনষ্ক হতেই পারেন। সেটা অন্যায় নয়। কিন্তু তাঁদের কখনও পার্টি অফিসে হাজিরা দিতে হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে হয়নি। দলীয় ধর্নায় হাজির হতে হয়নি। দন্ত বিগলিত করে মুখ্যমন্ত্রীকে সাহিত্যের জন্য ডিলিট দেওয়া হোক, এরকম প্রস্তাব আনার স্তাবকতা করতে হয়নি।
কিন্তু এখন যাঁদের উপাচার্য করা হচ্ছে, তাঁরা কতটা শিক্ষামনষ্ক, তা নিয়েই সন্দেহ।
এবার তাঁরা হাজির হয়ে গেলেন টিএমসিপি–র ধর্নায়। এনআরসি–সিএএর বিরুদ্ধে চলছে ধর্না। যেখানে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের নেতা–মন্ত্রীরা পালা করে সেই মঞ্চে যাচ্ছেন। যেখানে সারাক্ষণ মমতা–বন্দনা চলছে। শিক্ষামন্ত্রীকে সেই ধর্নায় হাজির থাকতে হবে, সেটা তাঁর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। তাই বলে উপাচার্যরাও সেই ধর্নায় হাজির হয়ে গেলেন! একবারও মনে হল না, এমন একটা অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে চলা উচিত! শিক্ষামন্ত্রীর পাশে দন্ত বিগলিত করে তাঁরাও হাজির। এঁদের একজন মুখ্যমন্ত্রীকে ডিলিট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একজন সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন। পুরস্কারস্বরূপ দুজনেই হয়ে গেলেন উপাচার্য। তাঁদের যুক্তিটাও বড় অদ্ভুত। বললেন, আমরা ইস্যুটাকে সমর্থন করি, তাই এসেছি। এই ইস্যুতে যদি বাম সংগঠন বা কোনও নকশালপন্থী সংগঠন ধর্নায় বসে, তখন হাজির থাকবেন তো!
যে কোনও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকলে কিছু চাপ থাকে। না চাইতেও অনেককিছু করতে হয়। কিন্তু এটা হল ধরে আনতে বললে বেঁধে আনা। নত হতে বললে এঁরা নতজানু হয়ে যান। এই আচরণ থেকেই বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেমন চলছে। এই সব লোক একটা বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর যোগ্য? এতে কি তৃণমূলের সত্যি কোনও উপকার হল! এইসব দন্ত বিগলিত করা লোকেরা পাশে থাকলে আন্দোলনটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, এটুকু বোঝার বুদ্ধিও তৃণমূল নেতৃত্বের নেই। এঁদের হাজির করে শিক্ষামন্ত্রী ভাবছেন, তিনি দারুণ একটা কাজ করে ফেললেন। এতে যে তাঁরই মুখ পুড়ল, সেটুকু বোঝার মতো বুদ্ধিও তাঁর নেই। তিনি এমন লোকেদের উপাচার্য বানিয়েছেন, যাঁরা কোথায় যেতে হয়, কোথায় যেতে নেই, এটুকুও বোঝেন না। এমন শিক্ষামন্ত্রী হলে এরকম উপাচার্যই আমাদের ভবিতব্য।