রক্তিম মিত্র
বন্ধ মানেই টুকটাক কিছু ঝামেলা। কোথাও পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে। কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে। আবার কোথাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। সরকারি বাস ভাঙচুর করা হচ্ছে। এইসব ছবিগুলোর সঙ্গে রাজ্যবাসী মোটামুটি পরিচিত ছিল। কিন্তু এবার অন্য এক ছবি ভাইরাল হয়ে গেল। পুলিশ রাইফেল দিয়ে গাড়ির কাচ ভাঙছে।
এই ফেস ছবি ও ভিডিওর দুনিয়ায় কোনটা সত্যি, কোনটা সাজানো বোঝা মুশকিল। ভুল ছবি নিয়ে হইচই করার লোকের অভাব নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্তত ছবিটা সাজানো বলে মনে হচ্ছে না। অনেক চ্যানেলে বিধিসম্মত একটি ঘোষণা চোখে পড়ল— ভিডিও–র সত্যতা অমুক চ্যানেল যাচাই করেনি। অর্থাৎ, আমাদের দায় নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বোধ হয় ঘোষণাটি অন্যরকম করার সময় এসেছে। যেমন নারদার ফুটেজের সময় এখনও সবাই বলে যাচ্ছেন, ভিডিও–র সত্যতা আমরা যাচাই করিনি।
যেটা নিয়ে লোকসভায় এথিক্স কমিটি হয়েছিল, যেটা নিয়ে সিবিআই তিন বছর ধরে তদন্ত করছে, তার পরেও এখনও কেন লিখতে হয়, এই ভিডিও ফুটেজের সত্যতা আমরা যাচাই করিনি। বরং এবার বলা যায়, এই বিডিও জাল, সিবিআই এখনও এমন দাবি করেনি।
সুজাপুরের ক্ষেত্রেও ভিডিওটি যদি জাল হত, প্রশাসন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকত! তখন ব্যাপারটা আর মালদার এসপির হাতে থাকত না। খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি এই নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করে বসতেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী চিৎকার জুড়ে দিতেন। ফোন করে এই ফুটেজ না দেখানোর নির্দেশ চলে আসত চ্যানেলে চ্যানেলে।
এরপর হয়ত তদন্তের কথা বলা হবে। আর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া মানে সেটা যে ধামাচাপা দেওয়ার সমার্থক, এটা বুঝতে তেমন বুদ্ধি লাগে না। ভিডিওটা সত্যি না মিথ্যে, সেটা বলার জন্য ২৪ ঘণ্টাই যথেষ্ট। তার মধ্যে যদি পুলিশ সঠিক কিছু বলতে না পারে, ধরে নিতে হবে, ওটা পুলিশেরই কীর্তি। ভাবতেও অবাক লাগে, পুলিশ কিনা গাড়ি ভাঙচুর করছে! নিশ্চিতভাবেই এটা বন্ধ যাঁরা ডেকেছেন, তাঁদের ঘাড়েই চাপানো হত। গুন্ডামির তত্ত্ব প্রচার করা হত। কিন্তু কোন বেরসিক যে এমন মোক্ষম সময়ে এই ছবিটা তুলে ফেলল!
একজন সাধারণ কনস্টেবল বা সিভিক ভলান্টিয়ার এভাবে গাড়ি ভাঙচুর করতে যাবেন! বিশ্বাস করা কঠিন। উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া এই কাজ হয় না। সেই উপর মহলটা কে? কোনও তদন্ত কমিটির হিম্মৎ হবে, সেই উপর মহলে আলো ফেলার! বন্ধের নামে গুন্ডামি অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু পুলিশ যদি গাড়ি ভেঙে অন্যদের নামে চাপাতে যায়, সেটা ক্ষমার অযোগ্য। বিরোধীদের গুন্ডামি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী বরং নিজের পুলিশ বাহিনীর গুন্ডামি থামানোর ব্যবস্থা করুন। নইলে ধরে নিতে হবে, এটাও কোনও মহান অনুপ্রেরণা।
https://www.bengaltimes.in/Bengaltimes-ShitIssue.pdf
(বেঙ্গল টাইমসের শীত সংখ্যা। অনলাইন ম্যাগাজিন। উপরের লিঙ্কে ক্লিক করলেই খুলে যাবে। সহজেই পড়ে ফেলতে পারেন।)