শঙ্কুর ছবিতেও কিনা আইটেম সং!‌

সজল মুখার্জি

প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে ছবি?‌ যেমনই হোক, বিতর্ক অনিবার্য। অনেক বাঙালির ছোটবেলার সঙ্গী এই শঙ্কু। সেই শঙ্কুকে পর্দায় আনার সাহস স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও দেখাননি। কারণ, বইয়ে যা ভাল লাগে, ছবিতে অনেক সময় তা লাগে না। বিশেষ করে শঙ্কুর মতো চরিত্রকে নিয়ে কাজ করা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। সেই কারণেই কি এতদিন হাত দেননি সন্দীপ রায়?‌ হতেও পারে।
তবে একসময় না একসময়, কাউকে না কাউকে শুরু করতেই হত। কারণ, এরকম একটা জনপ্রিয় চরিত্র ছবির বাইরে থেকে যাবে, এটাও মেনে নেওয়া কঠিন। ছবিটা দেখার পর দারুণ হয়েছে বললে একটু অত্যুক্তি হয়ে যাবে। তবে প্রথম ছবিতে মোটামুটি উতরে গেছেন সন্দীপ।

shanku1
প্রথমেই বলা যাক, শঙ্কুর চরিত্রে ধৃতিমান একেবারেই মানানসই। যাকে তাকে মানাত না। ঠিকঠাক লোককেই বেছেছেন সন্দীপ। অন্তত এই ব্যাপারে তাঁকে দশে আট দিতেই হবে। নকুড়বাবু হিসেবে শুভাশিসের নির্বাচনটাও মন্দ নয়। তবে শুভাশিস এক্ষেত্রে একটু যেন ওভারঅ্যাক্টিংয়ের আশ্রয় নিয়েছেন। হয়ত নকুড়বাবুর চরিত্রের চাপ নিতে পারেননি। যে কারণে, কোথাও কোথাও তা ভাঁড়ামির স্তরে চলে গেছে।
চিত্রনাট্য মোটামুটি টানটান। অহেতুক ব্যপ্তি নেই। জায়গা বুঝে হিউমার আছে। তবে অ্যামাজন তুলে ধরতে গিয়ে গিরিডিটা বোধ হয় একটু উপেক্ষিত থেকে গেল। শঙ্কুর সঙ্গে গিরিডির এক অদ্ভুত যোগ। যে কোনও কারণেই হোক, সেই যোগটা সেভাবে তুলে ধরা গেল না। অবশ্য ভোজের পাতে পোলাও, মাংস থাকলে চচ্চড়ি বা ফুলকপির তরকারির প্রতি একটু উপেক্ষা হয়েই থাকে। প্রোডিউসারের খরচ করার ইচ্ছে হয়েছে, তিনি ব্রাজিলে পাঠিয়েছেন। তবে অনেক কম খরচে, সুন্দরবনেও এই দৃশ্য দিব্যি হয়ে যেত। একটা ছবির বাজেটে যদি পাঁচটা ছবি হয়ে যায়, মন্দ কী?‌

shanku3
আরও একটা ব্যাপার বেশ চোখে লাগল। বিদেশে অহেতুক নাচ গানের দৃশ্য। যাকে বলে আইটেম সং। বাণিজ্যিক ছবিতে এই আইটেম সং নাকি অনিবার্য অঙ্গ। তাই বলে শঙ্কুকে নিয়ে ছবিতেও আইটেম সং!‌ এই হাতছানিটা এড়ানোই যেত। শঙ্কুকে জনপ্রিয় করতে অন্তত এটা লাগে না।
শঙ্কু আন্তর্জাতিক চরিত্র। তিনি অন্য ভাষায় পারদর্শী হবেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ছবিটা তো হচ্ছে বাংলার দর্শকদের জন্য। তাই সংলাপে এত বেশি ইংরাজি কিছুটা বেমানান। সাহেবদের বাংলা বলালে খুব একটা হাস্যকর হত না। বরং, সংলাপগুলো প্রাণবন্ত হতে পারত। সংলাপটা বাংলায় হল, তলায় না হয় ইংরাজি সাব টাইটেল থাকল। এরপরেও নিশ্চয় শঙ্কুকে নিয়ে আরও ছবি হবে। সেগুলো যেন ইংরাজি ছবি না হয়ে ওঠে। ইংরাজির মাঝে একটু করে বাংলা, এমনটা না করে বাংলার মাঝে বরং একটু আধটু ইংরাজি থাক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.