একটু সিরিয়ালের গন্ধ, তবে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও আছে

review.indd
অরিত্র ঘোষাল

হল থেকে বেরোনোর মুখে এক বৃদ্ধা বলে উঠলেন, দেবের কী দুর্দিন এল!‌ পাড়ার গুন্ডাদের হাতে মার খেতে হচ্ছে।
অপরিচিত মহিলা। কী আর বলব!‌ তবে মনে মনে বললাম, এতদিনে দেব জাতে উঠল। এতদিন হিরো ছিল। এবার বোধ হয় অভিনেতা হয়ে উঠল।
দেব বলতেই কতগুলো ছবি ভেসে ওঠে। গানের দৃশ্যে বিদেশে চলে যাওয়া। কখনও পেছনে চল্লিশজন নাচছে। সামনে নাযক। আর মারামারির দৃশ্য হলে তো কথাই নেই। সামনে কুড়িজনই থাকুক বা চল্লিশজন। তুড়ি মেরে সবাইকে উড়িয়ে দেবে। গুলি চলুক বা তরোয়াল। দেবের কাছে কুছ পরোয়া নেহি। যাঁরা এই দেবকে দেখতে অভ্যস্থ, যাঁরা এই দেবকেই দেখতে চান, তাঁদের সাঁঝবাতি না দেখাই ভাল। হতাশ হতে হবে।
কিন্তু যাঁরা একটু মাটির কাছাকাছি থাকা চরিত্রে দেবকে দেখতে চান, তাঁরা টিকিট কেটে হলে ঢুকে পড়তেই পারেন। যতদূর মনে হচ্ছে, দেব আর সৌমিত্র একসঙ্গে কখনও অভিনয় করেননি। সেদিক থেকেও ছবিটা অন্যরকম। এক ছবিতে দুই প্রজন্মের দুই নায়ককে দেখা কম প্রাপ্তি নয়।

sajhbati2
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। নামটা বেশ পরিচিত। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলে নয়। মেগা সিরিয়ালের হাত ধরে অনেককাল আগেই তিনি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছেন। তাঁর সৃষ্টি করা চরিত্রগুলো আর সেই চরিত্রের সংলাপগুলো মা–‌কাকিমারা গড়গড়
করে বলে যেতে পারে। সত্যজিতের চরিত্রগুলোও সমকালে এতখানি পরিচিতি পেয়েছিল কিনা সন্দেহ। সেই সিরিয়ালের মহালেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় যদি ছবির স্ক্রিপ্ট লেখেন, তাহলে সেটা কেমন দাঁড়াবে!‌ একটা কৌতূহল তো ছিলই। দেখা গেল, সিরিয়ালের হ্যাং ওভার আছে ঠিকই, তবে কোথাও কোথাও সেই জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। অর্থাৎ এটা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়–‌শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় জুটিরও নতুন এক জার্নি।
সবমিলিয়ে অনেকগুলো স্তর। অনেকগুলো কারণে ছবিটা দেখা যায়। গল্পের নির্যাসটা মোটামুটি এরকম। মেদিনীপুরের কোনও গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে কলকাতায় এল চাঁদু (‌দেব)‌। কাজ হল, এক বৃদ্ধাকে দেখভাল করা। সেই বাড়িতেই কাজ করে ফুলি (‌পাওলি)‌। তারপর যা হয়!‌ সেই বাড়ির সঙ্গে একটু একটু করে জড়িয়ে পড়া। এমনকী ফুলির সঙ্গেও। সেই বৃদ্ধার সঙ্গে আরেক একাকী বৃদ্ধর (‌সৌমিত্র)‌ সুন্দর সম্পর্কও এই ছবির অন্যতম আকর্ষণ। ছেলেমেয়েরা চাকরি করতে বাইরে চলে গেলে বৃদ্ধ–‌বৃদ্ধার নিঃসঙ্গতার কথা আছে। একাকী বুড়ো বা বুড়ি থাকলে পাড়ার উঠতি প্রোমোটারের চমকানি আছে। এগুলো মোটামুটি ছকে বাঁধা পরিচিত দৃশ্য।
প্রথমার্ধে দিব্যি হিউমার ছিল। ইন্টারভালের পর কেমন যেন হঠাৎ করে টানটান হয়ে গেল। হঠাৎ করে দার্জিলিংয়ে বেড়াতে যাওয়ার ভাবনাটা মন্দ নয়। কিন্তু একটা গানেই দার্জিলিং শেষ হয়ে গেল। গেছেনই যখন, তখন সেই সুন্দর লোকেশানকে আরও একটু কাজে লাগানো যেতে পারত। যে বাড়ি নিয়ে এত কাণ্ড, সেই বাড়ির শেষমেশ কী পরিণতি হল, তাও অজানাই থেকে গেল।
খুচরো কিছু অসঙ্গতি ছাড়া ছবিটা বেশ উপভোগ্য। মূল ধারার ছবির থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে অন্য ধারায় বেশ কয়েকটা ছবি করে ফেললেন দেব। শুরুতে আড়ষ্ট লাগছিল। সেই আড়ষ্টতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন। ক্রমশ চরিত্রাভিনেতা হয়ে উঠছেন। এতে সেই ফ্যান বেস হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। আবার সেই পাগলু বা খোকাবাবুর দর্শককে যদি সাঁঝবাতির টিকিট কাটানো যায়, সেটাও কম সাফল্য নয়।

 

MergedFile
https://www.bengaltimes.in/Bengaltimes-ShitIssue.pdf

 

(বেঙ্গল টাইমস থেকে প্রকাশিত ই ম্যাগাজিন। প্রচ্ছদের এই ছবিতে ক্লিক করলে পিডিএফ ফাইলে খুলে যাবে ই ম্যাগাজিন। )

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.