সৌম্যদীপ ঠাকুর
লোকসভায় বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে। ফলে, সিএবি পাস করাতে তেমন সমস্যাই হত না। সংখ্যা বিজেপির সঙ্গে। মিডিয়া বিজেপির সঙ্গে। অর্থবল, বাহুবল বিজেপির সঙ্গে। হুজুগ তুলে জনমত পক্ষে আনাও তাঁদের কাছে কঠিন নয়।অর্থাৎ, সব মানদণ্ডেই বিজেপি এগিয়ে ছিল। শুধু লোকসভার বিতর্কে বিপক্ষের কিছুটা এগিয়ে থাকার সুযোগ ছিল। সেই সুযোগটাও হেলায় হারাল বিরোধীরা।
সেই হল্লাবাজির প্রতিযোগিতা। এতে যে বিজেপির সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না, এই সহজ সত্যিটা বিরোধী দলগুলো কবে যে বুঝবে! এমন একটা চরম বিভেদ সৃষ্টিকারী বিল। ঠিকঠাক যুক্তি তুলে ধরতে পারলে অন্তত যুক্তির লড়াইয়ে অনেকটাই বেআব্রু করা যেত শাসকদলকে। কিন্তু বিরোধীরা সেই রাস্তায় হাঁটলই না। হইহল্লা করে বিষয়টাকেই লঘু করে ফেলল।
এই বিলে বিরোধীদের মূল বক্তা কিনা অধীর চৌধুরি! কোনও সন্দেহ নেই, অধীর লড়াকু নেতা। বহরমপুর থেকে তাঁর জয় বেশ কৃতিত্বের। সেই লড়াইকে স্বীকৃতি দিতে তাঁকে সংসদীয় দলনেতাও করেছেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু তাই বলে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা আলোচনায় তাঁকে মূল বক্তা মানা যায় না। এই বিল নিয়ে বলতে গেলে যে পরিমাণ পড়াশোনা ও ভাষার প্রতি দখল থাকা দরকার, তা অধীরের নেই। বরং, এই বিতর্কে অনেক বেশি যুক্তিনিষ্ঠ হতে পারতেন শশী থারুর। কোথায় কী ত্রুটি, কেন এটা সংবিধানের মূল স্পিরিটের বিরোধী, তা চিৎকার করে বলার বিষয় নয়। গোটা দেশ যখন শুনছে, তখন হাস্যকর এক বিতর্ক উপহার দিল কংগ্রেস।
কংগ্রেসের পরই সবথেকে বড় দল তৃণমূল। এই দলে এই ব্যাপারে বলার মতো যোগ্য লোক ছিলেন সৌগত রায়। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাছতে হলে মহুয়া মৈত্র।কিন্তু তাঁদের কাউকেই বলার সুযোগ দেওয়া হল না। ভাইপোকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল। যে ভাষণ তিনি দিলেন, তা জনসভায় চলতে পারে, কিন্তু সেটা মোটেই সংসদের ভাষণ নয়। সৌগত রায় বা মহুয়া মৈত্র সংসদের বিতর্কে যতখানি ছাপ ফেলতে পারতেন, তার সিকিভাগও প্রভাব ফেলতে পারলেন না ভাইপো। ভাইপোকে তুলে ধরতে গিয়ে দলের বক্তব্যটাকে ভালভাবে তুলে ধরতেই পারল না তৃণমূল।
এভাবেই সংসদের বিতর্ক ক্রমশ লঘু হয়ে যাচ্ছে। কোন বিল নিয়ে কাকে বলানো উচিত, সেই সিদ্ধান্তটাই নিতে পারছে না বিরোধীরা।পাড়ার চায়ের দোকান আর সংসদ যে এক নয়, এই সহজ ব্যাপারটাই বিরোধীরা এখনও বুঝতে চাইছেন না। এমনিতেই অনেকে হেরে গেছেন। বিরোধীদের অনেক বড় বড় বক্তা লোকসভায় আসার ছাড়পত্রই পাননি। যে কয়েকজন আছেন, তাঁদেরকেও যদি ঠিকঠাক তুলে ধরা না যায়, আখেরে কার লাভ! রায় বিজেপির দিকে যাবে, সে তো জানা কথাই। কিন্তু বিতর্কটা ভবিষ্যতের দলিল হিসেবে থেকে যাবে। এখন ইউটিউবের দৌলতে সহজে সেইসব বিতর্ক দেখা যায়। সেইসব ভিডিও লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেন। ভবিষ্যতে যাঁরা এই বিতর্ক দেখবেন, তাঁদের কাছে যুক্তির লড়াইয়েও অনেকটা পেছনেই থেকে যাবেন বিরোধীরা। অথচ, এই লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার সুযোগ ছিল। এই পিছিয়ে থাকাটা স্রেফ একটা ব্যর্থতা।