প্রসূন মিত্র
গোটা দেশে যেন উৎসবের আবহ। হঠাৎই যেন পুলিশকে ঘিরে ধন্য ধন্য রব। এতদিনে মনে হচ্ছে, তাঁরা যেন বীরের কাজ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। তেলেঙ্গানার ঝড়ে সবকিছুই যেন চাপা পড়ে গেল।
প্রথমেই বলা যাক, এনকাউন্টারের এই গল্পটি একেবারেই কাঁচা চিত্রনাট্য। পুলিশ বিভিন্ন ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে। কিন্তু কখনও শুনেছেন মাঝরাতে সেই পুনর্নির্মাণের ঘটনা ঘটছে।পুলিশ তাঁদের ধরে নিয়ে গেল। যাদের ধরে নিয়ে গেল, তাদের হাতে অস্ত্র থাকার কথা নয়। চারজনই একসঙ্গে পালাতে চাইল? এত এত পুলিশ। সেখানে ওই চারজন যে পালাতে পারবে না, সেটা তারাও খুব ভাল করেই জানত। সেটা জানার পরেও তারা পালানোর ঝুঁকি নেবে?
ঘটনার পুনর্নির্মাণের অনিবার্য শর্ত হল, ভিডিওগ্রাফি।এক্ষেত্রে সেই ভিডিও হয়েছিল তো ? সেই ভিডিও পুলিশ দেখাতে পারবে? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই ভিডিও দেখা যাবে না।
সহজ কথা, পুলিশ যেভাবে এনকাউন্টার করে, এক্ষেত্রেও সেভাবেই করা হয়েছে। এটা নিছক পুলিশের সিদ্ধান্ত, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। সর্বোচ্চ স্তর থেকে নির্দেশ না এলে পুলিশের পক্ষে এমনটা করা সম্ভব নয়। এটা একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।আর স্বয়ং প্রশাসনের প্রধান যদি এমন নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তবে তদন্তের কী রায় হবে, সহজেই অনুমেয়।
পুলিশের কী ট্র্যাজেডি। গোটা দেশ ধন্য ধন্য করছে। আবির খেলছে। পটকা ফাটাচ্ছে। মিষ্টি বিলি করছে। কিন্তু পুলিশ কৃতিত্ব দাবি করতে পারছে না। বলতে হচ্ছে, ওরা অস্ত্র ছিনিয়ে পালাতে চেয়েছিল। তাই পাল্টা গুলি চালাতে হয়েছে। পুলিশকর্তাদের বলতে হচ্ছে, এই ঘটনার তদন্ত হবে। কিন্তু এই সংযম কদিন থাকবে? যে কোনওদিন কেউ একজন কৃতিত্ব নিয়ে ফেলবেন। কী জানি, এটা প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব, কেউ কেউ এমনটাও দাবি করে বসতে পারেন। পেটোয়া চ্যানেলগুলি হয়ত প্রধানমন্ত্রীর ঢাক পেটাতে শুরু করবে।
মোদ্দা কথা, এই এনকাউন্টার নিয়ে এখন ধন্য ধন্য রব উঠবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিচারের আগে এটাই যদি প্রবণতা হয়ে দাঁড়ায়, তখন দু হাত তুলে সমর্থন করতে পারবেন তো? এর জেরে জায়গায় জায়গায় আবার গণপিটুনির হিড়িক পড়ে যাবে না তো? বিচার ব্যবস্থার প্রতি, প্রশাসনের প্রতি কী পরিমাণ অনাস্থা তৈরি হচ্ছে, সেই আত্মসমীক্ষা কি হবে? ধন্য ধন্য রবে ভেসে না গিয়ে বিচার বিভাগ বরং আয়নার সামনে দাঁড়াক।