ইন্দ্রনীল দত্ত
এ যেন এক একা মানুষের গল্প। নিজের সঙ্গে নিজের আড্ডা দেওয়ার গল্প। হরবোলা শিল্পী আপনমনে নানারকম ডাক ডেকে চলেন। আগে টুকটাক প্রোগ্রামের বরাত পেতেন। ইদানীং বাজার খুব খারাপ। একাকীত্বই সঙ্গী। সঙ্গে উপেক্ষা। বিরক্ত হয়ে বউ ছেড়ে পালিয়েছে। কাজের মাসি মুখ ঝামটা দিয়ে যায়। পাড়ার ছেলেরা পেছনে লাগে। প্রতিবেশী এসে জ্ঞান দিয়ে যায়। সবকিছুই নীরবে হজম করে চলে সেই হরবোলা শিল্পী।
সেই মানুষটার জীবনেই এল আমূল পরিবর্তন। শুধুমাত্র একটা চেয়ারই (কেদারা) যেন বদলে দিল মানুষটাকে। তখন মেজাজটাই তো আসল রাজা। নিজেকে যেন জমিদার মনে হতে লাগল। সমস্ত উপেক্ষা যেন সুদ সমেত ফিরিয়ে দেওয়া। একটি কেদারা ও বদলে যাওয়া সেই মানুষটাকে ঘিরেই এই কেদারা। বিষয় হিসেবে অভিনব। একেবারে প্রথম ছবিতেই এরকম একটি বিষয়কে বেছে নিতে গেলে হিম্মৎ লাগে। সেই হিম্মৎটাই দেখিয়েছেন পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত।
নামটা চেনা চেনা লাগছে? যাঁরা বাংলা ছবির, বিশেষত বাংলা গানের খোঁজ রাখেন, তাঁদের কাছে নামটা অচেনা নয়। অনেক ছবিতেই সুর দিয়েছেন। এবার নিজেই নেমে পড়লেন ছবি পরিচালনার কাজে। প্রথম ছবিতে অনেকটাই বাজিমাত। জাতীয় পুরস্কার তো এলই। এই ছবি হল থেকে হয়ত উঠে যাবে। তবে হারিয়ে যাবে না।
মূল চরিত্রে কৌশিক গাঙ্গুলিকে পেলে পরিচালকের কাজ অনেকটাই সহজ হয়। কৌশিক বড় পরিচালক না বড় অভিনেতা। এই নিয়ে একটা জোরদার বিতর্ক চলতেই পারে। পরিচালক কৌশিককে অনায়াসেই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন অভিনেতা কৌশিক। এই ছবি আরও একবার তা বুঝিয়ে দিল।
সংলাপ বেশ জমজমাট। এর মূল কৃতিত্ব শ্রীজাত–র। কবি শ্রীজাতকে আমরা সকলেই চিনি। কিন্তু চিত্রনাট্যকার শ্রীজাত যেন নিজেকে নতুন করে চেনালেন। ইন্দ্রদীপের মতো শ্রীজাতেরও যেন নবজন্ম হল। এক সময় হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য লিখতেন সেলিম–জাভেদ জুটি। অন্য এক মাত্রায় পৌঁছে যেত সংলাপ। এমনকী গুলজারের চিত্রনাট্যও যেন সেলুলয়েডে এক কবিতা। বাংলার সেলুলয়েডে তেমনই কবিতা লেখা শুরু শ্রীজাতর। গভীরতা আছে। কিন্তু মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায় না। মনকে ছুঁয়ে যায়।
হলে হাতে গোনা কয়েকজন দর্শক। কী আর করা যাবে! ভাল কাজের কদর করার লোক সবসময়ই একটু কম। আশা করা যায়, পরিচালক হতাশ হবেন না। চিত্রনাট্যকার শ্রীজাতও অনেক সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়ে গেলেন।
