অযোধ্যার রায়ে এনআরসি আতঙ্ক ভ্যানিস

ময়ূখ নস্কর

কথায় বলে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ফেলা। আমাদের দেশের একদল লোকের সেই অবস্থা হয়েছে। অয্যোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কী কী সর্বনাশ হল তাই নিয়ে এরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে বুঝত এই রায়ে কত বড় লাভ হতে চলেছে।

আচ্ছা BJP যে দেশ জুড়ে NRC চালু করেছে বা করতে চাইছে সে কথা তো আপনারা শুনেছেন? এই তালিকায় নাম না থাকলে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’-দের ইহকাল পরকাল ঝরঝরে হয়ে যাবে। ভারত থাকবে শুধু সাচ্চা ভারতীয়রা। কিন্তু BJP-র এই বাড়া ভাতে ছাই দিতে পারে অযোধ্যার রায়।

masjid

একটু বুঝিয়ে বলি। ধরুন, আপনার পরিবার যে ১৯৭১ সালের আগে থেকে এই দেশে বাস করছে, তার প্রমাণ আপনি দাখিল করতে পারলেন না। এবার কী হবে? NRC তে আপনার নাম উঠবে না। ভারতের নাগরিকের বদলে আপনি অনুপ্রবেশকারী বলে পরিচিত হবেন। না হবেন না। অয্যোধ্যা মামলার রায় আপনার রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দেবে।

অবাক হচ্ছেন কেন? একটু ভেবে দেখুন। আচ্ছা অয্যোধ্যা মামলায় রামভক্তরা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন যে এটাই রামের জন্মভুমি? এটা যে রামের বাপঠাকুরদার জমি তার কোনও নথি কি তারা পেশ করতে পেরেছেন? পারেননি। কিন্তু আদালত বলেছে, এটা বহু বিশ্বাসের মানুষের প্রশ্ন। তাই এখানে রামের মন্দির হবে।

এই যুক্তি মেনে আপনি যদি বলেন, আপনার দখলে থাকা জমি আপনার ঠাকুরদার বাবার, এটা আপনার বিশ্বাস, আপনার পিসেমশাইয়ের, আপনার বউয়ের বিশ্বাস, শ্বশুরের বিশ্বাস, মাসতুতো শালীর খুড়তুতো ননদের বিশ্বাস, বন্ধুবান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশী, অফিস কলিগ, কাজের মেয়ে, গ্যাস ডেলিভারির ছেলে সবার বিশ্বাস, তখন সরকার সেটা অগ্রাহ্য করবে কী করে? বিশেষ করে BJPর মত দেশপ্রেমী দল তো এই যুক্তি মানবেই মানবে। কারণ আদালতের অবমাননা করার কথা তারা তো ভাবতেই পারে না।

যদি কেউ প্রশ্ন করে, এই বিশ্বাসের ভিত্তি কী? সটান বলে দেবেন, অযোধ্যায় যেমন রামলালা বিরাজমান, আপনার বাড়ির দেওয়ালেও তেমনি ঠাকুরদার বাবার ছবি বিরাজমান। আপনি প্রতিবছর ভুত চতুর্দশীর রাতে সেখানে বাতি জ্বালান।

যদি এই যুক্তিতে আপনার মন আশ্বস্ত না হয়, তাহলে অন্যভাবে ভেবে দেখুন। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড প্রমাণ করতে পারেনি যে, অযোধ্যার জমি তাদের। কিন্তু দীর্ঘদিন ওখানে মসজিদ আছে, নামাজ পড়া হয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্ট মসজিদ গড়ার জন্য অন্যত্র জমি দিতে বলেছে। আপনিও যদি ১৯৭১-র আগের নথি পেশ করতে না পারেন, নিশ্চিন্ত থাকুন। বলুন, নথি নেই তো কী হয়েছে? এই জমিতে আমার বাড়ি আছে, দীর্ঘদিন ধরে আমি এই বাড়িতে বসবাস করছি। আমাকে বাড়ি করার জন্য অন্যত্র জমি দিন।

হু-হু বাবা! বাবর ঐতিহাসিক চরিত্র। আদালত বলেছে রামচন্দ্র ঐতিহাসিক চরিত্র। ঐতিহাসিক চরিত্রদের জন্য একরকম আইন আর আমার-আপনার মত বর্তমান চরিত্রদের জন্য একরকম আইন, তা তো হতে পারে না! আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠালে রামলালাকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে হবে। পাঠাবেন তো?

 

বেঙ্গল টাইমসের বিশেষ পাহাড় সংখ্যা। এই ছবিতে ক্লিক করলেই অনায়াসে পড়ে ফেলতে পারেন।
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.