সোহম সেন
অশোক দিন্দা ম্যাচ জেতানো বোলিংয়ের জন্য কবার শিরোনামে এসেছেন? বিতর্কের জন্যই বা কতবার এসেছেন? দ্বিতীয় সংখ্যাটা বোধ হয় বেশি। মাঝে মাঝেই অদ্ভুত বিতর্ক বাঁধিয়ে ফেলেন। এবার হুমকি দিয়ে ফেলেছেন, বাংলার হয়ে আর নাকি রনজি ট্রফিতে খেলবেন না।
এমন ভান করছেন যেন, অন্যান্য রাজ্যগুলি তাঁকে পাওয়ার জন্য বসে আছে। যেন বিভিন্ন আইপিএলের দল তাঁর জন্য হাপিত্যেস করছে। মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে লড়াই করে উঠে এসেছেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু মিনিমাম শিক্ষাটুকু না থাকলে যা হয়! কাউকে সম্মান দিতে শেখেননি। বিচিত্র সব অঙ্গভঙ্গি করেন। এর তার নামে যা পারেন, বলে যান।
আসলে, ক্রিকেট খেলতে হলে ক্রিকেটের পরম্পরাটা তো বুঝতে হয়। ফলে, তাঁর কাছে কে সোবার্স, কে গাভাসকার! কেই বা কপিলদেব, কেই বা রিচার্ড হ্যাডলি! হয়ত বলে বসবেন, কপিলের থেকে আমার বলে জোর বেশি। হয়ত বলে বসবেন, কপিল কখনও আইপিএলে চান্স পায়নি। আমি পেয়েছি। তাই আমি কপিলের থেকে বড় বোলার।
একে শিক্ষাদীক্ষা নেই। তার ওপর হাতে হঠাৎ করে কিছু কাঁচা টাকা চলে এসেছে। মাথা ঠিক রাখা মুশকিল। অনেকদিন ধরেই নিজেকে বিরাট কেউকেটা ভাবতে শুরু করেছেন। যেন তিনি না খেললে, বাংলার ক্রিকেটের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। নিয়মিত অনুশীলনে আসেন না। এর জন্য অনুশোচনাও নেই। ভাবখানা এমন, আমি আবার কী প্র্যাকটিসে আসব? আমি ম্যাচে খেলব, এটাই যথেষ্ট। কোচ, অধিনায়ককে পাত্তা দেন না। নানা বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করেন।
একটা সময় নিশ্চয় ভাল বোলিং করেছেন। কয়েকটা ম্যাচও জিতিয়েছেন। কিন্তু সেই দিন্দা এখন নিছকই অতীত। পাঁচ বছর আগের জায়গায় তিনি নেই। না ফিটনেসে, না পারফরমেন্সে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচকরা তাঁকে দলে রাখেননি। হ্যাঁ, বাদ দেওয়ার আগে তাঁকে জানানো যেতে পারত। দিন্দার এই ক্ষোভটা সঙ্গত। কিন্তু যেভাবে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ার ফাঁপা হুমকি দিয়ে চলেছেন, সেটাকে বেশি আমল না দেওয়াই ভাল। অন্য রাজ্যে গেলেও বিশেষ সুবিধে হবে বলে মনে হয় না। ছোটখাটো রাজ্যে গেলে (যারা ক্রিকেটে কুলীন নয়), হয়ত খেলার সুযোগ পেতে পারেন। কিন্তু যে সব রাজ্য রনজিতে শক্তিশালী, সেখানে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবেন কিনা ঘোর সন্দেহ। পেলেও কয়েকমাস। তারপর সেখান থেকেও বাদ পড়তে হবে।
এই সহজ সত্যিটা অশোক দিন্দা বুঝতে পারছেন না। কথায় কথায় যাঁরা বাংলা ছাড়ার হুমকি দেন, তাঁদের ধরে রাখার উদ্যোগ না নেওয়াই ভাল। বাইরের দুনিয়াটা কতটা অনিশ্চিত, দিন্দাদের একটু বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।