সোহম সেন
হ্যাঁ, এটা সৌরভ গাঙ্গুলিদেরই জায়গা। দিনের পর দিন আমরা আওয়াজ তুলে গেছি, ক্রীড়া প্রশাসনে ক্রীড়াবিদরা কেন আসবেন না? কেন সব জায়গায় রাজনীতির লোকেরাই ছড়ি ঘোরাবেন? স্বাধীনতার পর থেকে এই প্রথম কোনও প্রাক্তন অধিনায়ক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষপদে এলেন। এরপরেও আমরা যত না খুশি, তার থেকে বেশি প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে হাজির হয়েছি। এই হল বাঙালি। যথার্থই কাঁকড়ার জাত।
কেন অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করতে হল? নিশ্চয় কোনও রাজনৈতিক রফা হয়েছে। সভাপতি হতে গিয়ে অমিত শাহর ছেলেকে সচিব মানতে হল। তিনি ক্রিকেটের কী বোঝেন? সৌরভ কি তাহলে বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন? এমন কত প্রশ্ন। আরে বাবা, সৌরভ এত বোকা নন। অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক হল মানেই তিনি বিজেপি শিবিরে চলে গেলেন এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বছর চারেক আগের কথা। জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর সিএবির দায়িত্বে কে আসবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। মূলত মমতা ব্যানার্জির হস্তক্ষেপে সৌরভই সিএবি–র সভাপতি হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ উচিত হয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে সঠিক লোককেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সৌরভ যে দক্ষ প্রশাসক, এ নিয়েও কোনও মহলেই কোনও সংশয় নেই। চার বছরে সিএবিতে এমন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন, যা আগে দেখা যায়নি।
সৌরভ কি তৃণমূল হয়ে গেছেন? তৃণমূলের সভায়, মিছিলে কখনও তাঁকে দেখা গেছে? তিনি কি একবারও বলেছেন তৃণমূলকে ভোট দিন। সৌরভ আছেন সৌরভেই। শোনা যায়, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে স্বয়ং মোদি তাঁকে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এমনকী অন্য রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় জিতিয়ে এনে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতিও ছিল। কিন্তু সেবারও সৌরভকে রাজি করানো যায়নি। সৌরভ জানেন, তাঁকে কী করতে হয়, কী করতে নেই।
অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক না করতে হলে হয়ত ভাল হত। কিন্তু কী আর করা যাবে! রাজনীতি নানা জায়গায় নানাভাবে ঢুকে আছে। সৌরভ না হলে অমিত–পুত্র জয় শাহ সভাপতি হয়ে যেতেন। ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে সেটা কি বেশি ভাল হত! পদ্ধতি নিয়ে হয়ত প্রশ্ন আছে, কিন্তু সৌরভ যে যোগ্যতম, এ নিয়ে তো সংশয় নেই।
তাই, অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে যতই জল্পনা হোক, নিশ্চিত থাকুন, বিজেপির হয়ে তিনি প্রচারও করবেন না। ভোটেও দাঁড়াবেন না। এবং, এটুকুও নিশ্চিত থাকতে পারেন, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও আগের মতোই থাকবে। কারণ, এই ভারসাম্যটাও সৌরভ বোঝেন। যিনি একসঙ্গে দেবাশিস দত্ত ও গৌতম ভট্টাচার্যকে সামলেছেন, যিনি শরদ পাওয়ার ও ডালমিয়াকে একসঙ্গে সামলেছেন, যিনি কুম্বলে ও হরভজনকে সামলেছেন, শচীন ও রাহুলকে সামলেছেন, তিনি মমতা আর অমিত শাহকেও দিব্যি সামলাতে পারবেন।