অর্কপ্রভ ব্যানার্জি
কয়েক বছর ধরে রাজ্যে এক নতুন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিসর্জনের কার্নিভাল। এতে নাকি সারা বিশ্বের কাছে বাঙালির মুখ আরও উজ্বল হচ্ছে। বাংলার সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। দেশ বিদেশের লোক ধন্য ধন্য রব তুলেছে। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বলে ফেলছেন, এতে বড় বড় শিল্পপতিরা আসবে। তারা প্রচুর লগ্নি করবে।
কার প্রদর্শনী, সেটাই বোঝা গেল না। গোটা কাণ্ডজুড়ে একজনকেই তুষ্ট করার চেষ্টা। একজনই মধ্যমণি হয়ে বসে রইলেন। সমস্ত ঠাকুর এসে যেন তাঁর সামনেই নতজানু হল। বিভিন্ন প্যান্ডেলের প্রতিমা যেন লাইন দিয়ে তাঁকে দর্শন দিতে এসেছে। একেকটি পুজো কমিটির তিন মিনিটের ছোট্ট অনুষ্ঠান। সেটাও সেই তাঁর সামনে এসেই। বাকি যাঁরা অতিথি, তাঁরা অনেকটাই দূরে। তাঁর চেয়ারের পাশে অন্য কোনও চেয়ার থাকবে না। আর সাধারণ দর্শকরা কতটা দেখতে পেলেন, তাঁরাই জানেন। তাঁরা হয়ত আফশোস করছেন, এর থেকে টিভিতে দেখলে অনেক ভাল হত।
মন্ত্রী–সান্ত্রীরা না হয় জোহুজুরের দল। কিন্তু রাজ্যপাল! তাঁকেও সারাক্ষণ একবারও দেখা গেল না। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান এসেছেন। তাঁকে এভাবে হেনস্থা করার কোনও দরকার ছিল! তিনি যে কোথায় বসে আছেন, কেউ জানতেও পারল না। অ্যাঙ্করদের কণ্ঠে ঘনঘন মুখ্যমন্ত্রীর জয়ধ্বনি। পাইকারি হারে ‘অনুপ্রেরণা’র ফুলঝুরি। অথচ, রাজ্যপালের মতো মানুষ আছেন, চার ঘণ্টা ধরে অ্যাঙ্করদের কথা শুনে বোঝাই গেল না! টিভি সম্প্রচারের দায়িত্বে রাজ্য সরকার স্বয়ং। সেই ফুটেজই সব টিভি চ্যানেলকে দেখাতে হবে। সেখানেও শুধু একজনকেই দেখানোর নির্দেশ। অন্য কোনও দিকে ক্যামেরা ঘোরানোর উপায় নেই। যদি উপযুক্ত সম্মান দিতে না পারবেন, তাহলে রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানানোর কী দরকার ছিল? যেহেতু তিনি সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন, তাই সরকারি অনুষ্ঠানে ডেকে এনে তাঁকে উপেক্ষা করতে হবে, এ কেমন শিষ্টাচার!
কী অদ্ভুত একটা সার্কাস। বিসর্জনের কার্নিভালের নামেও কী নির্লজ্জ আত্মপ্রচার। এতে যে ভাবমূর্তি এতটুকুও উজ্জ্বল হয় না, এটুকু বোঝার মতো বোধবুদ্ধিও নেই! কত খরচ এই কার্নিভালের? কোনও হিসেবে নেই। শুধু হোর্ডিং আর বিজ্ঞাপন বাবদ যে টাকা খরচ হয়েছে, সেই অঙ্কটাই ভয়ঙ্কর। ফেসবুকে একটা দারুণ পোস্ট চোখে পড়ল। যে রাজ্যে একটা তৈরি হয়ে যাওয়া কারখানাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে উৎসব করা হয়, সেই রাজ্যে বিসর্জনই কার্নিভাল। এত এত পুজোর ফিতে কাটা হল। কয়েকটা কারখানার ফিতে কাটতে পারলে ভাল হত না?