সৌরভকেও মুচলেকা দিতে হয়!‌

স্বরূপ গোস্বামী

মুচলেকার এই সংস্কৃতি থেকে সৌরভ গাঙ্গুলিরও মুক্তি নেই। কী রাজ্য, কী কেন্দ্র, সব জায়গায় মুচলেকার এক অদ্ভুত সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আমি তোমার পাশে তখনই থাকব, যদি তুমি আমার পাশে থাকো। এই ফর্মুলাতেই বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি।

কোনও সন্দেহ নেই, এই পদে সৌরভ যথেষ্টই যোগ্য। যে নামগুলি আলোচিত হচ্ছে, সেইসব নামের নিরিখে বিচার করলে যোগ্যতম বলতেও দ্বিধা থাকার কথা নয়। সৌরভ যে বোর্ড সভাপতি হবেন, এই দেওয়াল লিখনটা অনেক আগে থেকেই পরিষ্কার ছিল। কিন্তু তার জন্য এতবড় মুচলেকা দিতে হবে, সেটা বোধ হয় তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি।

sourav10

সহজ কথা, শাসক দলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাউকে সভাপতি করা যাবে না। আরও স্পষ্টভাষায় বললে, কে সভাপতি হবেন, ঠিক করবেন অমিত শাহ। ঠিক যেভাবে সিএবি–‌তে সৌরভ সভাপতি হবেন কিনা, ঠিক করে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সিএবি–‌র সভাপতি ঘোষণা হয়েছিল নবান্ন থেকে।
কয়েকদিন আগেই সিএবি–‌তে নির্বাচনের আবহ ছিল। এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হয়েছিলেন সৌরভ। অন্য কোনও মনোনয়ন পড়েনি। কারণ, সবাই জানতেন, সৌরভের পাশে মুখ্যমন্ত্রী আছেন। ভাগ্যিস সিএবি–‌র পর্বটা আগে হয়ে গেছে। আগে যদি অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক হত, বিসিসিআই তো দূরের কথা, সিএবি থেকে সৌরভকে সরাতে উঠে পড়ে লাগত নবান্ন। আর সিএবি যদি না থাকে, তাহলে তো বোর্ডের সভায় প্রতিনিধিত্বই করতে পারতেন না। সেক্ষেত্রে বোর্ড সভাপতির পদে মনোনয়নই দিতে পারতেন না।
বৈঠকের জন্য তাঁকে ছুটতে হল অমিত শাহর বাড়িতে। সেই বৈঠকে কী কী আলোচনা, হয়েছে তা বাইরে থেকে জানার কথা নয়। তবে, ধরে নেওয়াই যায়, সেই বৈঠকে এমন কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা সৌরভের পক্ষে এককথায় মেনে নেওয়া মুশকিল ছিল। আবার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতেও পারেননি। সৌরভ দীর্ঘদিন ধরেই বোর্ডের সর্বোচ্চ আসনে বসতে চেয়েছেন। এখন সুবর্ণ সুযোগ এসেছে তাঁর সামনে। আবার কবে সুযোগ আসবে, তখন পরিস্থিতি কেমন থাকবে, বলা মুশকিল। তাই সৌরভকেও ঝুঁকিটা নিতে হয়েছে। তিনিও বিলক্ষণ জানেন, বোর্ড সভাপতি হতে গেলে আমিত শাহদের শর্ত মেনেই হতে হবে। বড়জোর দরাদরি করে সেই শর্ত কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে।
কিন্তু সভাপতি হয়ে কী কী হারাতে পারেন সৌরভ?‌ ১)‌ সিএবি সভাপতির পদ ছাড়তে হবে। ২)‌ সিএবি থেকে সরে গিয়েও নিস্তার নেই। তাঁর নানা কমজকর্ম নিয়ে খুঁত ধরা, প্রশ্ন তোলা শুরু হবে। ৩)‌ রাজ্য সরকারের বিরূপ নজরে পড়তে হতে পারে। এখন থেকেই মমতা তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে বসতে পারেন। ৪)‌ কোথায় কী জমি নিয়েছেন, এসব নিয়ে অকারণ ঝামেলা পাকানো হতে পারে। ৫)‌ ইডেনে ম্যাচ আয়োজন করাও মুশকিল। রাজ্যের পুলিশ পাওয়া যাবে কিনা সংশয়। পূর্ত দপ্তর গ্যালারির ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে ঝোলাবে। ৬)‌ নিরাপত্তারক্ষা বা পাইলট তুলে নেওয়া হতে পারে। ৭)‌ ইডেনে সৌরভকে ব্রাত্য রাখার চেষ্টা হবে। ৮)‌ আই এস এলের দল অ্যাটলেটিকোকে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ৯)‌ দেখা গেল, বোর্ড সভাপতি হওয়ার পরেও এয়ারপোর্টে সৌরভকে বরণ করতে যাওয়ার লোক নেই। গেলে যদি মুখ্যমন্ত্রী রেগে যান!‌ ১০)‌ বাংলা কাগজ বা চ্যানেলেও হয়ত অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে গেলেন। সৌরভের কথা লিখলে যদি সরকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়!‌ ইতিমধ্যেই এই প্রবণতা শুরু হয়ে গেছে।

২০২১ তো অনেক দেরি। সৌরভ বিজেপির হয়ে প্রচার করবেন কিনা বা প্রার্থী হবেন কিনা, সেই সম্ভাবনাও আপাতত অনেক দূরে। ধরেই নিলাম, অমিত শাহ তাঁকে কোনও ‘‌কুপ্রস্তাব’‌ প্রস্তাব দেননি। ধরেই নিলাম, সৌরভকে কোনও মুচলেকাই দিতে হয়নি। কিন্তু মমতাকে সেকথা বিশ্বাস করাতে পারবেন?‌

সৌরভের সত্যিই শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। মমতার সৌজন্যে তিনি সিএবি–‌তে। আর বিজেপির সৌজন্যে তিনি বোর্ডে। এই ভারসাম্য কতদিন বজায় রাখতে পারেন, সেটাই দেখার।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.