সবাই বিক্রি! বিশ্বাস করতে মন চায় না

বাদশা মৈত্র

badsha moitraছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই বড়োদের কাছে একটা কথা শুনতাম, কখনো কথাও কিছু বলতে গেলে স্থান কাল পাত্র জ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বেশকিছু রাজনৈতিক নেতা, নেত্রীদের এই জ্ঞান লোপ পেলেও, এই সময়ের বেশকিছু গুনি মানুষ লেখক, অধ্যাপক, চিন্তাবিদ তারা কিন্তু ভীষণভাবেই এই স্থান কাল পাত্রের কথাটা মাথায় রেখে চলেন বা কথা বলেন,তাই তারা সব চেয়ে ভালো করে জানেন কি কারণে কোন সময়ে কোন কথাটা বলতে হয় আর কোনটা চেপে যেতে হয়। যদিও শুধু এই কারনে তাদের ব্যক্তিগত কাজের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের সৃষ্টির প্রতি মুগ্ধতা একটুও কমেনি, কখনো কমবে না। কিন্তু সেই শ্রদ্ধা অন্তরে রেখে, কিছু কথা তাদের না বললেই নয়। জাগরী বন্দোপাধ্যায় ঠিক ক’জন বামপন্থীদের মতিগতি দেখে বুঝেছেন যে লাল ঝণ্ডাদের সুদিন ফিরিয়ে আনতে তারা পদ্মফুলের গৃহ সজ্জায় ব্যস্ত? ঠিক ক’জন বামপন্থীর সংে কথা বলে বুঝেছেন এই রাজ্যের তৃনমূল অপশাসন দেখে তারা উল্লাসে ফেটে পড়ছেন?? তবে কি এস,এস,সি, টেট, কলেজ আ্যডমিশনে হাজার হাজার টাকা, নারদা আরও নানা দুর্নীতি চূড়ান্ত অপশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন থেকে শুরু করে শেষঅব্দি কোর্টে গিয়ে আইনের যে লড়াই বামপন্থীরা লড়ছেন, এই সময় দাঁড়িয়ে,বিশেষ করে কাল যেখানে নির্বাচনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন,ঠিক তার আগের মুহুর্তে বামপন্থীদের লড়াইকে অস্বীকার করাটা, স্থান কাল পাত্র ভেদেই কি করা হচ্ছে? যে রাজ্যে নিরিহ কিছু প্রশ্ন করার অপরাধে, কলেজ ছাত্রী থেকে শুরু করে গরিব কৃষকে মাওবাদী বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়,কার্টুন ফরোয়ার্ড করলে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেই রাজ্যের কিছু নামি লেখক বুদ্ধিজীবিদের কেও প্রশ্ন করলে তাকে কোনবাদি হবে জানি না তবে প্রশ্ন উঠবে এটা আজ বাস্তব, নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনেই আগামীদিনে আরও প্রশ্ন উঠবে। কোন এক বিশেষ প্রয়োজনে কিছু মানুষ আজ এই সব অপ্রিয় সত্যকে দূরে সরিয়ে রাখেন।এসব নিয়ে তারা কিছুই লেখেন না বা লিখলেও তা ওই “ইতি গজ” গতের কিছু শব্দ দিয়ে দায় সাড়েন, দিদির বিরুদ্ধে সিপিএমের কথা শুনে উনি বুঝতে পারছেন না যে লড়াইটা আসলে দিদির বিরুদ্ধে নাকি দাদার বিরুদ্ধে? কিন্তু দিদি যখন প্রতিটা মঞ্চ থেকে নিয়ম করে, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যশ্রী জাতীয় নানা কথা টানা বলে চলেন কি আপনার একবারও বুঝতে অসুবিধা হয় নির্বাচনটা আসলে এই রাজ্যের নাকি এই দেশের?হয়না শুধু বামপন্থীরা গলা তুললেই সব গুলিয়ে যায়… জানি এই রাজ্যে বিজেপির উত্থানের পিছনে বামপন্থীদের ভূমিকা দেখতে পাছেন তিনি কি জানেন বিজেপির আতুর ঘর যে আর,এস,এস সেই আর,এস,এস পরিচালিত স্কুল আজ এই রাজ্যে কয়েকশো?? তিনি কি জানেন এই কয়েকশো স্কুলের সিংহভাগের থেকেও বেশি স্কুলের অনুমোদন এই সরকারের আমলে দেওয়া হয়েছে। যিনি বামেদের বিষয়ে এতো খবর রাখেন তিনি কি জানেন বেশ কয়েক বছর ধরে নানা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ছাতার তোলায়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে নিয়ম করে নানারকম অস্ত্র বিদ্যা শেখানোর কাজ শুরু হয়েছে? প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছিল। বামপন্থীরা এই বিজেপির কথা বহুদিন ধরে বলে আসছেন। তাঁরা বার বার করে বলেছেন দিদি আর মোদির মধ্যে আসলে কোনও লড়াই নেই। আপনি বামপন্থীদের যখন এত খবর রাখেন, তখন এটাও জানা উচিত, বিগত পাঁচ বছরে রাজ্যসভায় বেশ কিছু বিল যা সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে সেইসব বিল নিয়ে রাজ্যসভায় বামপন্থীরা, কখনও কংগ্রেস কি ভূমিকা পালন করেছিল, আর এই রাজ্যের শাসকদের সেই সময় ঠিক কী ভূমিকা ছিল। আপনার কি মনে হয় না দেশের শাসকদের প্রতি তৃনমূল কংগ্রেসের প্রচ্ছন্ন এই সমথর্ন ও সহযোগিতায় তাদের কয়েকজন সংসদকে নারদা কান্ডের পরেও পার্লামেন্টের এথিকস কমিটির মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে.. এটা কি আজ না বোঝার কোনও কারণ আছে, আগামীদিনে যদি বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসে দাদা দিদির ভোটের এই লড়াইকে ভুলে গিয়ে তখন আবার তৃনমূল–‌বিজেপি তাদের ন্যচারেল আলাইন্স ভাববে, যেটা বামপন্থীদের সম্পর্কে ভাবাটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়, অন্তত বিগত পাঁচ বছরের ইতিহাস তো তাই বলছে। তার আগে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ঘর করার কথা না হয় বাদই দিলাম। যদিও এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রশ্নে সেদিনের বিজেপির আজকের বিজেপির মধ্যে মৌলিক কোনও পার্থক্য আছে। সেদিনের মন্ত্রিসভার নানা সিদ্ধান্ত যার বিরুদ্ধে দিদি আজ নানা সময় নানা কথা বলেন সেই সব সিদ্ধান্তের অংশীদার ছিলেন আমাদের আজকের মুখ্যমন্ত্রী। কোনও এক অজানা কারণে এই সব ইতিহাস আপনারা আজ সযত্নে এড়িয়ে যান। বিজেপি আর তৃণমূল এর সম্পর্কটা ঠিক কতটা কাছের সেটা বোঝার জন্য ত্রিপুরার উদাহরণটি যথেষ্ট, প্রায় গোটা তৃণমূল দলটাই আজ সেখানে বিজেপি। আর এই রাজ্যে মুকুল রায়, অর্জুন সিং, বীরভূমের অনুপম, বাঁকুড়ার সৌমিত্র বাবুরা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আজ ভোটের প্রচারে বিজ্ঞাপনের দাপাদাপি আকাশে হেলিকপ্টার ওড়ানোর যে সংস্কৃতি, সেখানেও দাদা–‌দিদির ভীষণ মিল। এই রাজ্যের ছোট বড়ো মাঝারি প্রায় সব নেতা মন্ত্রীরা এখন পাশের জেলায় মিটিং করতে গেলেও হেলিকপ্টার ছাড়া ভাবতে পারেন না শুধু আজ নয়, ক্ষমতার ৩৪ বছরেও বামেদের সময় এই দৃষ্টান্ত ছিল কিনা বলুন স্পষ্ট করে, নিশ্চিই বলবেন না তখন হেলিকপ্টার আবিষ্কার হয়েছিল কিনা ভাবতে হবে। আজ যদি প্রশ্ন ওঠে ৭ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় থেকে এই সরকার কটা বন্ধ কারখানা খুলতে পেরেছেন যে তারা DES শাসনের কথা ভাবছেন তাহলেই আপনার মনে হবে বামপন্থীরা পদ্মবনে আশ্রয় নিচ্ছেন, তাই তো?? অর্থাত আপনি ঘুরিয়ে বামেদের চুপ করে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, আসন গুলো দিদি আর মোদি যাতে ভাগ করে নিতে পারেন।আপনি জানতে চেয়েছিলেন আজ যখন মেরুকরণের থাবা তার নখ বার করছে বামেরা তখন ককোন ভূমিকা পালন করছ? এটাই ভূমিকা আপনারা যাকে এই মেরুকরণের এক মাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে আপনাদের মহান দায়িত্ব সম্পন্ন করছেন বলে ভাবছেন বামপন্থীরা সেখানেই থেমে না গিয়ে এই মেরুকরণের বাকি কারণগুলো নিয়েও নিয়মিত বলছেন, আজ সেটাই হয়তো আপনাদের রাগের বড়ো কারণ, আপনারা ভুলে জান বা হয়তো ভুলে থাকতে চান আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই বাজারেও বিজেপি কি এতোদিনেও রামমন্দির তৈরী করতে পেরেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আর শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয় রাজ্যের অন্য মন্ত্রীর মুখেও একি কথা শুনেছি, ভুললে চলবে না এই রাজ্যে গণেশ পুজোর বারবারন্ত, রামনবমীর মিছিল জেলায় জেলায় হনুমান পুজো শুধু বিজেপির হাত ধরে বারেনি রাজ্যের শাসকদল একি ভাবে সেই খেলায় নাম লিখিয়েছেন।বামপন্থীর কয়েকশো বছরের ইতিহাস আপনার মতো মানুষদের মুখস্ত, চাইলে সন তারিখ উল্লেখ করে মুহুর্তে তাদের একেবারে কাছাখোলা করতে পারেন, ভোটের ঠিক আগের দিনেও সেই ঘটনার ব্যতিক্রম হলো না।দিদি আর মোদির তালে তাল ঠুকে আপনিও বামেদের এই নির্বাচনে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করলেন, স্থান কাল পাত্র বুঝেই করলেন।তবে জানতে ইচ্ছে হয় তারা যদি এতটাই অপ্রাসঙ্গিক হবে তবে আজকের দিনেও তাদের নিয়ে ভেবে কাগজের পাতা ভরালেন কেন?? বামেদের ভুত ভবিষ্যৎ সব আপনারা দেখতে পান অথচ রাজ্যের শাসকদলের ঘটমান বাস্তবের কোন দৃশ্যকি আপনারা দেখেও দেখতে পান না??বা হয়তো সেসব দৃশ্য দেখেও দেখা মানা। রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীদের ব্যপারটা বুঝি সত্যি বলছি আপনাদের বিষয়টা বুঝি না বিশ্বাস করতে মন চায় না যে আপনারাও আজ স্বাধীনভাবে ভাবতে লিখতে অক্ষম।হতাশ লাগে খুব… আপনাদের মতো মানুষদের উপর এখনো ভরসা রাখি,তাই আগামীদিনে ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ভিতরে রেখেই আরও প্রশ্ন নিয়ে আবারো আপনাদের মতো মানুষদের কাছে ফিরে আসবো। আমি এখনো বিশ্বাস করি কাউকে কাউকে কেনা গেলেও এই রাজ্যে সবাই এখনো বিক্রি হয়নি। ভাল থাকবেন।
(লেখাটি তিনি মোটেই বেঙ্গল টাইমসের জন্য লেখেননি। ‌সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত। এসব লেখা মূলস্রোত কাগজে থাকবে না। তাই বেঙ্গল টাইমসের মাধ্যমে যদি আরও কিছু মানুষের কাছে পৌঁছয়, সেই কারণেই এই লেখা প্রকাশিত হল।)‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.