আসল সমস্যা বোঝার ক্ষমতাই শিক্ষামন্ত্রীর নেই

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা নাকি এগিয়ে আসছে। এক দু দিন নয়, একেবারে আড়াই মাস। হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলের মাঝামাঝি। তার জায়গায় হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে। নিমেশে এমন একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়ে গেল।

এতবড় একটা সিদ্ধান্ত দুম করে নেওয়া যায়! শিক্ষামহলের মতামত নেওয়া কি জরুরি ছিল না? জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড কী বলল, তার নিরিখেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল! এর ফলে ছাত্রদের ওপর কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা ভেবেও দেখা হল না।

উচ্চ মাধ্যমিকের আগে বিরাট অংশের ছাত্রকে মেতে থাকতে হবে জয়েন্টের প্রস্তুতিতে। যাবতীয় পড়াশোনার ফোকাস থাকবে জয়েন্টের দিকে। সেই পর্ব চুকলে তবে উচ্চ মাধ্যমিকে মনোনিবেশ করতে পারবে সেই ছাত্র। এতে কি উচ্চ মাধ্যমিকের গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেল না! একটা বিরাট অংশের ছাত্রের কাছে উচ্চ মাধ্যমিকটা কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে গেল। মেধাতালিকার দৌড়ে এই ছাত্ররা অনেকটাই পিছিয়ে গেল।

joint entrance

যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, এই রাজ্যের অনেক ছাত্র নাকি ভিনরাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিট খালি থাকছে। আগে পরীক্ষা হয়ে গেলে, আগে ফল বেরিয়ে গেলে নাকি সেই ছাত্রদের আটকে রাখা যাবে।

নিজের অক্ষমতা ঢাকার কত চেষ্টা! ছাত্ররা কেন ভিনরাজ্যে যাচ্ছে, তা কি ভালভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে! শুধু আগে পরীক্ষা নিলেই ভিনরাজ্যে যাওয়ার স্রোত আটকে রাখা যাবে! তাহলে সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিট ভর্তি হয়ে যাবে তো ! দেরিতে রেজাল্ট, অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটা একটা কারণ হতেও পারে। কিন্তু এটাকেই একমাত্র কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।  বোঝাই যাচ্ছে, ঠিকঠাক আত্মসমীক্ষা করাই হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে, আসল সত্যিটা স্বীকার করা তো দূরের কথা, বোঝার ক্ষমতাও শিক্ষামন্ত্রীর নেই।

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নামে অধিকাংশ বেসরকারি কলেজে কার্যত সিট বিক্রি হচ্ছে। যাদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার মতো মেধা বা যোগ্যতাই নেই, টাকার বিনিময়ে তাদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। কলেজগুলিতে উন্নতমানের শিক্ষকেরও অভাব। যাকে তাকে দিয়ে অল্প টাকায় কাজ চালিয়ে নিলেই হল। ফলে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষক দিয়ে বোঝাই করা হয়েছে এই সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, কোনও নজরদারিও নেই। টাকা থাকলেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলার দেদার লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফল যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। পাঁচ বছর পর ডিগ্রিটা হয়ত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ছাত্ররা কিছুই শিখছে না। বড়সড় কোম্পানিতে চাকরিও হচ্ছে না। এইসব ইনস্টিটিউটের নাম শুনেই কোম্পানিগুলো বুঝে যাচ্ছে, ছাত্রর শিক্ষার নমুনা কেমন হতে পারে। ভাল কোনও প্রতিষ্ঠান কলেজ করতেও এগিয়ে আসে না। সরকারের ধামাধরা কিছু লোকই কয়েকটা তৃতীয় শ্রেণির কলেজ খুলে বসেছেন। উপরের চাকচিক্য দেখিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করেন। যারা বোঝার, তারা ঠিক বোঝে।

এ তো গেল পড়াশোনার দিক। কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ছে  ছাত্ররা। এইসব কলেজে ভাল কোনও কোম্পানি ক্যাম্পাসিংয়ের জন্য আসছে না। রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নেই। সরকার হাজার ঢাক পেটালেও শিল্পে বিনিয়োগ নেই। শিল্প সম্মেলনে ভাল ভাল কথা বলতে হয়। কিন্তু লগ্নিকারিরা জানেন, এখানে শিল্প বা কলকারখানা তৈরির অনুকূল পরিবেশ নেই। তাঁরাও মুখ ফিরিয়ে থাকেন। যেখানে চাকরির পরিবেশ নেই, যেখানে ক্যাম্পাসিং নেই, সেখানে ছাত্ররা মুখ ফেরাবেই।

এইসব রোগগুলি শোধরানোর চেষ্টা করাটা বেশি জরুরি। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের কি সেই সৎসাহস আছে যে তাঁরা এইসব কারণগুলি তুলে ধরবেন! এমনকী সরকারের দাক্ষিণ্যে সস্তায় জমি পাওয়া সেই কলেজ কর্তৃপক্ষেরও কি সেই সৎসাহস আছে যে তাঁরা আসল সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে পারবেন! স্তাবকতার এক অদ্ভুত কোরাস চারিদিকে। আসল সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে তাই অন্যদিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। পরীক্ষার সময় এগিয়ে আনলেও আসল সমস্যাগুলো থেকেই যাবে। কলেজের সিটগুলোও তাই ফাঁকাই পড়ে থাকবে। মাঝখান থেকে গিনিপিগ করা হল লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.