সৌম্যজিৎ চৌধুরি
একটা নির্ভেজাল ছুটির দিন। কীভাবে কাটাবেন? মোবাইল তো রোজই ঘাঁটেন। একটা দিন না হয় একটু অন্যভাবে কাটুক। কোথায় যাবেন?
একদিনের বা একবেলার সফরে তো আর উত্তরবঙ্গে যাওয়া যায় না। একা একা দীঘা, মন্দারমণি, বকখালিও যাওয়া মুশকিল। তার থেকে এক কাজ করুন। শহরের নানা রাস্তায় ছুটে চলছে এসি বাস। এমনই একটা বাসে উঠে পড়ুন। এই গরমের হাত থেকে বাঁচতে এসি বাস চমৎকার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। গড়িয়া থেকেও উঠতে পারেন, ধর্মতলা থেকেও উঠতে পারেন। টালিগঞ্জ থেকেও উঠতে পারেন। হাওড়া বা সাঁত্রাগাছি থেকেও উঠতে পারেন। এমন নানা জায়গা থেকেই ঘনঘন এয়ারপোর্টের বাস আছে। উঠে পড়লেই হল।
কখনও হয়ত নিজে বিমান ধরতে গেছেন। গিয়েই সোজা ঢুকে পড়েছেন। কখনও কাউকে ছাড়তে বা আনতে গেছেন। কিন্তু সেভাবে ঘুরে দেখা হয়নি। সেভাবে সময় কাটানো হয়নি। একা একাই বা কোনও বন্ধুকে নিয়ে উঠে পড়ুন এসি বাসে। চলে আসুন এয়ারপোর্ট। বাইরেটা একটু ঘুরে নিন। ইচ্ছে হল, কিছু খেয়ে নিন। রেস্তোরাঁ যেমন আছে, তেমনি পার্কিং এরিয়ারর দিকে গেলে টুকটাক অনেক দোকানও আছে। ওপরতলাটা ডিপার্চার। নিচের তলায় অ্যারাইভাল। আগে না হয় ডিপার্চারেই ঘুরে নিন। সেখানেও দুটো ভাগ। একদিকে ডোমেস্টিক, অন্যদিকে ইন্টার ন্যাশনাল। দুটো দিকেই একবার ঢু মারুন। কে বলতে পারে, হয়ত চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতেও পারে। ছেলে বিদেশে যাচ্ছে, গর্বিত বাবা–মা ছাড়তে এসেছেন। মুখে হাসি, ভেতরে একটা চাপা কান্না। এমন কত মুহূর্ত অপেক্ষা করে আছে আপনার জন্য। শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকুন। আবার ডোমেস্টিকের ক্ষেত্রে হয়ত কেউ ছাড়তে আসেনি। কেউ সকালে যাচ্ছেন দিল্লি বা মুম্বই, রাতেই হয়ত ফিরে আসবেন। কেউ এতই ঘনঘন যান, যেন ডেইলি প্যাসেঞ্জার। কে আর রোজ রোজ ছাড়তে আসবে! আবেগঘন মুহূর্ত পাবেন ইন্টার ন্যাশনালে।
নিচের তলায় নেমে আসুন। অ্যারাইভাল। কত লোক বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা বিমানগুলোর দিকে তাকান। কেউ আসছেন দশ বছর পর। কারও হয়ত বিয়ে হয়ে গেছে, ফিরছেন বিদেশি বউকে নিয়ে। বাইরে অপেক্ষারত বাড়ির লোকজন। নাতি হওয়ার পর থেকে দাদু–ঠাকুমার চোখেই দেখা হয়নি। সে হয়ত নিজের দেশে প্রথম আসছে ৫ বছর পর। দাদু–ঠাকুমার প্রথম নাতি–নাতনি দর্শন, এই এয়ারপোর্টেই। কারও বাবা এসেছেন, মা আসেননি। কারও শ্বশুর–শাশুড়ি এসেছেন, কী জানি, সেই অভিমানে হয়ত মা–বাবা আসেননি। এমন কত টুকরো টুকরো মুহূর্ত। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সময় পেরিয়ে যাবে। চাইলে টিকিট কেটে লবিতে ঢুকে পড়তেও পারেন। আরও একটু কাছ থেকে কিছু কিছু মুহূর্ত দেখতে পাবেন। সবমিলিয়ে মন্দ লাগবে না। যখন ইচ্ছে হবে, ফের চলে আসুন এসি বাসের স্ট্যান্ডে। নানা রুটের ফাঁকা বাস দাঁড়িয়ে আছে। ঘন ঘন ছাড়ছে। যে কোনও একটায় উঠে পড়লেই হল।
(আপনিও এরকম নানা জায়গার হদিশ দিতে পারেন। আপনার ঘুরে আসার অভিজ্ঞতাও মেলে ধরতে পারেন। আপনার লেখা পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসে। )