সরল বিশ্বাস
প্রশাসনিক বৈঠক মানেই যেন একটা সস্তা গিমিক। রাজ্যে সবাই বোকা, তিনি একা বুদ্ধির অধিকারী। অফিসার, মন্ত্রী— কেউ কাজ করে না। কেউ কোনও খোঁজ রাখে না। তিনি একাই সব ব্যাপারে খোঁজ রাখেন, এরকম একটা ধারনা তুলে ধরার চেষ্টা হয় এই সব লোকদেখানো বৈঠক থেকে। সবকিছুই টিভির সামনে। অর্থাৎ, যাঁকে বলছেন, আসলে তাঁকে বলছেন না। শোনাতে চাইছেন বাকিদের। একজন মুখ্যমন্ত্রী দিনের পর দিন এই গ্যালারি শো করে চলেছেন। আর মিডিয়াও ধন্য ধন্য করেই চলেছে।
এবার তিনি বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। বোঝাতে চাইলেন, বিডিও খোঁর রাখেন না, পঞ্চায়েত খোঁজ রাখে না। কিন্তু তিনি খোঁজ রাখেন। দিদিকে বলো–তে যে সব অভিযোগ এসেছে, তার কয়েকটি তুলে ধরা হল। প্রথমত, দিদিকে বলো একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। সেখান থেকে অনেকে সমস্যা জানাতেই পারেন। সেগুলো জেনে কৃতিত্ব নেওয়ার কী আছে! দিদিকে জানাতে হয়, কারণ বাকিদের জানিয়ে কাজ হয় না। তিনি নিজেও এই ছবিটাই তুলে ধরতে চান। বাকি সবাইকে অপদার্থ প্রমাণ করাটা তাঁর বহুদিনের অভ্যেস।
এবার ধমক দিলেন পুলিশকে। কারণ, পুলিশ নাকি বিরোধীদের ধরছে না। পুলিশ নাকি তৃণমূলের নামে নালিশ হলে ধরছে। কে মুখ্যমন্ত্রীকে এমন তথ্য দিলেন, কে জানে! বোঝাই যাচ্ছে, তিনি এখনও স্তাবকদের বৃত্ত ছেড়ে বেরোতে পারেননি। এখনও যে যা বলছে, তাই বিশ্বাস করে চলেছেন। গোটা রাজ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে শাসকদলের তাঁবেদারির অভিযোগ। সবকিছু এতটাই দিনের আলোয় ঘটছে যে, আলাদা করে কোনও প্রমাণ লাগে না। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী কিনা বলছেন, পুলিশ তৃণমূল কর্মীদের ধরছে! তাও একটা সরকারি মঞ্চ থেকে! এরপর পুলিশ চক্ষুলজ্জার কারণে যেটুকু নিরপেক্ষ থাকছিল, আর সেটাও থাকবে না। বরং, মুখ্যমন্ত্রীর বলা উচিত ছিল, পুলিশ যেন পক্ষপাতিত্ব না করে। পুলিশ যেন বিরোধীদের অভিযোগকেও গুরুত্ব দেয়। তার বদলে তিনি পুলিশকে প্রকাশ্যে বার্তা দিলেন, তৃণমূলের কথা শুনেই চলতে হবে। শুধু পুলিশের কাছে নয়, এই বার্তা দলের নিচুতলাতেও চলে গেল। তাঁরাও বুঝে গেলেন, পুলিশকে ধমক দিয়ে বললেই শুনবে।
না, তিনি শোধরাবেন না। তাঁকে শোধরানো প্রশান্ত কিশোরের ঠাকুরদাদারও কম্ম নয়।