রক্তিম মিত্র
যে বিতর্ক অনায়াসেই এড়ানো যায়, সেই বিতর্ককে টেনে আনলে বিড়ম্বনা আরও বাড়ে। এই সহজ সত্যিটা অনেকেই মাঝে মাঝে ভুলে যান। খারাপ সময়ে আরও খারাপ পরিস্থিতি ডেকে না আনাটাই বিচক্ষণতার পরিচয়। অথচ, এই কঠিন সময়েও সেই বিচক্ষণতার অভাব বড় বেশি প্রকট হয়ে উঠছে।
এবারের বিষয় প্রয়াত অনিল বসু ও বিতর্কিত সুশান্ত ঘোষ। অনিল বসুর স্মরণসভায় সুশান্ত ঘোষ যাবেন কিনা, তা নিয়ে বিতর্কের আবহ তৈরি হয়েছে। দলের কারও কারও যুক্তি, বহিষ্কৃত কোনও নেতার স্মরণসভায় দলের নেতার যাওয়ার নিয়ম নেই। কে, কবে এই নিয়ম বানিয়েছিলেন, জানা নেই। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই নিয়মকে খুব একটা বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না।
অনিল বসু দীর্ঘদিন দলের সাংসদ ছিলেন। তাঁর মন্তব্যে দু–একবার দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও কিন্তু অন্য শিবিরে আশ্রয় নেননি। দলকে আক্রমণ করেননি। দলের প্রতি অনুগতই থেকেছেন। এমনকী দলের সভা–সমিতিতেও গিয়ে দর্শকাসনে বসে থেকেছেন।
সেই মানুষটা মারা গেলেন। তাঁর ওপর এমন নির্মম আচরণ না দেখালেই চলছিল না! স্মরণসভা তো পার্টি আয়োজন করেনি। অন্য একটি সংস্থা আয়োজন করেছে। সেখানে বক্তা হিসেবে যদি সুশান্ত ঘোষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, এতে এত গেল গেল রব তোলার কী আছে!
এক বছর আগে সোমনাথ চ্যাটার্জি মারা গেলেন। তিনিও তো বহিষ্কৃতই ছিলেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তাঁকেও তো ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে তো দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর স্মরণসভাতেও দলের শীর্ষনেতারা গেছেন। ঠিকই করেছেন। তাহলে, অনিল বসুর ক্ষেত্রে অন্যরকম আচরণ কেন? যদি পাঁচ লাখ ভোটে জেতাটা অপরাধ হয়, তাহলে তো বলতে হয়, পুরো পার্টি মেশিনারিই জড়িত। কারণ, একা অনিল বসুর চেষ্টায় তো আর পাঁচ লাখ ভোটে জেতা যায় না। জেলা থেকে জোনাল, লোকাল থেকে ব্রাঞ্চ সবাইকেই একইসঙ্গে সক্রিয় থাকতে হয়েছে। দোষটা শুধু অনিলবাবুর ঘাড়ে চাপানোর পেছনে কোনও যুক্তি নেই। মমতা ব্যানার্জির প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তার জন্য তিরষ্কার করা হয়েছিল। সেটাই তো যথেষ্ট ছিল।
বহিষ্কার যুক্তিযুক্ত ছিল কিনা, সে বিতর্কে যাচ্ছি না। প্রথমত, এমন কোনও তিক্ততা তৈরি হয়নি যে তাঁর স্মরণসভায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, মৃত্যুর পর গঠনতন্ত্রের ওই নিষেধাজ্ঞা একটু শিথিল করাই যায়। সুশান্ত ঘোষ যদি সেই স্মরণসভায় যান, কী এমন ক্ষতি হয়ে যাবে! এর জন্য ফতোয়া জারি করার কোনও দরকার আছে! ব্যাপারটাকে একটু খোলা চোখে, খোলা মনে দেখা যায় না! পরের ধাপগুলো কী হতে চলেছে, এখনই অনুমান করা যায়। অতীতে এমন ভুলের নমুনা কম নেই। গোঁয়ার্তুমি করতে গিয়ে আরও একটা ভুলের সংখ্যা বাড়ানো খুব জরুরি!