‌সেলিম, উস্কানি দেওয়া কি আপনাকে মানায়!‌

সব্যসাচী কুণ্ডু

কমরেড সেলিম মানে হাজার হাজার কমরেড দের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া আশার স্ফুলিঙ্গ। কমরেড সেলিম মানে শাসক দলের ভুল ভ্রান্তি গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা। কমরেড সেলিম মানে সংসদে বুক চিতিয়ে লড়াই করা। যাঁর জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনে বিরোধীরাও তারিফ করে ওঠে। সেই কমরেড সেলিম যখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো সস্তার রাজনীতি করেন, তখন মন ঠিক সায় দেয় না।
কলেজের একটা সমাবর্তন অনুষ্ঠান যখন শিক্ষার আঙিনা ছাড়িয়ে রাজনীতির অলিন্দে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা সামলানোর দায়িত্বও আপনাদের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভারতের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এটা কি খুব ভাল একটা বিজ্ঞাপন?‌ এটাকে নিন্দা করা যায় না?‌

selim
সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নানা গুজব ছড়াচ্ছে। নানা রকম আজগুবি তথ্য ও ব্যাখ্যা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে বিশ্বাসও করছেন। কিন্তু সেইসব গুজবের ওপর ভর করে মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগ এনে বাজার গরম করা কি আপনাকে মানায়?‌ যাঁরা হেনস্থা করছে, অভিভাবক হিসেবে তাদের শাসন করতে না পারুন, অন্তত উস্কে দেবেন না। ওই হিংসা কিন্তু কোনও প্ররোচনা ছাড়াই হয়েছে। তারই পাল্টা হিসেবে বিদ্যার্থী পরিষদও ভাঙচুর চালিয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনার নিন্দা করতেই পারেন। তার আগে প্রথম ঘটনার নিন্দাও করা উচিত। একপেশে মনোভাব ছেড়ে খোলা মনে দেখতেই আমরা ভুলে গেছি। আমার মানেই সব ঠিক, আর অন্যের মানেই ভুল— এই সরলীকরণে সবাই কম–‌বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এতে সার্বিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলির ওপর মানুষের আস্থা কমে আসছে। একটা ছোট্ট ঘটনার থেকে এভাবে দাবানলের মতো আগুন ছড়িয়ে পড়লে তাতে কার লাভ?‌ ছোট ছেলেরা পরিণতি না বুঝেই অনেককিছু করে তোলে। তাদের শান্ত রাখাটা বড়দের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বই তো আপনার পালন করার কথা। হিংসার আগুনকে উস্কে না দিয়ে তাকে শান্ত রাখাই পরিণত রাজনীতিকের কাজ। সবপক্ষ যদি সচেতন হতেন, আরও সুনিপুণভাবে বিষয়টি সামাল দেওয়া যেত।
নানা কারণে বাংলার মানুষ আপনাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে। সেই কারণগুলো অনুসন্ধান করুন। আত্মসমালোচনা করুন। নিজেদের আবার গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করুন। দ্বিধাহীনভাবে হিংসার সমালোচনা করুন, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তা না করে, যদি জোর করে যুক্তি সাজাতে যান, সেটা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। যাদবপুর কাণ্ড হয়ত এটাই শিখিয়ে গেল।
**

(‌ওপেন ফোরাম। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। পাঠকের মুক্তমঞ্চ। এখানে নানা মত উঠে আসে। সুস্থ বিতর্কও চলে। নানা বিষয়ে আপনিও মতামত পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com)‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.