শৌভিক ঘোষাল
দেখুন মশাই, অত হিসেব করে ছাত্র রাজনীতি হয় না।
রাজনীতি হল পাকা মাথার খেলা। সেখানে বোড়ের এক ঘর। ঘোড়ার আড়াই ঘর। গজের কোনাকুনি। অনেক রকম চাল চলে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি হল নৌকার চাল। সোজাসুজি। যার কোনও চোরাগোপ্তা নেই।
যাঁরা পাকা মাথার রাজনীতি করতে চান, তাঁরা রাজ্যসভায় যান, লোকসভায় যান, বিধানসভায় যান। নিদেনপক্ষে ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন–এ যান। তাঁরা পলিটিক্যালি কারেক্ট থেকেই বিবৃতি দিন। আর যাঁরা সোজাসুজি পথ ধরে চলতে চান, তাঁরা বলুন ছাত্ররা যা করছে, বেশ করেছে। ঠিক করেছে কিনা জানি না। কিন্তু বেশ করেছে।
বাবুল সুপ্রিয় কে? বর্তমানে একজন রাজনৈতিক নেতা। কোন রাজনীতি? যে রোহিত ভেমুলার খুনি, গৌরি লঙ্কেশের খুনি। সেই রাজনীতির শরিকদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর হওয়ার কোনও দায়, কোনও ভেস্টেড ইন্টারেস্ট ছাত্রদলের থাকতে পারে না।
ছাত্রদল। নজরুলের যশোগাথায় উজ্জ্বল ছাত্রদল। ‘সাবধানীরা বাঁধ বাঁধে সব আমরা ভাঙি কূল।’ হ্যাঁ, যারা কূল ভাঙে, তারা চুলও টানে। কোনটা বড় অপরাধ? বাবুলের চুল টানা? নাকি গোরক্ষার নামে একের পর এক নরহত্যা করা? যদি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘বাবুলের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে ইউনিয়ন রুম ভাঙা হয়েছে, বেশ হয়েছে।’ তাহলে পাল্টা বলুন, ‘দেশজুড়ে নিরপরাধ মানুষের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে বাবুলের চুল টানা হয়েছে। বেশ হয়েছে।’ যাঁরা এ পথ মানেন না, তাঁরা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসুন, আইনসভা থেকে ওয়াক আউট করুন। ছাত্রদের পথ ছাত্ররা বুঝে নেবে।
দেখুন মশাই, ছাত্র থাকাকালীন সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজ অধ্যাপককে ঠেলে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বা আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক নেতাজি কখনই সেই কাজ করতেন না। কিন্তু ছাত্রবয়সের সুভাষের পক্ষে ওই কাজ ছিল সঠিক। কারণ, সাবধানীরা যখন বাঁধ বাঁধে, তখন ছাত্ররা কূল ভাঙে, আইন ভাঙে। বেশ করে।
অধ্যাপক নিগ্রকারী সুভাষের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, তার ব্যবস্থা করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। কারণ, তিনি ছাত্রদের আবেগ বুঝেছিলেন।
আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্রের প্রতিষ্ঠিত দলের নেতাদের ক্ষমতা নেই সেই আবেগ বোঝার। কারণ, সেই দলের কোনও নেতাই ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসেননি। তাই তাঁদের নবীন বরণের অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে ফ্যাশন ডিজাইনারকে আমন্ত্রণ করতে হয়। ইউনিয়ন রুমে হামলা চালানোর জন্য বাইরে থেকে লোক আনতে হয়।
ছাত্ররা কেন ক্ষ্যাপে, বাবুল কেন অপ্রিয় হয়, তা ওই দলের নেতারা কী করে বুঝবেন? আবেগ বলে কোনও বস্তু কি ওঁদের আছে? আবেগহীন যন্ত্রের দল।