বিপ্লব মিশ্র
শুরুতেই স্বীকার করি, আমি একজন বাম মনষ্ক। আমি সেই সাত শতাংশের দলে। আগামী দিনে যদি ভোটের হার আরও নেমেও আসে, তবুও আমি সেই দলেই থাকব। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটল, তা মেনে নিতে পারছি না। বাবুল সুপ্রিয়র আচরণ কেমন ছিল, পরে এবিভিপি কেন ভাঙচুর করল, সেই সমালোচনার জন্য এই নিবন্ধ নয়।আমি আত্মসমালোচনা করে বলতে চাই, বাম ছাত্রদের এই আচরণ একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না।
বাবুল সুপ্রিয় একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দি্তে। তাঁকে হেনস্থা করার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। বিক্ষোভকারীদের কথা যত শুনছি, তত অবাক হচ্ছি। একটাও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। অসমে এনআরসি—র জন্য বিক্ষোভ। জেএনইউ—তে বিদ্যার্থী পরিষদের আচরণের জন্য বিক্ষোভ। কাশ্মীরে কেন ৩৭০ ধরা, তার জন্য বিক্ষোভ। এগুলো কোনও শিক্ষিত লোকের যুক্তি হতে পারে! এনআরসি নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। কেন্দ্রের আরও নানা নীতির বিরুদ্ধে আপত্তি থাকতে পারে। তার জন্য বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্থা করতে হবে! এমন কুযুক্তিকে কখনই মেনে নেওয়া যায় না।
ঠিক উল্টোটা যদি হত! ধরা যাক, চীন সরকারের কোনও এক নীতি বা কাজের পাল্টা হিসেবে এখানে কেউ সূর্যকান্ত মিশ্রকে বা দিল্লিতে কেউ সীতারাম ইয়েচুরিকে ঘেরাও করল। ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াত! তৃণমূল বা বিজেপি মনষ্ক ছাত্রদের কাছে তেমন যুক্তিযুক্ত আচরণ প্রত্যাশা করি না। তাঁদের শিক্ষা ও যুক্তির বড়ই অভাব। সেটা প্রতিদিনের নানা ঘটনায় প্রমাণিত। কিন্তু বাম হিসেবে যাঁরা নিজেদের দাবি করেন, তাঁরাও যদি এমন বিক্ষোভে শামিল হন, সত্যিই কষ্ট হয়। রাগও হয়। এই একদল ছাত্র নামধারী অবুঝদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সত্যিকারের বাম কর্মীদের কাজটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দিল্লিতে ঋতব্রতরা একবার অমিত মিত্রকে হেনস্থা করেছিল বলে এই বাংলায় দেড় হাজার পার্টি অফিস ভাঙা হয়েছিল। অনেকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মানুষের সহানুভূতিটুকুও পাওয়া যায়নি।
ভাই, এই গুন্ডামির রাস্তা তোমাদের জন্য নয়। এর জন্য এক পাও এগোনো যায় না। দিনের শে্ষে অনেকটা পিছিয়ে যেতে হয়। এইসব আচরণের জন্য মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি দূরে সরে যাচ্ছো, সেটা কি ভেবে দেখেছ ? কেন এবিভিপি অফিস ভাঙল, কেন রাস্তায় টায়ার জ্বালালো, এখন এসব কাঁদুনি গেয়ে কোনও লাভ নেই। মানুষের কাছে যা খারাপ বার্তা যাওয়ার, চলে গেছে।
বাম নেতৃত্ব নিন্দা করেছেন। কিন্তু কোথাও একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থনও কারও কারও গলায় শোনা যাচ্ছে। যেটা নিন্দার যোগ্য, সেটাকে দ্ব্যর্থহীনভাষায় নিন্দা করতে বাধা কোথায়? যদি জোর গলায় বলা যেত, আন্দোলনের নামে, বিক্ষোভের নামে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে, তা আমরা কখনই সমর্থন করছি না, তাহলে মানুষের কাছে সঠিক বার্তা যেত। যেখানে এবিভিপির তেমন কোনও শক্তিই ছিল না, সেখানে তাদের প্রাসঙ্গিক করার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন কেউ কেউ। না, এদের বামপন্থী ভাবতে পারছি না।