বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: সিবিআই নাকি হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে রাজীব কুমারকে। কখনও হাইকোর্টে লম্বা সওয়াল জবাব। কখনও বাড়িতে গিয়ে নোটিশ দিয়ে আসছে। কখনও যাচ্ছে অফিসে। কোথাও না পেয়ে নবান্নে গিয়েও চলছে নোটিশ ধরানোর পর্ব।
তিনি কোথায়, কেউ নাকি জানেন না। তাঁর নাকি ফোন বন্ধ। অথচ, তিনি ই মেল পাঠাচ্ছেন। সময় চাইছেন। আমাদের সাইবার সেল নাকি এত উন্নত। ফোন বন্ধ থাকলে তার লোকেশন পাওয়া যায় না? কোন মেশিন থেকে মেল পাঠানো হল, তার আইপি অ্যাড্রেস ধরেও তো সন্ধান চালানো যায়। অপরাধীদের ক্ষেত্রে তো এসব টোটকা হামেশাই প্রয়োগ করা হয়। প্রেস কনফারেন্স করে ঘটা করে সেসব জানানোও হয়। তাহলে, রাজীব কুমার কোথায়, তা নিয়ে এত ধোঁয়াশা কেন?
এই শহরের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেটা কি পুলিশের পক্ষে খুব ভাল বিজ্ঞাপন? মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিজি— কেউ জানেন না সিআইডি–র প্রধান এখন কোথায় আছেন? সত্যিই ছুটিতে? কার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন? সেই চিঠি ব্যাক ডেটে সই করা নয় তো?
অর্থাৎ, শুধু রাজীব কুমার নন, আরও অনেকেই তাঁকে লুকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে যুক্ত। একটি বিশেষ ঠিকানায় তাঁর থাকার খবর ছড়িয়েছে। সত্যিও হতে পারে। মিথ্যেও হতে পারে। কিন্তু মিথ্যে হলেও তা অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে, কারণ রাজীব কুমার বা রাজ্য প্রশাসনের ওপর বিশ্বাস ক্রমশ কমছে। রাজীব কুমারকে ডাকা হলে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসে যাচ্ছেন। ফের তাঁকে ডাকা হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসতে চাইছেন। এত তৎপরতা কেন? তার মানে কি রাজীব কুমার ধরা পড়লে আরও অনেক কীর্তি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা? প্রশ্নগুলো ওঠা কাম্য নয়। কিন্তু এমন প্রশ্ন উঠবেই।
যেভাবে তিনি লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন, যেভাবে হাজিরা এড়াতে নানা ফন্দিফিকির করে চলেছেন, যেভাবে রাজ্য প্রশাসনকে নগ্নভাবে ব্যবহার করছেন, তাতে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা বলে কোনও কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না। বিচারের আগে কেন কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়? ১) তিনি প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। ২) তিনি পালিয়ে যেতে পারেন। ৩) তিনি তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে পারেন। ৪) তাঁকে জেরা করে আরও অনেকের হদিশ পাওয়া যেতে পারে। এই চারটি বিষয়ই তাঁর ক্ষেত্রে খাটে। তিনি কী কী প্রমাণ লোপাট করেছেন, তা প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু তিনি যে এই কাজটি করতেই পারেন, তাঁর গত কয়েকদিনের আচরণ তা আরও পরিষ্কার করে দিল। আদালতের বিচার প্রক্রিয়া অনন্তকাল ধরেই চলবে। কিন্তু তিনি যে সত্যিই অপরাধী, ক্রমশ এই ধারনা সকলের মনে আরও বদ্ধমূল হচ্ছে। আর এই ধারনা বদ্ধমূল হওয়ার পেছনে সবথেকে বেশি দায়ী রাজীব নিজেই।