সঞ্জয় মিত্র
টাইগার হিল নিয়ে রাজ্য প্রশাসন বোধ হয় একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। এই সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। অহেতুক জেদাজেদি করতে গিয়ে আবার পিছু হটতে হতে পারে প্রশাসনকে। সেটা নিশ্চয় খুব একটা সম্মানজনক হবে না।
ভোর হলে টাইগার হিলে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। বহুদিন ধরেই বাঙালির টাইগার হিলের প্রতি বাড়তি একটা দুর্বলতা রয়ে গেছে। সূর্যোদয় দেখা যাক বা না যাক, টাইগার হিল গিয়েছিলাম, এটা বলতে না পারলে বাঙালির ঘোরাটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
দার্জিলিংয়ের পর্যটনের অনেকটাই নির্ভর করে টাইগার হিলের ওপর। যাঁরা যান, তাঁদের অনেকেই একদিন টাইগার হিল ঢুঁ মারেন। গাড়ি চালকদের কাছে এটা একটা বাড়তি পাওনা। কিন্তু হঠাৎ করে ঘোরার মানচিত্র থেকে টাইগার হিল হারিয়ে গেলে পরিবহণ ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবহণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে, ভ্রমণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে আগাম আলোচনা করে নেওয়া খুব জরুরি ছিল। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, তা কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে তাদের মতামত নেওয়াটা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু দুম করে একতরফা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিল জেলা প্রশাসন। শুধু জেলা প্রশাসন বললে ভুল হবে, দার্জিলিংয়ের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় এতবড় একটা সিদ্ধান্ত কোনও আমলা নিলেন বলে বিশ্বাস হয় না। নিশ্চিতভাবেই এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্তরে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের বাস্তবতা না বুঝে সিদ্ধান্ত নিলে কী হতে পারে, এত কাণ্ডের পরেও যদি শিক্ষা না হয়ে থাকে, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
দার্জিলিং এমনই একটা স্পর্শকাতর জায়গা, যেখানে জোরাজুরি করতে গেলে তা ব্যুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। গত কয়েক বছরে নানা ঘটনায় তা প্রমাণিত। এমনকী, বিনয় তামাংদের ওপর পাহাড়ের মানুষের যে ন্যূনতম ভরসাটুকুও নেই, তা লোকসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রমাণিত। এরপরেও যদি গাজোয়ারি চলে, তাহলে বুঝতে হবে প্রশাসন কোনও শিক্ষাই নেয়নি।
জেলা প্রশাসন যে কুপন সিস্টেম চালু করেছে, তা সমস্যার সমাধান তো করবেই না, উল্টে সমস্যা আরও বাড়াবে। কুপন নিয়ে রীতিমতো কালোবাজারি শুরু হয়ে যাবে। টাইগার হিল আরও মহার্ঘ্য হয়ে উঠবে। দুর্গম ছাঙ্গু বা নাথুলায় গেলেও অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তার সঙ্গে টাইগার হিলকে গুলিয়ে ফেলবেন না। সেটা সারাদিনের ভ্রমণ। কিন্তু টাইগার হিলটা কয়েকঘণ্টার ভ্রমণ। এখানে আন্তর্জাতিক সীমানার ব্যাপার নেই। এখানে এত কড়াকড়ি হীতে বিপরীত হতে পারে।