অজয় কুমার
কেউ অসুস্থ হলে অনেকেই দেখতে যান। সেটাই সৌজন্য। কিন্তু কিছু কিছু অবাঞ্ছিত লোকও সেই তালিকায় ঢুকে পড়েন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় সেই অবাঞ্ছিত লোকেদের আসাটা বড্ড বেমানান লাগল।
যখন তিনি ভর্তি হলেন, দ্রুত হাজির হয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। একসময় রাজনৈতিকভাবে অনেক বিরোধীতা করেছেন। কিন্তু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে আসতেই পারেন। তাছাড়া, গত কয়েক বছরে নানা সময়েই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে প্রকাশ্যেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর বাড়িতেও গেছেন। তাঁর আসাটা মেনে নেওয়াই যায়।
কিন্তু শুভাপ্রসন্ন! বিরোধী নেত্রী হিসেবে সেদিন মমতা যত না আক্রমণ করেছেন, তার থেকে অনেক বেশি কুরুচিকর আক্রমণ করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। তাঁর তো নিজেকে এতখানি নামানোর কোনও দায় ছিল না। এমনকী সরকার পড়ে যাওয়ার পরেও অত্যন্ত কদর্য ভূমিকায় দেখা গেছে এই শিল্পীকে। আজ তিনি এসে হাসপাতালে আরোগ্য কামনা করছেন, ভাল ভাল কথা বলছেন, এটা হজম হল না।
বিজেপি নেতারাও আসরে হাজির। কোত্থেকে জুটে গেলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তিনি কতটুকু চেনেন বুদ্ধবাবুকে? বুদ্ধবাবুই বা তাঁকে কতটুকু চেনেন? ভাল লাগল লকেট চ্যাটার্জির উপস্থিতি। শুধু সিঙ্গুর থেকে ভোটে লিড পেয়েছেন বলে নয়, প্রচারপর্বেও বারবার বলেছেন, সিঙ্গুরে আবার কারখানা গড়ার উদ্যোগ নেবেন। অর্থাৎ, সেদিন বুদ্ধবাবুর পথ যে ভুল ছিল না, বারবার সেই কথা স্বীকার করেছেন। সেদিক থেকে তাঁর শ্রদ্ধা অনেকটাই আন্তরিক। শমীক ভট্টাচার্যের উপস্থিতিও প্রত্যাশিত। কারণ, বাংলার রাজনীতি থেকে শিক্ষা, সুস্থ রুচি যখন হারিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি এক মূর্তিমান ব্যতিক্রম। এমন মানুষই তো ভেতর থেকে অনুভব করতে পারেন বুদ্ধবাবুর শিক্ষা, রুচি, ভদ্রতা ও শিষ্টাচারকে।
মুকুল রায় এলেন, ভাল কথা। তাই বলে সঙ্গে নিয়ে এলেন শঙ্কুদেব পন্ডাকে! এইসব অর্বাচীনদের শ্রদ্ধা জানানোর যোগ্যতা আছে! মাত্র দু বছর আগে, কী জঘন্য একটা সিনেমা বানিয়েছিলেন। সেখানে অত্যন্ত কদর্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। শিল্পীর স্বাধীনতা নিশ্চয় আছে। তাই বলে শিল্পের নামে এতখানি মিথ্যাচার ও নোংরামির কোনও প্রয়োজন ছিল? এইসব অবাঞ্ছিত লোকেদের দেখলে বুদ্ধদেববাবু হয়ত আরও অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ভাগ্যিস তিনি দেখতে পাননি।
যাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন, তাঁরা মনে মনে প্রশ্ন করুন। তাঁরা আদৌ এমন মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর যোগ্য কিনা। শুভাপ্রসন্ন বা শঙ্কুদের পন্ডাদের মতো অবাঞ্ছিত লোকেদের দেখে একেবারেই ভাল লাগেনি।